
সাকিব আহমেদ, (মানিকগঞ্জ): যুগ যুগ ধরে সনাতন পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষে কৃষকরা তেমন লাভবান হতে পারেননি। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত বীজ ও নতুন চাষ পদ্ধতি কৃষি কাজের সবকিছু বদলে দিয়েছে। অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের পরামর্শে সরকারি প্রণদনায় পেঁয়াজের বীজ, সার ও প্রয়োজনীয় জৈব সার ব্যবহারে কৃষকরা সুফল পাচ্ছেন।
জানা গেছে, এ বছর মানিকগঞ্জে হরিরামপুর উপজেলায় রবি মৌসুমে পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। উপজেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। কয়েক বছর পেঁয়াজের সংকট এবং দাম বেশি হওয়ায় এসব অঞ্চলের কৃষক অন্যান্য ফসলের চেয়ে পেঁয়াজ চাষে বেশি আগ্রহী। উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজের ভালো মানের ফলনের আশা করছেন। কিং জাতের পেঁয়াজ পরিচর্যার মাধ্যমে প্রতি শতাংশে দুই মন পেঁয়াজ পাওয়া সম্ভব বলে জানান কৃষকেরা।
তারা আরো বলেন পেঁয়াজ চাষে বাম্পার ফলনে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে অত্র এলাকার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহে সক্ষম হবে । অন্যান্য বছরের তুলনায় এই এলাকার কৃষকরা সরকারি প্রণোদনার পেঁয়াজের বীজ ও সার পাওয়ায় পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।
উপজেলার বাল্লা, গোপীনাথপুর, রামকৃষ্ণপুর,গালা,চালা ও কাঞ্চনপুর ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন।
ঠাকুরপাড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষী মজিবুর জানান, 'আমি ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করছি এর মধ্যে ১ বিঘা কৃষি প্রদশর্ণী করায় সরকার থেকে আমারে সার এবং বীজ দিছে, পেঁয়াজের যে চেহারা দেখতাছি তাতে মনে হয় ভালো ফলন হবে। পেয়াজের বর্তমান বাজার মূল্য থাকলে লাভবান হতে পারব । অন্যান্য ফসল থাকলেও পেঁয়াজের চাষ কেন করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন পেঁয়াজের দাম বেশী পাওয়া যায় তাছাড়া পেঁয়াজ ঘরে রাখা যায় যে কোন বিপদে আপদে বিক্রি করতে পারি।
সরবদী গ্রামের ইউনুস গায়ান জানান, 'আমি এবার ৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করছি। এর মধ্যে ১ বিঘা সরকারি প্রদশর্ণী। গাছ দেইখ্যা মনে অইতাছে ফলন ভালো অইবো। তবে দাম কইমা গেলে আমাদের লোকসান হবে'।
ঝিটকা মধ্যপাড়া গ্রামের দুলাল প্রামানিক বলেন, আমি ৫ বিঘা পেঁয়াজের চাষ করেছি। মাঝে মধ্যে তারা আইসা দেখাইয়া দেয় কোন সময় কি সার দেয়া লাগব। ভালো ফলন হইব বইলা আশা করতেছি।
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল গফ্ফার জানান, পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি অর্থকরী মসলা ফসল। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই পেঁয়াজের চাষ হয়। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তন, বৈরী আবহাওয়া এবং বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজের জাতীয় গড় ফলন (৯.৭৩ টন/হেক্টর)। বর্তমানে উপজেলায় অন্যান্য বছরের তুলনায় পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবছর ২৮০ হেক্টর জমিতে আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে ২৩৮৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়।
গত কয়েক বছর বাজারে পেঁয়াজের তীব্র সংকট এবং মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় সরকার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষককে বিনামূল্যে পেঁয়াজের বীজ ও সার সহায়তা করায় আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ফলনও ভাল হয়েছে। আশা করি দেশে মসলা জাতীয় ফসলের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখাবে বলে জানান ।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: