• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

উত্তাল সময়ের স্বপ্নপুরুষ


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০২:৪২ পিএম
শোকে মুষড়ে পড়েছিলেন
সিরাজুল আলম খান

 আবু সাঈদ খান

ষাটের দশকেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক সিরাজুল আলম খান। শুধু স্বপ্নই দেখেননি; স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে জানবাজি সংগ্রামে শামিল হয়েছিলেন। এই সময়েই কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে নিউক্লিয়াস বা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬ দফাকে এক দফা অর্থাৎ স্বাধীনতার সংগ্রামে উন্নীত করার ব্রত গ্রহণ করেন। সেই লক্ষ্যে ব্যক্তিজীবনের সব বাসনা বিসর্জন দিয়ে কাজ করে গেছেন।

ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৭ জুন হরতাল পালনের ক্ষেত্রে সিরাজুল আলম খানের ভূমিকা অনন্য। তিনি স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে শ্রমিকদের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তখন আওয়ামী লীগের কোনো শ্রমিক সংগঠন ছিল না। দু-একজন ছাত্রকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আদমজী, পোস্তগোলা, তেজগাঁও প্রভৃতি শিল্প এলাকায় ছুটে যান। শ্রমিক নেতাদের রাজনৈতিক সংগ্রামে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন। সেদিন তাঁর নিরলস পরিশ্রমের ফলে ৭ জুন হরতালে শ্রমিকরা ব্যাপকভাবে অংশ নেন; যা বদলে দেয় আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি। শহীদ মনু মিয়ার রক্তে আঁকা হয় সংগ্রামের পথরেখা।

৭ জুনের পথ ধরে আসে ঊনসত্তর। দেশজুড়ে আওয়াজ ওঠে– জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব; আইয়ুব যদি বাঁচতে চাও, আগরতলা মামলা তুলে নাও। এই সংগ্রাম সংঘটনে, ছাত্রসমাজের ১১ দফা প্রণয়নে বা ৬ দফাকে ১১ দফায় অঙ্গীভূত করার অন্যতম কুশীলব সিরাজুল আলম খান। নিউক্লিয়াস প্রভাবিত ছাত্রলীগের র‍্যাডিকেল ধারার আন্দোলন ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা’; ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ এবং ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি তুলে জাতিকে নতুন স্বপ্ন দেখায়। স্বাধীনতার যে স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধু, সিরাজুল আলম খান ও স্বল্পসংখ্যক তরুণের স্বপ্ন, ঊনসত্তরের আন্দোলনের উত্তাল জোয়ারে তা ক্রমেই সমগ্র জাতির স্বপ্নে পরিণত হয়। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের ছাত্র-জনতার সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন এবং ৩ মার্চ পল্টনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করার মধ্য দিয়ে স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামের সিংহদ্বারে পৌঁছে যায়। সিরাজুল আলম খান ছিলেন এই সংগ্রামের মূল কারিগর। মুক্তিযুদ্ধ সংঘটনে তার অবদান প্রাতঃস্মরণীয়। তিনি ছিলেন মুজিববাহিনীর অন্যতম কান্ডারি।

স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন-সংগ্রামে অনন্য ভূমিকার জন্য সিরাজুল আলম খানকে আদর করে কাস্ত্রো বলতেন। তাঁদের মধ্যে ছিল হৃদয়ের বন্ধন। স্বাধীনতা-উত্তর দু’জনের পথ আলাদা হয়। তারপরও তাঁদের মধ্যকার আবেগতাড়িত সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডে সিরাজুল আলম খান শিশুর মতো কেঁদেছেন। শোকে মুষড়ে পড়েছিলেন।

একাত্তরের যুদ্ধ শেষে আরেক যুদ্ধে অবতীর্ণ হন সিরাজুল আলম খান। তাঁর নেপথ্য নেতৃত্বে গড়ে ওঠে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–জাসদ। তিনি ছিলেন দলটির তাত্ত্বিক নেতা ও মধ্যমণি। সমাজ বদলের স্বপ্ন নিয়ে হাজার হাজার যুবক জাসদের পতাকাতলে সমবেত হয়েছিল, জাসদ পরিণত হয়েছিল শাসক আওয়ামী লীগের বিকল্প শক্তিতে; সেই জাসদ আজ খণ্ডিত-বিখণ্ডিত। এর পেছনে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় নানা ঘটনার প্রভাব আছে, নেতৃত্বেরও দায় আছে। সেই দায়ের হয়তো সিংহভাগ সিরাজুল আলম খানকেই বহন করতে হবে। তাই বলে তিনি সমাজবদলের যে সাহসী সংগ্রামের পথ দেখিয়েছিলেন, তা কখনও ম্লান হবে না। সেই রাজপথ কাঁপানো সংগ্রাম আগামী দিনের সমাজ বদলের সৈনিকদের পথ দেখাবে, সাহস জোগাবে।

জাসদ ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে তাঁকে কাছ থেকে দেখেছি। একসঙ্গে জেলেও কাটিয়েছি। ব্যক্তি সিরাজুল আলম খানকে চিনেছি। ব্যক্তিস্বার্থ তাঁকে কখনও স্পর্শ করেনি। তাঁর জীবন ছিল দেশ ও মানুষের জন্য উৎস্বর্গীকৃত। তিনি আমৃত্যু দেশের কথা ভেবেছেন, মানবমুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন। অকৃতদার সিরাজুল আলম খানের ঘরবাড়ি বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে কিছুই ছিল না। বাংলাদেশই ছিল তাঁর ঠিকানা।

ভাবতে কষ্ট হয়, যে ব্যক্তি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে নিজেকে উৎসর্গ করে গেলেন, সেই রাষ্ট্র দীর্ঘদিন রোগে শয্যাশায়ী সিরাজুল আলম খানের কোনো খোঁজ নিল না, মুখ ঘুরিয়ে রাখল! আর দশজন সাধারণ নাগরিকের মতো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলেছে। সেখানেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। এই রাষ্ট্রের কাছ থেকে সিরাজুল আলম খান কখনও কিছুই চাননি, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য প্রাপ্য মর্যাদাও চাননি। কিন্তু রাষ্ট্রের কি কোনো দায় ছিল না?

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image