• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

শুভ জন্মদিন বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১১:২০ এএম
শুভ জন্মদিন
বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা

মোনায়েম সরকার

১৯৪৭ সাল ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায়ের নাম। প্রায় দুশো বছরের ব্রিটিশ শোষণ-দুঃশাসন থেকে ১৯৪৭ সালে দ্বিখন্ডিত হয়ে মুক্ত হয় সমগ্র হিন্দুস্থান। ওই বছরই ২৮ সেপ্টেম্বর পূর্ব বাংলায় জন্মগ্রহণ করেন সূর্যকন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার আদরের ‘হাসু মণি’। আপাত দৃষ্টিতে পূর্ব বাংলা (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্বাধীন ভূখন্ডের স্বীকৃতি পেলেও এটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের ‘কলোনি’। কিভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের ‘কলোনি’ থেকে বঙ্গবন্ধুর সুদৃঢ় রাজনৈতিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে শেখ হাসিনা তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন। একটি শুদ্ধ, সচেতন, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে সঙ্গত কারণেই তিনি রাজনীতি ঘনিষ্ঠ ছিলেন। 

ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে রাজনীতি শুরু করলেও জাতীয় রাজনীতিতে তার সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছে তেমন ছিল না। কোন পরিস্থিতিতে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হন সেদিনের সেই ইতিহাস যারা প্রত্যক্ষ করেছেন আমিও তাদের একজন। বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের অত্যন্ত দুঃসময়ে শেখ হাসিনা রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। ১৯৭৫ সালের মধ্য আগস্ট ট্র্যাজেডির পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় স্বাধীনতাবিরোধী ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা। 

এ সময় দেশের আইন-শৃঙ্খলা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের উপর নেমে আসে চরম নিপীড়ন-নির্যাতন। কারাগারগুলো কানায়-কানায় ভরে যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতারের ফলে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তো জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশেই প্রবেশ করতে পারেননি। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর প্রাক্কালে শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলে দেশের লাখ লাখ মানুষ তাকে অভ্যর্থনা জানায়। সেদিন বাংলাদেশে অভ‚তপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে বরণ করে নেন বঙ্গবন্ধুর মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। পঁচাত্তর-পরবর্তী কালপর্বে বাঙালি কান্নার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষ যেন কান্নার অধিকার ফিরে পায়। নতুন আশায় বুক বেঁধে নতুনভাবে জেগে ওঠে বাংলার প্রতিবাদী মানুষ।
 
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে শুক্রবার ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বৈরশাসক এরশাদের পুরো শাসনামল জুড়েই আওয়ামী লীগের উপর দমন-পীড়ন চলে। শেখ হাসিনাকেও জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়। আমরা যারা আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী ছিলাম তারাও এরশাদের বন্দিশালায় বন্দি থেকেছি। চোখ বাধা অবস্থায় দিনের পর দিন ক্যান্টনমেন্টে থেকেছি। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বেগবান হলে এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। দেশদ্রোহী জামাতিদের যোগসাজশে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে সীমাহীন দুর্নীতি শুরু করে। মৌলবাদীদের উত্থান ঘটিয়ে  মুজিবকন্যাকে হত্যার ঝুঁকিতে ফেলা হয়। বার বার তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল এসব হামলার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। এই হামলায় ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন শত শত নেতাকর্মী। 

অলৌকিকভাবে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। বিএনপির দুঃশাসনে বাংলাদেশ অস্থির হয়ে উঠলে ১৯৯৬ সালে ঐতিহাসিক বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রথমবারের মতো অধিষ্ঠিত হন তিনি। একুশ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই শেখ হাসিনা দেশের ইতিহাসকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য মনোনিবেশ করেন। সেই সঙ্গে আর্থ-সামাজিক উন্নতি ঘটিয়ে ধীরে ধীরে দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। শেখ হাসিনা হত্যা ও বিচারহীনতার পরিবেশ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার উদাহরণ সৃষ্টি করেন। তার আমলেই জাতির পিতার হত্যাকান্ডের বিচার শুরু হয় এবং ঘাতকেরা বিচারের মুখোমুখি হয়ে প্রাণদন্ডসহ নানা দন্ডে দন্ডিত হয়। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা বলেই সর্বস্তরের জনগণ মনে করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে এদেশের রাজাকার-আলবদর-আল শামস বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়। স্বাধীনতার চার দশক পরে হলেও শেখ হাসিনার সরকারই মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করে সাজা কার্যকর করেছেন।

