• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণ সভা ১২ সেপ্টেম্বর


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১২:৩৩ পিএম
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণ সভা
 কিংবদন্তী গীতিকবি, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার

জাকির হোসেন আজাদী:  কিংবদন্তী গীতিকবি, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণসভা গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর যৌথ উদ্যোগে আগামী (১২সেপ্টেম্বর) সোমবার বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছে।

সভায় উপস্থিত থাকবেন মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ এমপি। এছাড়া সদ্যপ্রয়াত গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ারের পরিবারের সদস্য ও দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলীলাকী।

অনুষ্ঠানটি গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য  সংশ্লিষ্ট সকলকে আহবান করেছেন গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ এর সাংগঠনিক সম্পাদক খ‍্যাতিমান গীতিকবি জুলফিকার রাসেল।

উল্লেখ্য যে, গাজী মাজহারুল আনোয়ার গত ৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল  বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। ঐদিন সকালে অসুস্থ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

তিনি একই সাথে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, জনপ্রিয় অনেক চলচ্চিত্রের গানের গীতিকার বিগত পাঁচ দশকের মতো সময় তিনি দোর্দণ্ড প্রতাপে বাংলাদেশের সঙ্গীতের জগতে বিচরণ করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ যে দিনগুলো বছরের নানা সময় উদযাপন করা হয় সেসময় সারা দেশজুড়ে বাজানো হয় তারই লেখা, 'জয় বাংলা বাংলার জয়'।

'আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল','গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে', 'একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল', 'আমার মন বলে তুমি আসবে', 'এক নদী রক্ত পেরিয়ে', 'সাগরের তীর থেকে', 'এই মন তোমাকে দিলাম', 'আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো' - এরকম অসংখ্য হৃদয়ে দোলা লাগানো কালজয়ী গানের গীতিকার তিনি।

দুই হাজার ছয় সালে বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের মনোনীত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের তালিকায় ছিল তার রচিত 'জয় বাংলা বাংলার জয়', 'একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে', 'একতারা তুই দেশের কথা বল' এই তিনটি গান।

ষাটের দশকের শুরুতে তিনি চিকিৎসায় পড়াশুনা শুরু করেন। দুই হাজার তের সালে বিবিসি বাংলার সাথে এক কথোপকথনে তিনি বলেছিলেন, জন্মস্থান কুমিল্লায় স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি দেয়াল পত্রিকায় কবিতা লিখতেন।

কবিতা লেখা কিভাবে তাকে গানের রচয়িতা করে তুলল সেটি বর্ণনা করে তিনি বলছিলেন, "ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর যখন মেডিকেল কলেজে এসে ভর্তি হলাম, সেখানে একটা নাটক হওয়ার কথা। সেটাতে একটা গানের প্রয়োজন হয়েছিল। গানটা সেসময়কার প্রখ্যাত আবু হেনা মোস্তফা কামাল সাহেবের লেখার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সময় স্বল্পতার কারণে গানটা লিখতে পারেননি। তো আমি সেই সময় নাটকের পরিচালককে বললাম আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে একটু ট্রাই করে দেখতে পারেন। তারপর আমি একটি গান লিখে ফেললাম।
সেই গানটি পরে গেয়েছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন। সেভাবেই রেডিওতে গানের রচয়িতা হিসেবে তার অভিষেক।

"তিনি (ফরিদা ইয়াসমিন) একদিন আমাকে বলেছিলেন আমি এই গানটি রেডিওতে গাইতে চাই। আমি বেশ উৎসাহিত হলাম। যদিও সেই গানের রচয়িতা হিসেবে আমার নামটা যায়নি। আমার মাথার মধ্যে তখন একটা পোকা ঢুকে গেলো যে গানতো আমি লিখতে পারি। মানুষ সৌভাগ্যের পেছনে ঘোরে। কিন্তু সৌভাগ্য যেকোনভাবে আসতে পারে। সুতরাং একেই জড়িয়ে আমি থাকলাম।"

ব্যাস এরপর থেকে রেডিও পাকিস্তানে গান লেখার চেষ্টা করলেন এবং পাঁচ দশকের মতো সময় ধরে তার গানে উঠে এসেছে দেশপ্রেম, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মানুষের জীবনের গল্প, প্রেম, বিরহের কথা। এই বিষয়গুলিই গান লেখায় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেগ এনে দিয়েছে।

তার লেখা গান গেয়ে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন শিল্পী সঙ্গীতের ক্যারিয়ারে সফলতা পেয়েছেন। তার জনপ্রিয় অনেক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহতমতউল্লাহ, রুনা লায়লা, সৈয়দ আব্দুল হাদি, সাবিনা ইয়াসমিন।

প্রথম যে গানটির মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানে শিল্পী রুনা লায়লার অভিষেক হয়েছিল সেটি তার লেখা 'গানেরই খাতায় স্বরলিপি'।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালকও ছিলেন। পনেরোটির বেশি চলচ্চিত্র পরিচালনা এবং কুড়িটির বেশি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন তিনি।

তাঁর সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, "বহু বছরের অসংখ্য স্মৃতি তার সাথে আমার। তবে আমার সবচেয়ে মজার স্মৃতি হল ওনার সিনেমায় অভিনয় করা। আমিতো গান করি। কোনোদিন অভিনয় করিনি। উনি আমাকে জোর করে ওনার একটা সিনেমায় আমাকে অভিনয় করিয়েছিলেন। আমি একজন শিল্পী এবং সেই ছবিতে আমার চরিত্রটিও ছিল একজন শিল্পী। এটা আমার জন্য একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে আজীবন।"'

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা তাঁর সবচেয়ে পছন্দের গান সম্পর্কে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, "এত দারুণ সব গান, তার মধ্যে খুব পছন্দের একটার কথা বলা মুশকিল। কিন্তু যদি বলতে হয় তার কোন গানটি আমি প্রায়ই গুনগুন করে গেয়ে উঠি সেটা হল 'যদি আমাকে জানতে সাধ হয়'। হারজিত সিনেমার জন্য গাওয়া হয়েছিল গানটা। অসম্ভব সুন্দর একটা গান। যেমন লেখা তেমন সুর।"

গাজী মাজহারুল আনোয়ার কুড়ি হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন। তার গানের ঝুলি কিভাবে এত ভরপুর হল সে সম্পর্কে তিনি  বলেছিলেন, "একটা সময় ছিল টেলিভিশনের কোন সঙ্গীত পরিচালক, চলচ্চিত্রের অনেক প্রতিষ্ঠিত মিউজিক ডাইরেক্টর, ওনারা চাইতেন না আমার বাইরে আর কারো গান হোক। সেকারণে প্রতিদিনই কয়েকটা করে গান লেখা হয়ে যেত। বহু গানের কথা এখন আর আমার সংগ্রহেও নেই। হারিয়ে গেছে।"


রেডিওতে প্রচারিত অনেক গানের রেকর্ড মুক্তিযুদ্ধের বছর খোয়া যায়। অনেক গানের খাতাও সেবছর হারিয়ে যায়। রেডিওতে তার ক্যারিয়ার শুরু হলেও গীতিকার হিসেবে পরে অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে আরও অনেক গান লিখেছেন। তার একটি বড় অংশই ছিল চলচ্চিত্রের গান।

সফলতার শীর্ষে, পরিণত বয়সে এসে 'সবাই বলে বয়স বাড়ে আমি বলি কমেরে', 'আছেন আমার মোক্তার', এরকম কিছু আধ্যাত্মিক গান লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার।

বলেছিলেন গান লেখার নেশায় যখন মেডিকেলের পড়াশুনা ছাড়তে চেয়েছিলেন সেসময় তার বাবা খুব হতাশ হয়ে তাকে একটি চিঠি লিখে বলেছিলেন, "ইউ আর মাই লস্ট গেম।"

বাবার মৃত্যুর আগেই তিনি বাংলাদেশের কালজয়ী অনেক গানের রচয়িতা হিসেবে একুশে পদক পেয়েছিলেন। তার বাবা তখন তাকে আর একটি কথা বলেছিলেন, "আমি তোকে চিঠি লিখে যে কথাটি বলেছিলাম, সেটা সঠিক নয়। যার যা পথ সেটাই সত্যি হয়।"
 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image