নিজস্ব প্রতিবেদক : মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আন্দোলন। আমরা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি কিন্তু সেই স্বাধীনতা রক্ষা করেছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গুলি করা পুলিশ বাহিনীর নাম ও পোশাক পরিবর্তন করতে হবে। দীর্ঘ ১৬ বছরের দুঃশাসনকালে সবচেয়ে বেশি নিপীড়ণ নির্যাতন করা পুলিশ জনগণের কাছে আতংকের নাম, তাই জনগণকে আতংকিত করে এমন কোন বাহিনী থাকবে না। শিক্ষার্থীদের রক্তস্নাত এই অর্জন কোনভাবেই বিফলে যেতে দিবো না।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর সেগুন বাগিচা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, বৈষম্য, দুঃশাসন, অন্যায়-অবিচার,নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছাত্র জনতার যে রক্তস্নাত বিজয় তা সুসংহত রাখতে হবে। কোটা পদ্ধতি সংস্কারের আন্দোলন ছাত্র সমাজের একটি যৌক্তিক ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বৈষম্যমুক্ত ও মেধা ভিত্তিক দেশ গঠনের লক্ষ্যেই এই আন্দোলন গড়ে উঠে। পরবর্তীতে ছাত্রদের সংগ্রামের সাথে শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী,শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনতা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। ফলশ্রুতিতে আন্দোলন বিস্ফোরিত হয়ে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমগ্রজাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রমান করেছে বাংলাদেশের জনগণ অন্যায়ের কাছে কখনও মাথা নত করে না। এই আন্দোলনে প্রতিদিন ছাত্র জনতার রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। শিশু সহ শত শত ছাত্র জনতা খুন হয়েছে, হাজার হাজার গুলিবিদ্ধ হয়েছে। লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দানবীয় স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে দীর্ঘ দুঃশাসনের অভিশাপ থেকে সমগ্র জাতি অভিশাপ মুক্ত হয়েছে। ছাত্র জনতার এই বিজয় গণতন্ত্রের বিজয়।
তিনি বলেন, একদল দুষ্কৃতিকারী ছাত্র জনতার বিজয়ে কালিমা লেপনের ষড়যন্ত্র করছে। দুষ্কৃতিকারীদের বর্বরতা ও হীনস্বার্থ ঠেকাতে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ী ও উপাসনালয়ে ভাংচুর ও অগ্নিকান্ড, নানা জায়গায় চাঁদাবাজি ও লুটতরাজ বন্ধে বিশেষভাবে ছাত্র সমাজ ও জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। নাশকতা সৃষ্টি করা অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের কর্মকান্ড। ছাত্র জনতার এই ঐতিহাসিক বিজয় নস্যাত করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। পরাজিত শক্তি অরাজকতা সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে রক্তের বিনিময়ে কষ্টার্জিত সফলতাকে নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে, অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে নিভৃত করতে হবে। দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহবান জানাচ্ছি। ছাত্র জনতার পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে শামিল সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্র জনতার বিজয় অক্ষুন্ন রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বে গঠিত হতে যাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আস্থা আছে। দীর্ঘ দুঃশাসনকালে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সহ সবকিছু ধ্বংস করেছে, আমাদের প্রত্যাশা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সবকিছু পুনর্গঠন হবে যেখানে সমগ্র জনগণের জন্য সুযোগের সমতা ও মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর দেশকে স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে গণফোরামের প্রস্তাব সমূহ -
১. বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সকল শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে।
২. শহীদ পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যায়ভার বহন করতে হবে।
৩. অবিলম্বে জাতীয়ভাবে গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করতে হবে।
৪. বিচারবিভাগ সহ প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজাতে হবে।
৫. পুলিশ বাহিনীর নাম ও পোষাক পরিবর্তন সহ উক্ত বাহিনীকে দ্রুত পুনর্গঠন করে সক্রিয় করার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
৬. বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, পশাপাশি সকল ছাত্রাবাস খুলে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
৭. বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শেখ হাসিনাকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং গনহত্যার সাথে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সহ পেটোয়াবাহিনীর সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৮. অগ্নিসংযোগ,দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ভাংচুর, লুটপাট ও সংখালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং রাষ্ট্রকে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. সমস্ত অর্থপাচার ও দুর্নীতির দ্রুত তদন্ত ও বিচার করতে হবে।
১০. সাধারণ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।
১১. দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে।
রাষ্ট্রের সমগ্র জনতা নিজ নিজ অবস্থান থেকে তরুণ প্রজন্মের বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মানে এগিয়ে আসতে হবে নতুবা ছাত্র জনতার রক্তস্নাত বিজয় ম্লান হয়ে যাবে।
আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি- অ্যাডভোকেট এ.কে.এম. জগলুল হায়দার আফ্রিক ও অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের। উপস্থিত ছিলেন গণফোরাম সভাপতি পরিষদ সদস্য- বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকার, আব্দুল হাসিব চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান ফারুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লতিফুল বারী হামিম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব মির্জা হাসান, তথ্য ও গণমাধ্যম সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক আব্দুল হামিদ মিয়া, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক তাজুল ইসলাম, ছাত্র সম্পাদক সানজিদ রহমান শুভ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিবুর রহমান বুলু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ জাহান সুমন, ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান খোকন সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।
ঢাকানিউজ২৪.কম / জেডএস/সানি
আপনার মতামত লিখুন: