• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

বোরো ধানের কাঙ্খিত দামে, খুশি ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:১২ পিএম
কাঙ্খিত দামে, খুশি ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা
বোরো ধান

গৌতম চন্দ্র বর্মন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ে চলতি বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকদের কারিগরি পরামর্শ, সুষম সারের ব্যবহার, বিদ্যুতের লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় থাকায়, সার, বীজ, কীটনাশক কৃষকদের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে থাকায় এ বছর ইরি-বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের দাম ভালো থাকায় এবং বাম্পার ফলন হওয়ায় ঠাকুরগাঁও জেলার ৫ উপজেলার কৃষকদের মুখে ফুটে হাসির জোয়ার।

কৃষকরা বলছেন, তেমন বড় কোনো ঝড় বৃষ্টি ও দুর্যোগ না হওয়ায় গতবছরের তুলনায় এবার একর প্রতি ৫-১০ মণ করে ফলন বেশি হয়েছে। কারো কারো বিঘায় ৬০-৬৫ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। আর বর্তমানে ৮০ কেজির এক বস্তা কাঁচা ধান ১৮শ থেকে প্রায় ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে তাদের খরচ হয়েছে ২০-২২ হাজার টাকা আর বিক্রয় করছেন ৪৫ থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তাই এবার তারা ফলন ও দামে সন্তুষ্ট।

মাঠেই ধান মাড়াই করে আবার মাঠেই ধান বিক্রয় করছিলেন সদর উপজেলার রহিমানপুর দাসপাড়া গ্রামের ধান চাষি আশানন্দ রায়। তিনি বলেন, এবার আমাদের ৫০ শতকের এক বিঘা জমিতে ধান হয়েছে ৫০ মণ করে। আর প্রতি মণ ধান বিক্রয় করলাম ৯২৫ টাকা করে। তাতে এক বিঘা জমির ধানের মূল্য পেয়েছি ৪৬ হাজার টাকার ওপরে। ধান চাষ করতে এক বিঘা জমিতে সর্বমোট খরচ হয়েছে প্রায় ২০-২২ হাজার টাকা। এতে লাভ থাকতেছে প্রায় ২৪-২৫ হাজার টাকা।

চাষি প্রতুল বর্মন বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের দাম ও ফলন দু’টোই ভালো পেয়েছি। গত বারে ধান বিক্রয় করেছিলাম ১৬শ টাকা বস্তা। এবার প্রথম দিকে ২১শ-২২শ টাকা ধানের বস্তার দাম ছিল, এখন একটু কমে গেছে। ২৯ জাতের ধান আমার একবিঘা জমিতে ৪৮ মণ করে ফলন হয়েছে। তাই ফলনে ও দামে আমরা খুশি।

খায়রুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, আমি সরিষা কেটে সবার পরে ধান লাগিয়েছিলাম। আবার সবার আগে ধান কেটে বিক্রয় করেছি। আল্লাহর রহমতে এবার ধানের ফলন ও দাম ভালো পেয়েছি। আগামীতে আবার দেড় একর জমিতে সরিষা করে বোরো ধান চাষ করব।

চাষি মকবুল হোসেন বলেন, এখন ধান রোপণসহ কাটা মাড়াই করছি আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন দিয়ে। এতে করে এক সঙ্গে ধান কাটা মাড়াই ও বস্তা হয়ে যাচ্ছে। তাতে এখন আগের থেকে আমাদের কাজ করতে পরিশ্রম ও কষ্ট কমে গেছে।

হবিগঞ্জ থাকা ঠাকুরগাঁওয়ে আসা হারভেস্টার চালক হৃদয় ইসলাম বলেন, এখনো মাঠে সব কৃষকের ধান পাকেনি। তাই দিনে ১০-১৫ বিঘা জমির ধান হারভেস্টার দিয়ে মাড়াই করছি। সব ধান পেকে গেলে দিনে ২৫-৩০ বিঘা জমির ধান মাড়াই করতে পারবো। বর্তমানে দূরত্ব ও স্থান ভেদে এক বিঘা জমির ধান মাড়াইয়ে ৪-৫ হাজার টাকা নিচ্ছি।

জেলা কৃষি অফিসের সূত্রমতে, জেলায় এবার বোরো মৌসুমে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে ৬১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এতে পার হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৬ টন করে ফলন হয়েছে। গতবছরের চেয়ে এবার প্রায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।

ব্যবসায়ী আক্তারুল ইসলাম বলেন, গতবারের তুলনায় এবার ধানের বস্তা প্রতি ২শ-৪শ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কাঁচা ধানের বস্তা ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে ক্রয় করছি। তবে এর থেকে দাম আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি প্রণোদনার আওতায় জেলার কৃষকদের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এবার বোরো মৌসুমে হাইব্রিড ধানে ১৫ হাজার কৃষককে ও উপশী জাতের ধানে ১০ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ধান চাষে সকল কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টার বিতরণ করা হয়েছে।এর ফলে কৃষকরা দ্রুত সময়ে ফসল রোপণ ও কর্তন করতে পারচ্ছেন এবং খরচের দিক থেকেও তারা লাভবান হচ্ছে।যত বেশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বৃদ্ধি হবে ততো বেশি কৃষক লাভবান হবেন। তাই কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অব্যাহত রেখেছে সরকার।

তিনি আরো বলেন, এবার পার হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৬ টন করে বোরো ধানের ফলন হয়েছে। তাই আশা করছি ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image