
মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, নাটোর প্রতিনিধি: শস্য ভান্ডার খ্যাত নাটোরের চলনবিলে চলতি মৌসুমের ইরি-বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ধুম পড়ে গেছে। চারিদিকে বাতাসে ভাসছে পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধ। পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধে মাতোয়ারা কৃষক টেনে যাচ্ছে মহিষের গাড়ি। মুঠি মুঠি ধান কেটে তুলতে হবে গোলায়, কৃষকের ধ্যান যেন এই। তাদের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। সেই পাকা ধান সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
তবে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি নিয়ে চরম শঙ্কায় রয়েছে চাষিরা। তাই ধান কাটা ও মাড়াই কাজে বাড়ির ছেলে-বৌ, মেয়ে, নাতি-নাতনিদের চলছে নাভিশ্বাস।
অন্যদিকে, ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ফলে দ্রুত ধান কাটা ও মাড়াই করতে চড়া মঞ্জুরি দিয়ে শ্রমিক নিতে হচ্ছে।
চলনবিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিংড়া উপজেলার চকসিংড়া, শোলাকুড়া, কলম, সাঐল, সোহাগবাড়ি, চৌগ্রাম, জামতলী, শেরকোল, সাঁতপুকুরিয়া এলাকায় বিলজুড়ে মাইলের পর মাইল পাকা ধান কাটছেন হাজার হাজার শ্রমিক ও চাষিরা।
অনেকে ধান কাটার পর আটি বেঁধে জমিতে রাখছেন। শ্রমিকরা বড় বড় আটির বোঝা বেঁধে মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার মহিষের গাড়িতে করে ধান নেওয়া হচ্ছে চাষিদের বাড়িতে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৫৮ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬১ হাজার ২০৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এবার ৪ লাখ ৩২ হাজার ৪০৫ মেট্রিক বোরো ধান উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। গত বোরো মৌসুমে ৬০ হাজার ৭৫০হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে।
চলনবিলের কৃষক মুনছুর রহমান বলেন, এ বছর বোরো ধানের ভাল ফলন হয়েছে। ৬ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় বেশ বিপদে ছিলাম। অন্যদিকে কখন যে ঝড়-বৃষ্টি হয়। পরে শ্রমিকসহ ছেলেদের নিয়ে ধান কাটতে নেমেছি। এখন মাড়াই করে ঘরে তুলতে পারলে প্রাণে বাঁচি।
সিংড়ার কলম এলাকার কৃষক আব্দুল করিম বলেন, যে কোনো সময় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। সে কারণে ফসল দ্রুত কাটা হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বৃষ্টি হলে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এখন চলনবিলের সবাই ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত। এ সোনালী ধানই আমাদের সারা বছরের অন্ন। তা যদি নষ্ট হয়ে যায়, মানুষের কষ্টের শেষ থাকবে না। সবার চোখে-মুখে স্বপ্ন এ ধানের ওপর। তাই দ্রুত সবাই পাকা ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
চৌগ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, এ বছর ২০ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন করেছিলাম। ফলন আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে বেশ শ্রমিক সংকটে ছিল। এখন পর্যাপ্ত শ্রমিক রয়েছে। প্রতিদিন ৭শ' টাকা দিনে কাজ করছেন। অনেক ধানের বিনিময়ে কাজ করছেন। ধানের দাম ঠিক থাকলে আমরা কিছুটা লাভবান হতে পারবো।
বাঘা থেকে ধান কাটতে আসা শ্রমিক রবিউল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহে আগে চলনবিলে ধান কাটতে এসেছি। প্রতিদিন ৭শ' টাকা রোজে কাজ করছি। সেই সাথে রাতে থাকা ও তিনবেলা খাবার
মালিক দেয়। প্রতি বছর চলনবিলে আমরা ১৫/২০ শ্রমিক ধান কাটতে আসি। প্রায় ৮০% ধান পেকে গেছে। বাকী ধান কাটকে কাটতে পেকে যাবে।
লালপুর থেকে আসা শ্রমিক নয়ন শেখ বলেন, প্রতি বছর ধানের বিনিময়ে এ বিলে ধান কাটতে আসি। ১৫/২০ মণ ধান পেয়ে থাকি। এখনো ২০ দিনের মতো ধান কাটবো। সারা বছরের সংসারের চালের খরচ এক মাসে নিয়ে যাই। এ বছর ধানের ভাল ফলন হয়েছে। তবে প্রচন্ড গরমে বেশ অস্তির হয়ে যাই।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, চলতি মৌসুমে নাটোর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬১ হাজার ২০৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
৪ লাখ ৩২ হাজার ৪০৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করছি। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইরি-বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। চলতি বছর সরকার ৩০ টাকা কেজি দরে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: