• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

কুমিল্লায় রসালো ফল তাল গাছ সংরক্ষণে উদ্যোগ নেই


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: সোমবার, ১৩ ফেরুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২:১০ পিএম
সংরক্ষণে উদ্যোগ নেই
তাল গাছ

মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম, কুমিল্লা : কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় এককালের গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী রসের খনি খ্যাত তাল গাছ বর্তমানে কালের আবর্ত্তে  হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এ তাল গাছ খাল-বিল, পুকুর, নদীর পাড়সহ বাড়ীর আঙ্গিনায় দেখা যেতো। তালগাছ প্রকৃতির বন্ধু হিসাবে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা জানে না।

তবে বর্তমান সরকার স¤প্রতি কৃষি ও বন বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে তালগাছ রোপন ও সংরক্ষনে ব্যাপক উদ্যোগ নিলেও তা যেনো লাল ফিতায় বন্দি।  বিশেষ করে রসালো ফল তালগাছ সংরক্ষনে সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। 

কবিরা লিখেছেন, তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উকি মারে আকাশে.., ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ওই আমাদের গাঁ, ওখানেতে বাস করে কানা বগার ছাঁ। এ অঞ্চলে সাধারনত পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাতি দু’ধরনের তাল গাছ পাওয়া যেতো। স্ত্রী প্রজাতির তাল গাছে নানা ধরনের ছোট-বড় বিভিন্ন রংয়ের তাল ধরতো। আর পুরুষ প্রজাতির তাল গাছে তালের পরিবর্তে ছোট ছোট দানাওয়ালা লম্বা-গোলাকার এক প্রকার ছড়া বের হতো। যাকে গ্রাম্য ভাষায় তাল গাছের জট বলা হতো। গ্রীস্মের শেষে এবং চলমান শীতকালে ওই তাল গাছের জট বিশেষ পদ্ধতিতে গাঁছিরা কেটে রস সংগ্রহ করতে দেখা যেতো। প্রাকৃতিক দূর্যোগ, বন্যা, জলাবদ্ধতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও নানাহ সংকটের কারনে মানুষ এখন আর তাল গাছের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলাগুলোর গ্রামগঞ্জে রসালো ফল এ তালের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরী করে হরেক রকম নামে বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিক্রি হতো। তবে তালপাটালি গুড় ছিল এ অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যান্ত জনপ্রিয় মিষ্টি জাতীয় খাবার। এ রসে আবার কেউ কেউ তাল মিছরি বানাতো যা বিভিন্ন রোগের ঔষুধের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার হতো। জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসজুড়ে কাঁচা তালের ভিতরের রসালো শ্বাশ খেতে খুবই সু-স্বাদু। তবে ভাদ্র মাস জুড়ে শিশু-কিশোরসহ সকল বয়সী মানুষের কাছে মৌসুমী ফল পাঁকা তাল মজাদার খাবার হিসাবে পরিচিত। এ পাঁকা তাল থেকে তৈরী করা হয় অত্যান্ত রুচিকর নানা ধরনের পিঠা,পায়েস ও বড়া। তবে শীতকালে এ রসালো ফলটি পাওয়া যায় না। যা ২/৪টি পাওয়া যায় তাতেও দাম অনেক চড়া। 

সূত্রটি আরও জানায়, আবার এ তাল গাছ রন্ধনশালার জ্বালানী ও বসতঘরসহ দোকান-পাট তৈরীতে কাঠ হিসাবে বিভিন্ন সরঞ্জামে ব্যবহৃত হতো। গ্রাম-গঞ্জে কৃষকের লাঙ্গলের ঈশ, নৌকার বৈঠা, পানির তোলার দোন এবং জেলেদের মাছ ধরার ডোঙ্গা ও নৌকাসহ অন্যান্য কাজেও প্রতিনিয়ত এ তাল গাছ ব্যবহার  হয়ে আসছে। তালপাতা দিয়ে তৈরী হতো হাতপাখা ও শীতল পাটি অথচ প্রয়োজনীয় এ সম্পদ সংরক্ষনের অভাবে কালের আবর্ত্তে আজ ওই তালগাছ অস্তিত্ব সংকটে পড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে ওইসব পন্য। এখন আর আগের মত তাল গাছ দেখা যায় না। এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যেও তালগাছ রোপন ও সংরক্ষনে তেমন সচেতনতা নেই। তবে বর্তমান সরকার এ রসালো ফল তাল গাছ রোপন ও সংরক্ষনে স্থাণীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরকে জনকল্যান মূলক প্রকল্পের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার নির্দেশ দিলেও ওইসব কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এলাকার নানাহ মহলে। 

এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা বনবিভাগ, ত্রান, দূর্যোগ দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।   

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image