• ঢাকা
  • রবিবার, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ০৪ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ভিসা চাই না, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২:২৯ পিএম
ভিসা চাই না
সুষ্ঠু নির্বাচন চাই

প্রভাষ আমিন

এ বছরের শেষে বা আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচন ভালো হয়নি। প্রথম নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি, পরের নির্বাচনে নামকাওয়াস্তে অংশ নিয়েছে। তাই সে অর্থে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলকও হয়নি। দেশে-বিদেশে সব মহলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা তাই তীব্র হয়েছে।

বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার এক দফা নিয়ে আন্দোলন করছে। আর সরকারি দল বলছে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যাপারে। শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, সে নিয়ে সবার কৌতূহল। সে কৌতূহলে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি। বুধবার (২৪ মে) রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন প্রথমে টুইট করে তাদের নতুন ভিসা নীতির কথা জানান। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবৃতি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনেও বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি চালুর বিষয়টি তুলে ধরেন।

নতুন ভিসা নীতিতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বিবৃতিতে বলেছেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে— ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার চর্চাকে সহিংসতার মাধ্যমে বাধাদান। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমসহ সবার। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায়, তাদের সবাইকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, তারা কোনও নিষেধাজ্ঞা দেননি। তবে এসব ধারার অধীনে আইনসম্মতভাবে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছেন। বাংলাদেশের জনগণকে এই বার্তা দিতে চেয়েছেন যে তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে এবং এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যেকোনও ব্যক্তিকে এই বার্তা দিতে চেয়েছি যে আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।’

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র স্পষ্টতই বলেছেন, এটি কোনও নিষেধাজ্ঞা নয়। এই ভিসা নীতির মাধ্যমে আসলে বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন আকাঙ্ক্ষাই প্রতিফলিত হয়েছে। তাদের এই আকাঙ্ক্ষার সাথে জনগণের আকাঙ্ক্ষার কোনও অমিল নেই। বাংলাদেশের সব মানুষই একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। বাংলাদেশে একসময় খুব জনপ্রিয় একটি স্লোগান ছিল, আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো। এই আকাঙ্ক্ষাই মানুষ ধারণ করে। তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নিতে চায়। জনগণ যাদের ভোট দেবে, তারাই দেশ পরিচালনা করবে।

বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও যদি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাসের ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনিপ্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারতো, তাহলেই সবচেয়ে ভালো হতো। কিন্তু আমাদের দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ আর অবিশ্বাস এত বেশি যে আমরা যেকোনও মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে বা যেতে চাই। আর রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাসের ফাঁকেই নাক গলানোর সুযোগ পায় বিদেশি শক্তিগুলো। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও বারবার বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়। আন্দোলন, মাঠের শক্তি বা জনগণের ওপর তাদের আস্থা নেই বলেই চলে।

মার্কিন নতুন ভিসা নীতির সাথে আমাদের আকাঙ্ক্ষার কোনও অমিল না থাকলেও এই কথাটি তাদের বলতে হলো, এটাই আমাদের জন্য লজ্জার, গণতন্ত্রের পরাজয়। যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মানবাধিকার আর গণতন্ত্রের ছবক দিচ্ছে; তারা আয়নায় নিজেদের চেহারাটা একবার দেখে নিতে পারে। গত নির্বাচনের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা বিশ্ব ইতিহাসেই বিরল। হুটহাট বন্দুক নিয়ে বেরিয়ে স্কুল, শপিং মল, হাসপাতালে গিয়ে শ্যুটিং প্র্যাকটিস করার মতো হত্যার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রেই ঘটে, বাংলাদেশে নয়। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি যদি, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকা রাখে, তাহলে আপত্তি নেই। দাগ থেকে যদি দারুণ কিছু হয়, তাহলে তো দাগই ভালো।

এটা ঠিক, বাংলাদেশের অনেক মানুষের স্বপ্নের দেশ আমেরিকা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা যাদের কাছে সোনার হরিণ, নির্বাচনপ্রক্রিয়া বিঘ্ন ঘটানোর ক্ষমতা তাদের নেই। তাই নতুন ভিসা নীতিতে তাদের কিছুই যায় আসে না। তবে এটা ঠিক, এই ভিসা নীতি যাদের জন্য প্রযোজ্য, তাদের কাছেও মার্কিন ভিসাটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সামরিক-বেসামরিক আমলা, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবীদের অনেকেই নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। তাদের অনেকের অবৈধ সম্পদ আমেরিকায়, তাদের সন্তান পড়ে আমেরিকায়, অনেকের পরিবার থাকে আমেরিকায়, দেশ থেকে পাচার করা সম্পদের গন্তব্য আমেরিকায়। ভিসা না পেলে তারা বিপাকে পড়ে যাবেন। তাই সারাজীবনের অর্জন সুরক্ষিত করার স্বার্থেই তারা আগামীতে একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবেন নিশ্চয়ই।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে তাদের ভিসার পাল্লায় মেপেছে, এই অপমানটা আমি নিতে পারছি না। আমি জীবনে একবারই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছি, তাও তাদের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে। সেও ১২ বছর আগে। এরপর আর যাইনি, মানে যাওয়ার চেষ্টাও করিনি, সামর্থ্যও হয়নি। আর জীবনে না গেলেও ক্ষতি নেই, আফসোসও নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়ার বা বিঘ্ন ঘটানোর সামর্থ্য আমার নেই। আমার যেটুকু সামর্থ্য, সুযোগ; তা দিয়ে আমি একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কাজ করে যাবো। আমার মার্কিন ভিসা চাই না, আমরা চাই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক, মানবাধিকার সমুন্নত থাকুক, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকুক।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image