
সোহানুর রহমান (সোহান), ভৈরব কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কমলপুর পশ্চিম পাড়া এলাকার নাছির উদ্দিন। নিজ ঘরে তৈরি বিভিন্ন প্রকার আচার আর নিমপাতার তৈরি দাঁতের মাজন বিক্রি করতেন ফেরি করে। স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক শিশুপুত্রকে নিয়ে ভালোই কেটে যাচ্ছিলো দিন। কিন্তু গত বছরের মাঝামাঝিতে হঠাৎ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি।
আত্মীয়-স্বজনসহ পাড়াপড়শিদের আর্থিক সহায়তায় ব্যয়বহুল চিকিৎসায় তিনি বেঁচে গেলেও, পুরোপুরি সুস্থ্য হতে পারেনি। তাঁর দেহের একটি অংশ প্যারালাইজড হয়ে যায় তার। ফলে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারটি চরম আর্থিক সংকটে পড়ে যায়।
একান সেকান করে খবরটি পৌঁছে যায় ভৈরবের নারী উদ্যোক্তাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “সিস্টারহুডের” সভানেত্রী হালিমা তূজ স্নিগ্ধার কাছে। খবর পেয়েই তিনি ছুটে যান নাছিরের বাড়িতে। গত অক্টোবর থেকে অদ্যাবধি তিনি তাঁর সংগঠনের পক্ষ থেকে আর্থিকসহ খাদ্যদ্রব্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।
একটা সময় স্নিগ্ধার ভাবনায় আসে, এইভাবে সহায়তায় তো নাছিরের অভাব দূর হবে না। সেই ভাবনা থেকে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন নাছিরের পরিবারকে নিয়ে। সেই স্ট্যাটাস দেখে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ তাঁর ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা করেন। এমনি করে ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১শ থেকে ১ হাজার টাকার সাহায্যে এক লাখ ৪০ হাজার টাকার একটি তহবিল তৈরি হয়ে যায় অল্প দিনের মধ্যে।
সেই টাকা দিয়ে নাছিরের বাড়ির আঙিনায় এক লাখ টাকায় তৈরি করেন একটি আধা পাকা দোকানঘর। আর ৪০ হাজার টাকায় সেই দোকানের জন্য কেনা হয় নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। পঙ্গু নাছির ক্র্যাচে ভর দিয়ে সেই দোকানে এসে সওদা বিক্রি করবেন। এতে করে তার সংসার চলবে নিজের করা আয়ে। এমন কি সেই ব্যবসায় তার ভাগ্যও বদল হয়ে যাতে পারে-ভাবনা সিস্টারহুডের।
সিস্টারহুড সেই দোকানটির নাম দিয়েছে “স্বপ্ন কুটির”। আজ বুধবার দুপুরে নাছিরের জীবন যাপনের অবলম্বন “স্বপ্ন কুটির”র উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ। তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে উদ্বোধনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে দোকানের চাবি বুঝিয়ে দেন নাছির উদ্দিনকে।
এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) জুলহাস হোসেন সৌরভ, ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: গোলাম মোস্তফা, স্থানীয় সাবেক পৌর কাউন্সিলর মো. লুকমান সরকার, ব্যবসায়ী হারুন উর রশিদ, আব্দুস ছাত্তার, সিরাজুল ইসলাম ছিদ্দিক, রক্ত সৈনিক শামসুল হক বাদল, সিস্টারহুডের সভানেত্রী হালিমা তূজ স্নিগ্ধাসহ তার সংগঠনের সদস্যরা।
স্নিগ্ধার জানান, দোকান ঘর নির্মাণসহ আসবাবপত্র কেনায় খরচ হয়ে গেছে এক লাখ টাকা। আর মালামাল কেনা হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার টাকার। দোকান সাজাতে আরো টাকার প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে তিনি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সহায়তার আহ্বান জানান।
ইউএনও সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, এটি একটি মানবিক উদ্যোগ। সিস্টারহুডের এ উদ্যোগকে সাবুবাদ জানাই। নাছির উদ্দিনকে সরকারি ভাতাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়া হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: