• ঢাকা
  • শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ঠাকুরগাঁওয়ে থমকে গেছে খাদ্যবিভাগের গম সংগ্রহ অভিযান


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:২৪ পিএম
খাদ্যবিভাগের গম সংগ্রহ অভিযান
খাদ্যবিভাগের গম সংগ্রহ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: দেশের উত্তরের কৃষিপ্রধান জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় দেশের মোট উৎপাদিত গমের সিংহ ভাগই উৎপাদন হয় এখানে। তবে গমের ফলন ভালো হলেও সরকারীভাবে কৃষকদের কাছে গম সংগ্রহ করতে পারছেনা খাদ্য বিভাগ।

এবারে সরকারি ভাবে প্রতি কেজি গমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ টাকা। আর ঠাকুরগাঁওয়ে হাটবাজারে প্রতিকেজি গম বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা দরে। তাই কৃষকরা গম বিক্রি করছেন খোলাবাজারে। তাই চলতি মৌসুমে জেলায় গম সংগ্রহ করতে পারছে না খাদ্য বিভাগ।

শুধুমাত্র উদ্বোধনীর দিনে জেলায় চার উপজেলায় এক টন করে গম সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। এরপর থেকে থমকে গেছে জেলায় খাদ্যবিভাগের গম সংগ্রহ অভিযান ।

কৃষকরা বলছে, খোলাবাজারে গমের দাম ৩২ টাকা ৫০ পয়সা। আর সরকারিভাবে প্রতি কেজি গমের দাম ২৮ টাকা। তাই খাদ্য বিভাগের কাছে গম বিক্রি করতে গেলে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এজন্য কৃষকরা খাদ্যবিভাগে গম বিক্রি না করে খোলাবাজারেই বিক্রি করছেন।

সরেজমিনে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চৌধুরীহাট, খোঁচাবাড়ি, ভুল্লী, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী, রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ও হরিপুরের যাদুরানী হাটে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে ৮০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা গম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজি গমের দাম হচ্ছে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁও জেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ও চাষ হয়েছে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭১ মেট্রিক টন।

ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম বলেন, চলতি মওসুমে অভ্যন্তরীণ গম সংগ্রহের আওতায় সারাদেশে ২৮ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ মেট্রিক টন গম কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও জেলায় গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ২৮২ মেট্রিক টন। ইতিমধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলায় লটারির মাধ্যমে ২৪ হাজার ২৮২ কৃষককে সরকারি গুদামে গম বিক্রির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।

গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান শুরু চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। এ পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলায় গম সংগ্রহ হয়েছে ৫  মেট্রিক টনেরো কম ।

সদরের উপজেলার চৌধুরীহাট এলাকার কৃষক আফজালুর রহমান বলেন, গত বছর বাজারে গমের দাম কম ছিল তাই সরকারি গুদামে গম বিক্রি করেছি। কিছু টাকা লাভও হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর সরকার ২৮ টাকা কেজি দরে গম কিনছে, সে হিসেবে প্রতি টনে তিন হাজার টাকার ওপরে লোকসান হবে। আমরা যেহেতু বাজারেই গমের দাম বেশি পাচ্ছি তাহলে কেন সরকারের কাছে গম বিক্রি করতে যাবো?

জেলার বড় খোচাবাড়ি এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারি ভাবে গমের দর এমন দেয়া হয়েছে এতে আমাদের লোকসান হবে। তাই আমার রোপনকৃত পাঁচ বিঘা জমির গম বাজারেই বিক্রি করে দিয়েছে। আমার মত অন্য কৃষকরাও তাদের গম খোলাবাজেরই বিক্রি করেছে। এখন সরকার গমের দাম বাড়ালেও কৃষকদের কাছ থেকে হয়তো কম কিনতে পারবে না। কারণ আমাদের কাছে তো গম মজুত করার কোন ব্যবস্থা নেই।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি গুদামে গম বিক্রির জন্য গত ১৮ এপ্রিল বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় লটারির মাধ্যমে ১ হাজার ৯৭৫ জন কৃষককে নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু আগ্রহী কৃষক না পাওয়ায় সেখানে চলতি বছরের গম সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করা যায়নি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার খাদ্যগুদামে গম বিক্রির জন্য লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষক খসিয়ার রহমান। তিনি বলেন, এ বছর ছয় বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। এতে প্রতি বিঘায় ৩০ মন করে ১৮০ মন গম পেয়েছি। কিন্তু সরকারি দরের চেয়ে বাজারে দাম বেশি, তাই সরকারি গুদামে গম বিক্রি করার কোন আগ্রহ নেই।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিখিল রায় বলেন, সরকারি ভাবে ২৮ টাকা কেজিতে গম কিনতে বলা হয়েছে।  আর স্থানীয় বাজারে এখন সরকারি দামের চেয়েও বেশিতে গম কেনাবেচা হচ্ছে। এই কারণে নির্বাচিত কৃষকরা খাদ্যগুদামে গম বিক্রি করছে না।

গত ১৩ এপ্রিল হরিপুর উপজেলার চৌরঙ্গী এলাকার কৃষক মোজাফ্ফর হোসেনের কাছ থেকে এক মেট্রিক টন গম নিয়ে উপজেলায় গম সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এরপর ঐ উপজেলায় আর কোন কৃষক সরকারি গুদামে গম বিক্রি করতে আসেনি।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম বলেন, সরকারি ভাবে প্রতি কেজি গমের দাম নির্ধারণ করা হয় ২৮ টাকা। আর বর্তমানে জেলার খোলা হাট-বাজারে এখন প্রতি কেজি গম ৩২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা যেখানে তাদের ফসলের দাম বেশি পাবেন সেখানেই তো তারা বিক্রি করবেন এটা স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে চলতি মৌসুমে জেলায় সরকারি ভাবে গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

ঢাকানিউজ২৪.কম / গৌতম চন্দ্র বর্মন/কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image