• ঢাকা
  • বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

বিদ্যানন্দের কিশোর সমালোচনার জবাব দিলেন 


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১০:১১ এএম
বিদ্যানন্দের সমালোচনার জবাব দিলেন 
কিশোর কুমার

ডেস্ক রিপোর্টার : বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন স্বেচ্ছাসেবী এ প্রতিষ্ঠান নিয়ে কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। একটি কোলাজ ছবিকে ঘিরে শুরু হয় এ সমালোচনা। পরে ‘মজিদ চাচা’ চরিত্রসহ আরও নানা ইস্যু নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরা। এবার এসবের জবাব দিয়েছেন বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস।

আমেরিকার দেশ পেরু থেকে সোমবার (১৭ এপ্রিল) ফেসবুক লাইভে সব সমালোচনার জবাব দেন তিনি। 

কিশোর কুমার বলেন, বিদ্যানন্দের কাজকর্মে কেউ স্বচ্ছতা না পেলে, যে কেউ মামলা করতে পারেন। এর আগেও বিভিন্ন জন উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। তার জবাবও দেয়া হয়েছে।
 
সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের সহায়তায় নানা উদ্যোগ নেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা। পুড়ে যাওয়া কাপড়গুলো ব্যবহার উপযোগী করে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের কাছে তা বিক্রি করেন। যে কাপড় রক্ষা করা গেছে, তা দিয়ে শিশুদের পোশাক, গয়নাসহ নানা পণ্য বানানোর ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
 
কিশোর কুমার বলেন, এক নারী উদ্যোক্তার বানানো কিছু গয়নার ছবি দেখেই ওই সব গয়না বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে বিদ্যানন্দের ফেসবুক পেজে কোলাজ ছবি প্রকাশের সময় ওই নারী উদ্যোক্তার বানানো কয়েকটি গয়নার ছবিও প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে পেজ থেকে তা সরিয়ে ফেলা হয়। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তারপরও সমালোচনা চলছে।
 
তিনি বলেন, বিদ্যানন্দের ৮ থেকে ১০টি ফেসবুক পেজ রয়েছে। আর সেগুলোতে প্রায় ৩০ হাজার লেখা আছে। তার মধ্যে ৩০টি লেখাতে ভুল থাকতেই পারে। বেতনভুক্ত কেউ লেখাগুলো লিখছেন না; লিখছেন তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা।
 
বঙ্গবাজার তহবিলে কত টাকা জমেছে, তা জানিয়ে কিশোর কুমার দাস বলেন, বঙ্গবাজার তহবিলে দুই কোটি টাকা জমা হয়েছে। এ টাকা অনুষ্ঠানিকভাবেই বিতরণ করা হবে। তবে অনুষ্ঠান কোথায় হবে, তা আগে থেকে কেন জানানো হয় না, তা নিয়েও অনেকে সমালোচনা করছেন। এর উত্তর হলো, আগে থেকে জানানো হলে অনেককেই চাঁদা দিতে হয়। প্রতিষ্ঠান এটি চায় না বলেই আগে থেকে স্থান জানানো হয় না।
 
পাহাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় জমি কেনা নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে কিশোর কুমার বলেন, মানুষ বিভিন্ন ভিডিওর অংশবিশেষ দেখে সমালোচনা করছেন। বিদ্যানন্দ বেশির ভাগ জমির মালিক না, লিজ নেয়া জমিতে অনাথালয়, এতিমখানা, হাসপাতালের মতো কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শর্ত অনুযায়ী লিজ নেয়া হয়েছে জমিগুলো। 
 
লিজ দেয়া জমির দাতা বা প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দের কার্যক্রম বন্ধ করলে জমি ফেরত দিতে হবে। জমি কোনোভাবেই ব্যবসা বা পর্যটনের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে জমি দাতার কাছে ফেরত চলে যাবে। পাহাড়ে অনাথালয়গুলোতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা থাকছে; স্থানীয় লোকজনই সেখানে কাজ করছেন। তবে স্থায়ী উদ্যোগের জন্য কুড়িগ্রামে মেয়েদের এতিমখানার জন্য এক একরের বেশি জায়গা এবং রামুতে এতিমখানার জন্য জমি কিনেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
 
জাকাত নেয়া প্রসঙ্গে কিশোর কুমার বলেন, গত বছর জাকাত না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিদ্যানন্দ। কিন্তু একজন হুজুর বলেছিলেন, কেউ জাকাত দিতে চাইলে কেন নেবেন না? সে কারণে সিদ্ধান্ত পাল্টানো হয়। এছাড়া জাকাত না নিলে আবার অনেকে প্রশ্ন তুলবেন বা অন্য ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু হবে।
 
বিদ্যানন্দের অডিট প্রতিবেদন নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, যাদের মনে প্রশ্ন আছে, তারা একটু কষ্ট করে অডিট ফার্মের কাছ থেকে তথ্য নেন। বিদ্যানন্দ কারও কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে টাকা নেয় না। অডিট ফার্ম ব্যাংক থেকে হিসাব নিয়ে অডিট করে। নিয়ম অনুযায়ী ট্যাক্স, ভ্যাট সব পরিশোধ করা হচ্ছে।
 
মজিদ চাচা ইস্যু নিয়ে কটাক্ষ চলছে। এ বিষয়ে কিশোর কুমার বলেন, মজিদ চাচা একটি রূপক বা প্রতীকী চরিত্র। একবার সত্যিকার একজন উপকারভোগীর নাম প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে ওই ব্যক্তির নাম একজন বিখ্যাত লোকের নামের সঙ্গে মিলে যাওয়ায়, তখন বলা হয়েছিল বিদ্যানন্দ ইচ্ছা করেই ওই বিখ্যাত ব্যক্তিকে অপমান করার জন্য কাজটি করেছে। 
 
এর পর থেকে শুধু মজিদ চাচা নন, এমন অনেক প্রতীকী নাম প্রচার করা হয়েছে। আর বিদ্যানন্দ নিবন্ধিত এনজিও, নিয়ম অনুযায়ী বিদেশ থেকে টাকা নিতে কোনো সমস্যা তো হওয়ার কথা নয়।
 
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের নাম এবং ব্যক্তি কিশোরের ধর্ম নিয়ে অনেকে অনেক কটূক্তি করছেন। এ বিষয়ে কিশোর কুমার দাস বলেন, ‘জন্মগতভাবে হিন্দু পরিবারে আমার জন্ম হয়েছে। আমার ধর্ম নিয়ে অনেক কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। মৃত্যু নিয়ে কেউ যাতে কাটাছেঁড়া করতে না পারে, লাশ নিয়ে যাতে কেউ না বলে এটা কোন ধর্মের, তাই বাংলাদেশ থেকে আসার আগে দেহদান করে দিয়ে এসেছি।

সমালোচনার মুখে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় পান না বলেও জানিয়েছেন বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেন, টাকা না থাকলে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন না। তবে বর্তমানে যে সমালোচনা চলছে, তা পরিকল্পনা করেই কোনো গোষ্ঠী করছে। তবে কারও বিরুদ্ধে বিদ্যানন্দ কিছু বলবে না। কারণ যারা বিদ্যানন্দকে নিয়ে সমালোচনা করছেন, তারা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই তা করছেন। তারা ভাবছেন, বিদ্যানন্দ ভুল করলে তা দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে কেউ যেন মিথ্যা তথ্য প্রচার না করেন।
 
তিনি বলেন, দুই বছর আগের ভিডিও দেখে এখন অনেকেই বলছেন, তখনকার কথার সঙ্গে এখনকার কথা মিলছে না। না মেলার কারণ, তখন হয়তো তা মানতাম, এখন আর সেই কথাটি মানি না বা সঠিক মনে করছি না। আগে করপোরেট ডোনেশন নিতাম না, এখন নিচ্ছি। সেলিব্রেটিরা আগে যুক্ত ছিলেন না, এখন যুক্ত করা হচ্ছে। নীতির সঙ্গে মিললেই দাতারা অনুদান দেবেন, না মিললে দেবেন না।
 
সবশেষে কিশোর কুমার দাস আরও জানিয়েছেন, কারও কোনো প্রশ্ন থাকলে তার উত্তর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেয়া হবে।

কিশোর কুমার দাস চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার প্রকৌশলে স্নাতক করেছেন। বর্তমানে তিনি স্ত্রী জ্যাসিকা মারিয়াকে নিয়ে পেরুতে বসবাস করছেন।
 
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করেছিল ২০১৩ সালে। চলতি ২০২৩ সালে সমাজসেবায় একুশে পদক পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image