• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ৩০ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের ১১৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নেও ঐতিহ্য ফিরেনি


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ০১ জানুয়ারী, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১১:০৬ এএম
পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের ১১৮টি প্রকল্প ঐতিহ্য
প্রকল্প বাস্তবায়নেও ঐতিহ্য ফিরেনি পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের

কুমিল্লা প্রতিনিধি: বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমান অবস্থা দেখলে অনেকটাই হাস্যকর ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। বিগত ১ যুগ ধরে বাংলাদেশ  রেলওয়ের ১১৮টি নানাহ প্রকল্পে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যায় করলেও বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো  (রেলওয়ের অতীত ঐতিহ্য  ফিরে আনতে পারেনি। তবে জনবল কাঠামো বাড়াতে এবং বিভিন্ন দপ্তরে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির মত ভাইরাস কিছুটা কমাতে সক্ষম হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন দপ্তরের একাধিক সুত্র জানায়, বর্তমান সরকার  রেলওয়ের  বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় ১লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকায় ৩৯টি নানাহ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। এর পূর্বে গত ১ যুগ ধরে প্রায় ২১হাজার কোটি টাকার ৭৯টি নানাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে । তবুও রেলওয়ের উন্নয়নের গতিতো বাড়েনি বরং আগের ছেয়ে আরও নিম্নমুখী।

বিশেষ করে যে সব খাতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সেগুলো মুলতঃ বাংলাদেশ রেল বিভাগকে আরো অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে। যেমন- নতুন করে রেল লাইন নির্মাণ, রেল লাইন ভেঙ্গে নতুন করে স্থাপন, মিটার গেজকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর, ব্রডগেজ লাইন বসানো, জনবল নিয়োগ বানিজ্য, কালো বিড়ালের উৎপাত ও ড্রেমু ট্রেন চালানো সহ নানাহ উদ্দ্যোগ রেলের ঐতিহ্য ফিরে আনতে পারেনি। অথচ রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং এবং পুরানো ব্রিজগুলোর উন্নয়নে কারো মাথা ব্যাথা নেই। এ ছাড়া রেল পথে রয়েছে স্লিপার-পাথর সংকট, ট্রেন পথের ট্রেন লাইনচ্যুত সহ অহরহ নানাহ ঘটনাতো আছেই। ২হাজার ৯শ ৫৫ কিঃ মিঃ রেল পথের মধ্যে ২ হাজার ৫শত কিঃ মিঃ জরা জীর্ন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ রেলওয়ে ব্রিজ ঝুকিপূর্ণ এবং ৫শতাধিক রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত রয়েছে।

তবে গতবছর রেলক্রসিংগুলোতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভবন নির্মাণ এবং জনবল নিয়োগ দিলেও অনিয়ম ও দূর্নীতি বেড়েছে। এ ছাড়া পূর্বাঞ্চলীয় রেল পথে কয়েক দফায় ট্রেন দূর্ঘটনা, টাকা চুরি, বিভিন্ন অভিযোগে তদন্ত কমিটির পকেট বানিজ্য, ট্রেনের টিকেট বিক্রির ক্ষেত্রে নয়ছয়, পেনশান ভোগিদের হয়রানি, কর্ম-কর্তা- কর্মচারীদের কোন জবাবদিহিতা নেই, বিদেশ থেকে আনা বগি-ইঞ্জিন নিয়ে বির্তক ছাড়াও নানাহ ঘটনা বিদ্যমান।

অপরদিকে স্থানীয় রেলওয়ের কর্মকর্তাদের একাধিক সুত্র জানায়, ঢাকা-লাকসাম- চট্টগ্রাম, লাকসাম-চাঁদপুর, লাকসাম-নোয়াখালী ট্রেন রুটের ৩টি লাইনে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলো দিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ পারাপারসহ অসংখ্য পন্যবাহী ছোট-বড় নানাহ যানবাহন চলাচল করছে। অথচ মরন দানব দূর্ঘটনা নিরসনে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগের নীরব দর্শকের ভূমিকা যেন ভাবিয়ে তুলেছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে।

আবার ওই ৩টি  শাখা লাইনের কোথাও কোথাও জেলা- উপজেলা পরিষদ, এলজিইডি, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ একাধিক দাতা সংস্থার অর্থায়নে রেললাইনের উপর দিয়ে কাঁচা-পাকা অসংখ্য সড়ক নির্মান করা হলেও কিছু কিছু লেভেল ক্রসিংগুলো এখন জনচলাচলে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ওই সড়কগুলো নির্মাণে বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

বিশেষ করে প্রতি কিলোমিটার রেললাইনে একটি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। পূর্বাঞ্চলে প্রায় ১ হাজার ২’শ ৩০টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে প্রায় ৭’শ ১৯টি অবৈধ। মাত্র ৫’শ১১টি বৈধ লেভেল ক্রসিং থাকলেও অনেকাংশে গেইট কিপারসহ বেরিকেট সরঞ্জাম নেই। ইতি মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় দপ্তর লেভেল ক্রসিংগুলোকে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে বৈধতা দিতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রথম পর্যায়ে অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ন লেভেল ক্রসিংয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে ১ হাজার ৩৮ জন গেইটম্যান নিয়োগ দিয়েছে।

সুত্রটি আরও জানায়,  ঢাকা-লাকসাম-চট্টগ্রাম লাইনে বৈধ-অবৈধ প্রায় ৫ শতাধিক, লাকসাম-নোয়াখালী লাইনের ৫০ কিলোমিটার রেলপথে প্রায় অর্ধশতাধিক লেভেল ক্রসিং কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ৪০টি অবৈধ, লাকসাম-ফেনী পর্যন্ত রেললাইনে প্রায় শতাধিক ও লাকসাম-চাঁদপুর লাইনে প্রায় অর্ধশতাধিকসহ ৩টি লাইনেই লেভেলক্রসিংগুলো বিদ্যমান থাকলেও সিংহভাগই অবৈধ এবং গেইটম্যান নেই। আবার লাকসাম রেলওয়ে জংশনের প্রায় ৩’শ গজ উত্তরে ৮/১০টি রেললাইনের উপর দিয়ে পৌরসভার অর্থায়নে পাকা সড়কটি অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষসহ অসংখ্য যানবাহন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনও টনক নড়েনি। এ এলাকায় রয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একাধিক বিভাগীয় দপ্তর, লোকোসেডসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা কেন্দ্র।

ঢাকা-লাকসাম-চট্টগ্রাম রেললাইনে মঞ্জুরীকৃত বৈধ লেভেল ক্রসিং ২’শ৪২ টি গেইট কিপার থাকলেও একাধিক ক্রসিংয়ে গেইটম্যান নেই। এছাড়া বৈধ লেভেল ক্রসিং ৪’শ ৩৬ এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের সীমানায় ২’শ ৭৩ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ১’শ৬১টি। ওই লাইনে ৮’শ ১৪টি অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে এর মধ্যে ঢাকায় ৪’শ৩১টি এবং চট্টগ্রামে ৩”শ৮৩টি বিদ্যমান।  

সুত্রগুলো জানায়, ওই ৩টি রেলওয়ে লাইনে গত ৫ বছরে স্বাভাবিক- অস্বাভাবিক দূর্ঘটনার হিসাব নিলেই পাওয়া যাবে মরন দানবের লোমহর্ষক চিত্র এবং কয়েক’শ মানুষের প্রানহানীসহ কয়েক কোটি টাকার সরকারী-বেসরকারী সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিবরন। তবুও থেমে নেই দূর্ঘটনা। অথচ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তারা এখনও নিরব দর্শক।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও সদ্য মন্ত্রীসভা একনেকে পাশকৃত কুমিল্লা বিভাগীয় শহর ছাড়াও দেশের দক্ষিন-পূর্বাঞ্চলের অসংখ্য জেলা-উপজেলার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ওইসব লেভেল ক্রসিং। ওই লাইনগুলোর লাকসাম পৌরশহর ও উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকির চিত্র আরো ভয়াবহ।

এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরের কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও কোন জবাব নেয়া সম্ভব হয়নি তবে কিছু কিছু  ক্ষেত্রে একাধিক দপ্তরের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ভিন্ন ভিন্ন মতামত পাওয়া গেলেও বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই।

ঢাকানিউজ২৪.কম / মশিউর রহমান সেলিম/কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image