• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

স্বাস্থ্য খাতের হালচাল


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১২:৫৯ পিএম
স্বাস্থ্য খাতের হালচাল
স্বাস্থ্য

ডা. হিমেল বিন আজাদ

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(ক) অনুচ্ছেদে জীবনধারণের মৌলিক উপকরনের ব্যবস্হা করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও ১৮(১) অনুচ্ছেদে জনগণের পুষ্টি স্তর- উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অধিকার হলো স্বাস্থ্যসেবা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরুতেই দূরদর্শী নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে ছিলেন। যার প্রতিফলন সংবিধানে স্বাস্থ্য অধিকারকে গুরুত্বের সাথে সন্নিবেশিত করা। বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলেন। এই অল্প সময়ে স্বাস্থ্য খাতে  উন্নয়ন এবং সবার জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। চিকিৎসায় দক্ষ জনবল তৈরির জন্য ১৯৭২ সালে স্হাপন করেছিলেন 'আইপিজিএমআর', যা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। সদ্য স্বাধীন দেশের হাজারো সমস্যার মাঝে তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে বর্তমান সরকার গত ১৩ বছরে স্বাস্থ্য খাতে ব্যপক উন্নয়ন করেছে। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে প্রতি ৬ হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্হাপনের উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন। সে সময় ১০ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক স্হাপন করা হয়েছিল। সে মেয়াদে স্বাস্থ্যনীতি -২০০০ প্রণীত হয়। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তনের ফলে এ ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আবার চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ১৩  হাজার ৭৭৯ টি। এসব কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু হওয়ায় উপজেলা ও জেলা হাসপাতালগুলোতে রুগীর চাপ অনেক কমেছে। সপ্তাহে শুক্রবার ও অন্যান্য ছুটির দিন ব্যতীত  ছয় দিন সকাল ৯ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত  কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সেবা দিয়ে থাকে।

ক্লিনিক পরিচালনা করেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার। এই পদে স্হানীয় যোগ্য নারী কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তাকে সহায়তা করার জন্য স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব ক্লিনিক থেকে সেবা গ্রহীতার তিন চতুর্থাংশের ও বেশি নারী। দৈনিক গড়ে ৩০ জন এসব ক্লিনিক থেকে সেবা গ্রহণ করে থাকে। ক্লিনিকগুলো থেকে মা, নবজাতক ও অসুস্থ শিশুর সমন্বিত সেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা,সাধারণ আঘাতের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসব ক্লিনিক থেকে শিশু ও মায়েদের টিকা দেওয়া হয়। এছাড়াও এসব ক্লিনিককে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রমক রোগ শনাক্তের ব্যবস্হা রয়েছে। এখানে স্বাস্থ্য শিক্ষার পাশাপাশি পুষ্টি শিক্ষাও দেওয়া হয়।

জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি বিভাগকে দুইটি বিভাগে রূপান্তরিত করেছে। এদুটো বিভাগ হলো স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ  এবং  স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। দুই বিভাগে দুইজন সচিবের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানগুলো আগের থেকে এখন অনেক কার্যকর ও গতিশীল। নিরবচ্ছিন্নভাবে জনগণের চিকিৎসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত এক যুগে বিশ হাজারেরও বেশি চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

দেশে অনেক নতুন নতুন বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ সকল হাসপাতালের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউট ও হাসপাতাল অন্যতম। এ হাসপাতালে আগুনে পুড়ে যাওয়া রুগীদের জন্য রয়েছে  আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত চিকিৎসা সেবা। এখানের  ডাক্তার,  নার্সসহ সকল স্তরের জনবলকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশেষভাবে দক্ষ করে তোলা হয়েছে। এখন  বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা এ হাসপাতালের মাধ্যমে দেশের জনগণকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডাইজেস্টিভ ডিজিজেস রিসার্চ এন্ড হসপিটাল,২৫০ শয্যার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা ৫ শত শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, খুলনায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আবু নাসের হাসপাতাল, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট গোপালগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল,৩০০ শয্যা বিশিষ্ট  ঢাকার আগারগাঁওয়ে ইনিস্টিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল অন্যতম। এছাড়াও জেলা উপজেলা পর্যায়ে ৩০ টি বিভিন্ন ধরনের হাসপাতাল এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০৮ হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ - কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালকে সরকারি হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ইউনিট-২,ময়মনসিংহ  মেডিক্যাল কলেজ ইউনিট-২ এ সরকারের আমলেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নতুন শয্যা সংযোজন ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে জাতীয় হৃদরোগ, কিডনি, মানসিক স্বাস্থ্য এবং শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য, অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল,ঢাকার  আজিমপুরের মা ও শিশু হাসপাতালসহ অসংখ্য হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে নতুন প্রায় ১১ হাজার শয্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।  জেলা পর্যায়ে ২৪ টি নতুন মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

চিকিৎসকসহ চিকিৎসা সেবায় প্রয়োজনীয় জনবল তৈরির লক্ষ্যে নতুন ১৮ টি সরকারি এবং সামরিক বাহিনীর অধীনে ৬ মেডিক্যাল কলেজর শিক্ষার্থী ভর্তির আসন বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম,রাজশাহী ও সিলেট মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। দেশে এখন এমবিবিএস চিকিৎসক আছে ৯৩ হাজার ৩৫৮ জন,ডেন্টাল চিকিৎসক আছে ৯ হাজার ৫৬৯ জন। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আছে ৫ হাজার ১৮৪ জন,উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ৩ হাজার ৮০১ জন,কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিএইচসিপি ১৩ হাজার ৫০৭ জন,স্বাস্থ্য পরিদর্শক ১ হাজার ৪৭ জন,উপস্বাস্হ্য পরিদর্শক ৩ হাজার ৬৩৬'জন,স্বাস্থ্য সহকারী ১৫ হাজার ৪২০ জন। দেশে রেজিস্ট্রার্ড প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে ৩১ হাজার ২৬২ টি,রেজিস্ট্রার্ড প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ৯ হাজার ৫২৯ টি,প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকের শয্যা সংখ্যা ৯০ হাজারের ও বেশি। প্রতি ১ হাজার ৫৮১ জনের জন্য ১ জন চিকিৎসক রয়েছে। প্রতি ১০ হাজার নাগরিকের জন্য সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৩.২৪ এবং প্রাইভেট হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৫.৫৭টি।

করোনা প্যান্ডেমিক মোকাবিলায় উন্নত বিশ্বের ধনী দেশগুলো যখন হিমসিম খেয়েছে তখন বাংলাদেশ  সীমিত সমর্থ,  অপর্যাপ্ত জনবল ও অবকাঠামো নিয়ে পরিকল্পিতভাবে দক্ষতার সাথে মোকাবিলা করেছে। মৃত্যু সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। দক্ষতার সাথে কোভিড ভ্যসকসিন সংগ্রহ এবং দেশের নাগরিকদের বিনামূল্যে কোভিড  ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা  হয়েছে।
সরকারের ওষুধনীতির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে গত কয়েক বছরে ওষুধ শিল্পে নিরব বিপ্লব ঘটেছে। দেশে এলোপ্যাথিক নিবন্ধনকৃত ওষুধ কোম্পানি  আছে ২৭৪ টি,এরমধ্যে ২১৪ টি চালু আছে।

এসব কোম্পানির ৩ হাজার ৬৩৬ টি জেনেরিক এবং ৩০ হাজারের ও বেশি ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এসব ওষুধ বিশ্বমানের। দেশের চাহিদার শতকরা ৯৮ ভাগ ওষুধই দেশে উৎপাদন হচ্ছে। ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের ১৫৯ দেশে বাংলাদেশের উৎপাদিত ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। দেশে আবিষ্কৃত প্রথম কোভিড ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্স মানুষের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ইতিমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ৮ টি দেশ কোভিড ভ্যাকসিন উদ্ভাবন শেষে রোল আউট করতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গভ্যাক্স ভেকসিনটি সফল হলে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হবে।

আমাদের স্বাস্থ্যনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে স্বল্প ব্যয়ে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। স্বাস্থ্যসেবার সহজপ্রাপ্যতা বৃদ্ধি ও বিস্তার করা এবং রোগ প্রতিরোধ ও সীমিতকরণের জন্য জনগণকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই পথেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।

লেখক- কর্মরত আদ্বদিন হাসপাতাল

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image