বাংলাদেশে অনেক সরকারই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন কিন্তু কেউই জাতির পিতা হত্যার বিচার করার কথা ভাবেননি। বরং অনেকেই চেয়েছেন কোনোভাবেই যেন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার না হয়। এ জন্য জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মতো কালো আইন তৈরি করে খুনিদের দায় মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করে প্রমাণ করে গেছেন। এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে তিনিও যুক্ত ছিলেন। শেখ হাসিনা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক ভ‚মিকা রাখেন। বিশ্বের সব দেশেই অন্যায়-অপরাধ হয়। মানুষের অপরাধ প্রবণতার কারণে রাষ্ট্রে অন্যায়-অপরাধ সংঘটিত হতেই পারে। কিন্তু সেই অন্যায়ের প্রতিকার করা সরকারের দায়িত্ব।      

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেউই অন্যায়-অপরাধ করে পার পায়নি। শেখ হাসিনা অন্যায়কারীকে শাস্তি দিতে এতটুকু ছাড় দেন না। তার অনমনীয় মনোভাবের কারণেই বাংলাদেশ আজ অনন্য উচ্চতায় স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার শাসনামলই সবচেয়ে দীর্ঘ এবং উন্নয়নমুখী। শেখ হাসিনা গরিব বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর মতো স্বপ্নের সেতু দেশের টাকায় বাস্তবায়ন করে বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন। কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা বন্দর, রূপসা, কালনা, যমুনা নদীতে বৃহৎ বৃহৎ সেতু সমগ্র বাংলাদেশের চেহারা বদলে দিয়েছে।

শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, শেখ হাসিনার শাসনামলে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সামাজিক খাতেও বাংলাদেশের অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদল হলে দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড মুখ থুবড়ে পড়ে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা দরকার। সাংবিধানিক সংকট তৈরি করে অতীতের স্বৈরশাসন ও সামরিক শাসকগণ যেসব ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিলেন, শেখ হাসিনা সেসব ঘৃণ্য চক্রান্ত ছিন্নভিন্ন করে দেশের সংবিধানকে সমুন্নত করেন এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বাংলাদেশ পরিচালনা করতে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার শাসনামলে সব কিছু না পেলেও অনেক কিছুই পেয়েছে এ কথা আজ আর অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন মধ্যম আয়ের দেশে। অচিরেই আমরা তার নেতৃত্বে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশে নিজেদের জায়গা করে নেবো। শেখ হাসিনা আজ শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই সুনাম অর্জন করেছেন, দেশের মানুষের অকুষ্ঠ ভালোবাসা পাচ্ছেন তা-ই নয়, তিনি আজ বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বৈশ্বিক নানা সঙ্কট নিয়ে তিনি যেভাবে তার অবস্থান জানান দিচ্ছেন তাতে বিশ্বের অন্যান্য নেতারাও শেখ হাসিনাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

জাতিসংঘ, এর অঙ্গসংগঠন ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে জলবায়ু দূষণ, নারী ও শিশু অধিকার, রোহিঙ্গা সমস্যা ও বর্তমান যুদ্ধ-সমস্যা সমাধানে তিনি যেভাবে উচ্চকণ্ঠ হয়েছেন, তাতে বিশ্ব বিবেক জেগে উঠছে। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের জননেত্রী আজ বিশ্বনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। এ কথা ভাবলে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। বঙ্গবন্ধুর পরে বাংলাদেশের আর কোনো রাষ্ট্রনায়ক নিজেকে এত উচ্চতায় আসীন করতে পারেননি। আজ বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একই উচ্চতায় অবস্থান করছেন। যা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, এশিয়া মহাদেশের জন্যও অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা।

জননেত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। তিনি আঁধারভেদী আলোকশিখা। বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের ত্রাতা। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের কোটি কোটি বিপন্ন মানুষের মর্মবাণী আজ উচ্চারিত হচ্ছে তার কণ্ঠে। স্বজন হারানোর চিরবেদনায় কাতর হয়েও তিনি মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার অদম্য পথ চলাই তাকে গন্তব্যের শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছে দিয়েছে। আমি দীর্ঘদিন শেখ হাসিনার পাশে থেকে উপলব্ধি করেছি দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন ভাবনাই তার জীবনের ব্রত। অনেক চড়াই-উৎরাই, জেল, জুলুম, গৃহবন্দিত্ব সহ্য করে তিনি পঁচাত্তর বছরে প্রান্তসীমা অতিক্রম করে ছিয়াত্তরতম বছরে পা রাখছেন। তাঁর জন্মদিনে জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও শুভকামনা।  

মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ, লেখক, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, গীতিকার ও মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image