• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ কাজী আব্দুল বারী


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ০৮ জুন, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৪০ পিএম
কাজীপাড়ায় জন্ম গ্রহন করেন
কাজী আব্দুল বারী

নিউজ ডেস্ক:  কাজী আব্দুল বারী। প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, ভাষা সৈনিক, ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের দুইবারের নির্বাচিত ভিপি, কৃষক শ্রমিক ও জেলেদের অধিকার আদায়ের নেতা, সৎ ও নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, গনতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনে আপোষহীন নেতৃত্ব দিয়েছেন, পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের সময়ে নির্যাতনে বধির হয়েছেন, খন্দকার মোশতাক সরকারের নির্যাতনে কিডনী বিকল হয়েছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ৪৮ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন। গেজেট নম্বর- ৩৭৮১ তারিখঃ ২০ মে ২০২০।

১৯৩৫ সালের ২১ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার কাজীপাড়ায় জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম এডভোকেট কাজী আব্দুল আওয়াল। অষ্টগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক ,ময়মনসিংহ জেলা বারের প্রভাবশালী আইনজীবী ছিলেন। মাতার নাম আফরোজা খাতুন।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্টা হলে কাজী আব্দুল বারী যোগদান করেন।

১৯৫২ সালে ময়মনসিংহে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহন করায় গ্রেফতার হয়ে কারাবরন করেন । জেলখানা থেকে পরীক্ষা দিয়ে মেট্রিক পরীক্ষা পাশ করেন। ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের দুবার ভিপি নির্বাচিত হন।

১৯৫৪ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখার অপরাধে গ্রেফতার গ্রেপ্তার হন।

১৯৫৬ সালে পুর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন । সেই সময় করাচিতে এক ছাত্র সম্মেলনে পুর্ব পাকিস্তানের ছাত্রছাত্রীদের নির্যাতনের চিত্র তোলে ধরেন।

১৯৫৭ সালে ন্যশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দেন। কেন্দ্রীয় ন্যাপের সদস্য নির্বাচিত হন ।

১৯৫৮ সালের সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খান রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে ময়মনসিং সার্কিট হাউসে সমাবেশ করার কারনে পাকিস্তান সরকার হুলিয়া জারি করেন ।

১৯৫৯ সালে কাজী আব্দুল বারীকে গ্রেপ্তার করে সামরিক আদালতে তিন বছর জেল ও ১০ টি বেত্রাঘাতে দন্ডিত করা হয় ।

কাজী আব্দুল বারীকে গ্রেফতার ও অন্যায়ভাবে দন্ড দেয়ায় রাশিয়া, চীন, বুলগেরিয়া,যুগোশ্লাভিয়াসহ বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক দেশ পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ করা সত্বেও দন্ড কার্যাকর হয় । বেত্রদন্ডের আঘাতে সারা জীবনের মত বধির হয়ে যান। কাজী আব্দুল বারী কোন দিন কানে শুনতে পারেননি।

১৯৬৩ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ময়মনসিংহ জেলার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শুরু করেন। প্রগতিশীল আন্দোলন করার জন্য হাওরাঞ্চলে বিশাল কর্মী বাহিনী গড়ে তোলেন ।

১৯৬৯ সালের গনঅভুত্থানে ময়মনসিংহ জেলায় গনজাগরন সৃষ্টি করেন ।

১৯৭০ সালে ন্যাপের (মোজাফফর) মনোনয়নে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য পদে কুড়েঘর মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মো আব্দুল কাদিরের কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষনে দেশ যখন উত্তাল হয়ে উঠে তখন কাজী আব্দুল বারী অষ্ট্রগ্রাম থানা ও হাওরাঞ্চলের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হন ।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার একটি তার বার্তা পেয়ে কাজী বারী অষ্টগ্রাম সদর ও পুর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের হাট বাজারে শত শত কর্মী জড়ো করে তার বার্তার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। কর্মীদের যুদ্ধে অংশগ্রহনের আহববান জানান । ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলসের হাফিজ উদ্দিনের তত্তাবধানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন শুরু করেন । পরে অনেক ছাত্র যুবক নিয়ে ভারতে চলে যান । ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন,মুক্তিযুদ্ধে প্রেরনের দ্বায়িত্ব পালন করেন।পআকিস্তান হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অষ্টগ্রামে প্রথমে কাজী আব্দুল বারীর বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে । তার ভগ্নিপতি ন্যাপ নেতা আবুল খয়ের খানকে হত্যা করা হয় এবং আত্নীয় স্বজনদের বাড়ীতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হয়।

স্বাধীনতার পুর্বে অষ্টগ্রামে এসে ন্যাপের রাজনীতিতে সক্রিয় হন । কৃষক সমিতিসহ বিভিন্ন সমাজকল্যাণমুলক সংগঠন করে গনতান্ত্রিক ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে হাওরের ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ করেন। বল্লী গায়েলা ও ঝাজর বিলের ইজারা প্রথা বাতিল, জেলে অত্যাচার বন্ধ করেন।জেলেরা ভাষান পানিতে মাছ ধরার সুযোগ পায় । প্রগতিশীল রাজনীতির তীর্থভুমি হিসেবে পরিচিত হয় হাওরাঞ্চল ।

কাজী আব্দুল বারীর আহবানে বিভিন্ন সভাসমাবেশে উপস্থিত হন অধ্যাপক মোজাফর আহম্মেদ, মতিয়া চৌধূরী, পংকজ ভট্টাচার্য্য ,চৌধূরী হারুন অর রশিদ , পীর হাবিবুর রহমান , মাওলানা আহমদুর রহমান আজমি ,কমরেড মনিসিংহ, অধ্যক্ষ ফজলুল হক খন্দকার , অনিমা সিংহ , অজয় রায়সহ জাতীয় বাম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ।

১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অষ্ট্রগ্রাম-ইটনা আসনে ন্যাপের ( মোজাফফর) প্রার্থী হিসেবে কুড়েঘর মার্কা নিয়ে কাজী আব্দুল বারী নির্বাচন করলে আওয়ামীলীগের এডভোকেট মো আব্দুল হামিদের কাছে পরাজিত হন।

১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে প্রথম প্রতিবাদ করেন এবং আত্নগোপন চলে যান।

কাজী আব্দুল বারী’র আপন মামা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনী রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ । বঙ্গভবনে ডেকে নিয়ে রাষ্টপতি খন্দকার মোশতাক মন্ত্রী পরিষদে যোগ দিতে বললে কাজী আব্দুল বারী নাকোচ করে দেন । কাজী আব্দুল বারী খুনী মোশতাককে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেন এবং থুথু মেরে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে আসেন। বঙ্গবভন থেকে বের হয়ে আসার সাথে সাথে গোয়েন্দারা ধরে নিয়ে দুইদিন গুম করে রাখেন। ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। আটক অবস্থায় রক্তচাপ ,ডায়বেটিস,কিডনী রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি কিডনী বিকল হয়ে গিয়েছিল। আত্নীয় স্বজনদের চাপের কারনে ছেড়ে দেন।অসুস্থ অবস্থায় মুক্তি পেয়ে অষ্টগ্রামে চলে আসেন ।

১৯৭৯ সালে অষ্টগ্রাম-ইটনা আসনে ন্যাপ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেন।

১৯৮৩ সালের ২১ ডিসেম্বর আজীবন সংগ্রামী,কিশোরগঞ্জ মহকুমার ন্যাপের সভাপতি কাজী আব্দুল বারী মৃত্যুবরন করেন।

আদর্শের রাজনীতিতে কাজী আব্দুল বারী ছিলেন প্রগতিশীল আন্দোলনের উজ্জল নক্ষত্র । মৃত্যু পর্যন্ত ন্যাপের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image