নিউজ ডেস্ক: বন্যা পরিস্থিতিতে পানিতে ডুবে, সাপের কামড়ে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এ পর্যন্ত ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৌলভীবাজারে এখনো একজন নিখোঁজ রয়েছেন। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে।
সিলেট, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলা থেকে প্রাপ্ত আজকের তথ্য অনুযায়ী বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশের ৬৪টি উপজেলা বন্যা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৪৮৬টি।ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৪ হাজার ১৬৭ জন। ৩ হাজার ২৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৬৮৭ জন মানুষ এবং ৩৮ হাজার ১৯২টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মোট ৫৬৭টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারী বেসরকারীসহ সকল পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক বন্যা দুর্গত এলাকায় ১,৯৪,২৮৫ প্যাকেট ব্রাণ, ১৯,২৬০ প্যাকেট রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। মোট ৪২,৭৬৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ১৮,৩৮৯ জনকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ১৫৩ জনকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত মোট ২৪টি ক্যাম্প এবং ১৮টি মেডিক্যাল টিম বন্যা উপদ্রুত এলাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সংগৃহীত ১ লাখ ১৫ হাজার ১০৫ প্যাকেট শুকনা খাবার, কাপড় ও পানি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (ডিডিএম) এর মাধ্যমে বন্যা কবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (ডিডিএম) ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বন্যা দুর্গত নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার বন্যার পরিস্থিতি ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করছেন।
বন্যা আক্রান্ত জেলাসমূহের জেলা প্রশাসককে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় করে এক সাথে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
বন্যা দুর্গত জেলাসমূহের দূরবর্তী স্থানসমূহে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যেম ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বন্যা আক্রান্ত জেলাসমূহে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করার জন্য ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা সেবা প্রদান করছেন। পাশাপাশি স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
সার্বিকভাবে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরছেন। বন্যা দুর্গত জেলাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে। বন্যা পরবর্তী পানি বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিক চালু রয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / এইচ
আপনার মতামত লিখুন: