সুমন দত্ত: যেখানে সেখানে থুথু ফেলবেন না। মলত্যাগ করবেন না। এই শিক্ষা প্রচারেই। বাস্তবে এসব দেখা যাচ্ছে না। তা না হলে শহরের প্রাণ কেন্দ্রে প্রকাশ্যে মূত্র ত্যাগ তাও পুলিশের সামনেই। পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা ভিক্টোরিয়া পার্ক( বাহাদুর শাহ পার্কের) দেয়ালে গণহারে মূত্র ত্যাগ করে লোকজন। কেউ বাধা দেয় না। এতে আশপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষণের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে বায়ু দূষণের মতো ঘটনা ঘটছে।
পার্কের ভিতর ও বাইরে ২৪ ঘণ্টা সূত্রাপুর থানা পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। তবে এ ঘটনায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন তারা। প্রস্রাবের গন্ধে ভিক্টোরিয়া পার্কের উত্তর দিকে পেট্রোল পাম্পের সামনে দাড়িয়ে থাকা যেকোনো মানুষের জন্য অস্বস্তিকর।
বছরে কয়েক আগে ভিক্টোরিয়া পার্ক সংস্কার করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নিকট হওয়ার কারণে এই পার্কে আড্ডা দেয় সেখানকার শিক্ষার্থীরা। এছাড়া পুরান ঢাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য এই একটি মাত্র পার্ক। যেখানে লোকজন সকাল সন্ধ্যা হাঁটাহাঁটি করে। এই পার্কটি আগে লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা ছিল। পার্কে ঢোকার প্রবেশ পথ ছিল পূর্ব পশ্চিমে দুটি। আগে পার্কে কোনো টয়লেটে ছিল না। পরে মেয়র সাইদ খোকন টয়লেট করে দিলে নারী পুরুষ সবাই টয়লেট ব্যবহার করে। তবে পাঁচ টাকা ফি দিয়ে টয়লেট সেবা নিতে হয়। পরবর্তীতে পার্ক সংস্কারের পর লোকজন (বিশেষ করে পুরুষরা) আর ৫ টাকা দিয়ে সেখানে প্রস্রাব করে না। উপরে প্রকাশিত পার্কের ছবির অংশটি বেছে নেয় তারা প্রস্রাবের জন্য।
যেদিন থেকে এই পার্কের চারদিকের ব্যারিকেড উঠে গেছে, সেদিন থেকে লোকজন ওই স্থানে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা প্রস্রাব করে। এতে আশপাশের পরিবেশ প্রস্রাবের গন্ধে ভারি হয়ে উঠছে। কেউ সেখানে দাঁড়াতে পারে না। এরই মধ্যে ভিক্টর ক্লাসিক, আজমেরি, সাভার, বিহঙ্গ বিভিন্ন রুটের পরিবহন গুলো পার্কের খোলা জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখে। এতে গাড়ির একটি বেষ্টনী তৈরি হলে লোকজন গণহারের পার্কের ওই অংশে মূত্র ত্যাগ করে। অথচ পার্কের ভিতরেই আধুনিক টয়লেট।
শহরের ব্যস্ততম সড়কে মূত্র ত্যাগের এসব ঘটনা সব বয়সের লোকদের কাছে একটি নিন্দনীয় কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
লক্ষ্মীবাজারের বাসিন্দা বাবু বললেন, প্রতিদিন ভিক্টোরিয়া পার্কের এই মোড় দিয়ে বাসে উঠতে হয়। মুতের গন্ধে বমি আসে। শাঁখারি বাজারের এক গৃহিণী রীতা দে বলেন, যারা এখানে মল ত্যাগ করছে তাদের কোনো লাজ শরম বলতে কিছু নেই। মহিলাদের সামনেই তারা এখানে প্রস্রাব করতে বসে যান। সন্ধ্যায় হাটতে আসা নীলুফার বেগম নামে এক নারী বলেন, আমরা যারা হাটি তারা সবাই পার্কের টয়লেট ব্যবহার করি। অথচ বাইরে লোকজন প্রকাশ্যে মূত্র ত্যাগ করছে। পুলিশের নাকের ডগায় এসব ঘটছে। বাবুল নামে এক দোকানদার বলেন, এই স্থানে ডিউটি করে সকাল বিকাল পুলিশ বিদ্যুত চালিত গাড়ি ধরে জরিমানা করে, মোটর সাইকেল কে সার্জেন্টরা জরিমানা করে, অথচ প্রস্রাবের কারণে কাউকে ধরে না। কিংবা জরিমানা করে না। তারা যদি কঠোর হতো কেউ এখানে প্রস্রাব করতে সাহস পেত না।
এদিকে ভিক্টোরিয়া পার্কের ভিতর রেস্টুরেন্ট তৈরির অনুমতি দিয়ে পার্কের পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে বর্তমান মেয়র তাপস। এ নিয়ে সেখানে আন্দোলন চলছে। রেস্টুরেন্ট উঠিয়ে দেবার দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন ও সেখানকার স্থানীয় লোকজন। পার্কের দেয়ালে মূত্র ত্যাগের ঘটনাটি তাদের চোখ এড়িয়ে গেল কীভাবে সেটি এক রহস্য। ঐতিহাসিক এই পার্কটি ব্রিটিশদের হাতে নিহত বিপ্লবীদের স্মরণে তৈরি। ভিক্টোরিয়া পার্কের এই স্থানে ব্রিটিশ বিরোধীদের ধরে এনে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হতো। পার্কের পবিত্রতা রক্ষা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এমন কথাই জানান সেখানকার এক প্রবীণ ব্যক্তি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / এসডি
আপনার মতামত লিখুন: