মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ দু'পাশে সারি সারি দেবদারু ও বাহারি ফুল গাছের মাঝখান দিয়ে পাকা সরু রাস্তা ধরে সামনে এগুলেই চোখে পড়ে বনজ ও ফলজ উদ্বিদের বাগান। বাগের চারপাশে কয়েক তলা ভবন, তার পশ্চিমে পাঁকা ঘটনা সমেত বিশাল পুকুর ও মসজিদ। উত্তরে সারি সারি আবাসিক ভবন। প্রথম দেখায় মনে হবে কোন বিনোদন কেন্দ্র বা রিসোর্টে আপনি। ভুল ভাঙ্গবে প্রধান ফটকের বাম দিকে জরুরি বিভাগের সাইনবোর্ড ও রোগীর ভীড় দেখে।
সরজমিনে হাওর বেষ্টিত মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে এ চিত্র চোখে পড়ে। বিভিন্ন বিভাগে গত চার বছরে মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা চিকিৎসক আব্দুল্লাহ্ আল শাফি'র সৃজনশীল ছোঁয়ায় বদলে গেছে মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র। বেড়েছে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা, নিশ্চিত হয়েছে নান্দনিক পরিবেশ। তরুণ তুর্কি স্বাস্থ্য প্রশাসক শাফি'র হাত ধরে ৩৮ বছর পর হাওরাঞ্চলে চালু হয়েছে বিনামূল্যে প্রসূতির অস্ত্রোপচার (সিজার)।
এনেস্তেসিয়া ও শৈল্য চিকিৎসক নিয়মিত না থাকলেও, গত ১ বছরে ৫০জন প্রসূতির সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে বিনামূল্যে। স্বাভাবিক প্রসব করানো হয় আরো কয়েকগুন বেশি। এছাড়াও বিভিন্ন অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি নতুন ভবনের নীচ তলায় কিশোর- কিশোরী মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও দ্বিতীয় তলায় ডে-কেয়ার সেন্টার গিয়ে দেখা যায়, শিশুবান্ধব বাহারি রঙ্গে সাজানো-ঘুচানো দুটি কক্ষ।
শোপিস, খেলনা, পতুল, দাবা ও দেয়ালে নানা রঙের কাগজের ফুলে সজ্জিত মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি এ হাসপাতালে যোগদানের পর রোগীদের সুবিধার্তে ডিজিটাল এক্স মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ডে-কেয়ার সেন্টার, জিন এক্সপার্ট ল্যাবেটারীসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা যন্ত্রপাতি ও কিট বৃদ্ধি করা হয়েছে। ছয় মাস আগে চালু করা হয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম ও বিশেজ্ঞর চিকিৎসকদের সমন্বয়ে 'টেলি-মেডিসিন সেবা'। চিকিৎসকদের প্রাণখোলা সেবা ও স্বল্পমুল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় প্রতিদিন ভীড় করছে শত শত রোগী। কিশোর-কিশোরী মানসিক সেবা কেন্দ্র, কমিউনিটি ভিশন সেন্টা ও প্রসূতি অস্ত্রোপচার মানুষের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে। প্রতিদিন নামমাত্র মুল্যে বিশ ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ৩০ রকমের ঔষধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। প্রতি মাসে ৪-৫টি সিজার, বহি-বিভাগে ৬হাজার ৫০০জন, আবাসিক ৫০০জন ও ১হাজার মানুষ চিকিৎসা নেন জরুরি বিভাগে।
বহি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ঘাগড়া ইউনিয়নের মাজেদা বেগম বলেন, ডাক্তারি ফিস ছাড়া কম ট্যাহায় ইহানে চিকিৎসা করা যায়। এ্যারা (ডাক্তার) যত্ন করে ঔষধ দেয়। আমরা গরীব মানুষ এতেই অনেক খুশি। সদর ইউনিয়ন বরুণপুর গ্রামের প্রসূতি ঝর্ণা আক্তার বলেন, গতবছর কিশোরগঞ্জে এক হাসপাতালে আমার ভাবীর সিজারে ৩০হাজার টাকা লাগছিল। আমি মিঠামইনে সিজার করেছি, কোন টাকা লাগেনি, নিয়মিত ঔষধ দেয়, ডাক্তার নার্সরা সেবা করেন।
২৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক আব্দুল্লাহ্ আল শাফির সাথে কথা হয়, তিনি বলেন, হাসপাতলে স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমি চাই সহজে কোন মানুষ অন্য কোথাও যেতে না-হয়, এখানেই সকল সেবা নিতে পারে। আমি ও আমার দক্ষ কর্মীরা মিলে চেষ্টা করছি প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবার মান আরো উন্নত করে, মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যেন মডেল উপজেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: