ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ সপ্তাহজুড়ে ঠাকুরগাঁওয়ে পেট্রল সংকট দেখা দিয়েছে। ফিলিং স্টেশনগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না পেট্রল। কোনো ঘোষণা ছাড়াই পাম্পে এসে পেট্রল না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন পেট্রলনির্ভর বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলায় জ্বালানি তেলের সংকটের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে জ্বালানি তেলের সংকট তৈরি করে থাকেন তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর পেট্রল পাম্প কর্তৃপক্ষ এবং খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ডিপো থেকে পেট্রল সরবরাহ বন্ধ থাকায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কবে নাগাদ সমস্যার সমাধান হবে তা কেউ বলতে পারছেন না।
সংকট শুরুর পর থেকে পেট্রল না থাকায় বাধ্য হয়ে বিকল্প হিসেবে অকটেন ব্যবহার করছিলেন আরোহীরা। তবে বৃহস্পতিবার (৬ মে) থেকে কিছু ফিলিং স্টেশনে অকটেন নেই জানিয়ে স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে দ্রুতই অকটেন সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মোটরসাইকেল চালক সোহান বলেন, ‘ঈদের তিনদিন আগ থেকে পেট্রল পাচ্ছি না। কী কারণে পেট্রল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে তার সঠিক উত্তর দিতে পারছে না ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ। ফলে আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।’
পেট্রল সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের ফিংলি স্টেশনের ম্যানেজার রুহুল আমিন বলেন, ‘ডিপো থেকে কী কারণে পেট্রল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে তা আমার জানা নেই। পেট্রল না দিতে পারায় আমাদের অনেক কাস্টমার ফিরে যাচ্ছে। এ সমস্যা ঠাকুরগাঁওয়ের সব ফিলিং স্টেশনেই। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।’
কিছু বড় বড় গ্যালন নিয়ে চৌধুরী ফিলিং স্টেসনে এসেছেন প্রাইভেটকার চালক সৌরভ। গ্যালন নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি পেট্রলে গাড়ি চালাই। তবে পেট্রল না থাকায় এতদিন অকটেন ব্যবহার করছিলাম। কিন্তু অনেক পাম্পে এখন অকটেনও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গাড়ির ট্যাংক ফুল করে গ্যালনেও স্টক করে নিচ্ছি। কারণ অকটেনও যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে গাড়ি বাসায় বসে থাকবে।’
অকটেনের সংকট দেখিয়ে স্টেশন বন্ধ করা বাঁধন কাঁকন ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার রশিদুল ইসলাম জানান, ঈদের আগেই পেট্রল শেষ হয়ে গেছে। এতে অকটেনের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং দ্রুত শেষ হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ডিপোতে এখন পেট্রল দিচ্ছে না। গাড়িতে শুধু অকটেন আনতে গেলে খরচ বেশি পড়ছে। তাই অকটেন সরবরাহ বন্ধ রেখেছি। ডিপোতে অকটেনের কোনো সংকট নেই।’
মেসার্স সুরমা ফিলিং স্টেশনের মালিক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পেট্রল সরবরাহ না দিতে পারায় এবার ঈদে চরম ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। ডিপো থেকে সরবরাহ বন্ধ থাকায় আমরা বিপাকে পড়েছি। তবে আশা রাখি খুব শিগগির এর সমাধান হবে।’
ঠাকুরগাঁও পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনামুল হক বলেন, জেলায় ৩৬টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২৪টি, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় দুটি, হরিপুর উপজেলায় দুটি, রাণীশংকৈল উপজেলায় চারটি এবং পীরগঞ্জ উপজেলায় চারটি ফিলিং স্টেশন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেলায় দৈনিক পেট্রল, অকটেন ও ডিজেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার লিটার। এরমধ্যে পেট্রল ২৩ হাজার লিটার, অকটেন সাড়ে ১৬ হাজার লিটার ও ডিজেলের চাহিদা ৫০ হাজার লিটার। এখন জেলায় প্রায় ১৪ হাজার লিটার পেট্রল কম সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে পেট্রলের এ সংকট তৈরি হয়েছে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / গৌতম চন্দ্র বর্মন/কেএন
আপনার মতামত লিখুন: