• ঢাকা
  • সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৭ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ভূরাজনীতির নতুন উদীয়মান বন্ধুত্ব ও শত্রুতা


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২:১৭ পিএম
ভূরাজনীতির নতুন উদীয়মান বন্ধুত্ব ও শত্রুতা
অধ্যাপক এম এম আকাশ

অধ্যাপক এম এম আকাশ : 

জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৫৭ সদস্যের দলসহ যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। তিনি এই ভ্রমণ শুরু করেন নিউইয়র্ক থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর; জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় বক্তৃতা প্রদান করেন। মাঝখানের চার দিন স্বাভাবিকভাবেই তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা আদায়ের চেষ্টা করেছেন। 

ভূরাজনৈতিক বিচারে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশ– ভারত, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দিক থেকে দৃষ্টি ছিল এসব দেশের নেতার সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের কোনো বৈঠক হয় কিনা এবং হলে সেগুলোর ফলাফল কী? 

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কোনো সাক্ষাৎ বা বৈঠক হয়নি। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি অবশ্য একটা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, মূলত সময় ও সূচি না মেলায় বৈঠক হয়নি। এটা একটা আপাত ঘটনা, নাকি ইচ্ছাকৃত এড়িয়ে যাওয়া– এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা বিদ্যমান। এটা সত্য, শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় গ্রহণের পর থেকে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কিছুটা অম্লমধুর।

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার এক দিন পরই ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে এক সাক্ষাতে মিলিত হন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন, নেপাল ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল; বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাপ্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধান– তাঁর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় সবার সঙ্গে। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও পরে তাদের অন্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবারের বৈঠক সম্পর্কে ফলাও করে খবর ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে। বোঝা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ। আমরা জেনেছি, যুক্তরাষ্ট্র ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন ও স্বীকৃতি প্রদান করেছে। সরকারের প্রশংসা করে সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 

আমরা এ-ও জানি, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের খুব একটা সুসম্পর্ক ছিল না। বিশেষত হাসিনা সরকার ইঙ্গো-মার্কিন অক্ষশক্তির বদলে ভারত-চীন-রাশিয়ার প্রতি অতিরিক্ত ঝুঁকে পড়েছিলেন বলে কথিত আছে। এমনকি চীনের প্রতি বেশি ঝোঁক নিয়েও অনেক সমালোচনা পশ্চিমা কূটনৈতিক মহল থেকে প্রায়ই করা হতো। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না, এও আমরা জানি। 

কাতার ও সুইজারল্যান্ড থেকে ভ্রমণ শেষে বছরখানেক আগে ২১ জুন ২০২৩ তারিখে গণভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, সেন্টমার্টিন ইজারা দিলে তিনি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। 

শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা দেশ কাউকে ‘লিজ’ দিলে ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নেই। ওই সময় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল– যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপ চায়’ এবং সে জন্যই তারা আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ তৈরি করছে। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা ২০০১ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে দাবি করেন, এই দেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে তিনি ক্ষমতায় আসতে চান না। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে তিনিও ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। (বিবিসি বাংলা)। 

ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র বা বিশেষ কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। যদিও কোনো এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি (?) এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। 
পরে ড. আলী রীয়াজ প্রাসঙ্গিক এক কলামেও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ দুরভিসন্ধিমূলকও হতে পারে। অর্থাৎ মার্কিন হুমকির কথা বলে তা থেকে প্রতিকারের জন্য অন্য কোনো শক্তিকে ডেকে সেখানে স্থান করে দেওয়ার কোনো ষড়যন্ত্রও হতে পারে। 

এ ছাড়া সম্প্রতি বিএনপি কার্যালয়ে বাংলাদেশের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে মির্জা ফখরুল ইসলাম ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে সম্পর্কোন্নয়নের ইঙ্গিত দেন। ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই এক প্রতিবেদনে জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ‘বরফ গলতে শুরু করেছে’ বলে বিশ্বাস করে বিএনপি। (সমকাল, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। এখন দেখার বিষয়, বরফ বাস্তবেই কতটা গলে।

এত কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশ এক নতুন কালপর্বে প্রবেশ করছে। আমাদের সঙ্গে মার্কিনিদের পুরাতন শত্রুতার (১৯৭১-৭৫ কালপর্ব দ্র.) ইতিহাস রয়েছে। ওদিকে ভারতের সঙ্গেও আমাদের পুরাতন বন্ধুত্বের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস।  দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে।  এই ‘নতুন উদীয়মান বন্ধুত্ব বা শত্রুতা’ আমাদের কোন দিকে নিয়ে যায়, আগামীতে দেখার বিষয়। বিশেষভাবে এ ব্যাপারে সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদবিরোধী সব শক্তিকে সতর্ক থাকতেই হবে। 

লেখক : অধ্যাপক এম এম আকাশ: অর্থনীতিবিদ

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image