• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৫ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ; ৩০ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

কার্তিকেও তিস্তায় বন্যা- আর কত রেড এলার্ট হবে?


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, ০৬:৩০ এএম
তিস্তায়,  বন্যা
ছবি: তিস্তায় বন্যা সংগৃহীত।

প্রফেসর ড. মো: ফখরুল ইসলাম: গতকাল থেকে ডালিয়া ব্যারেজে পয়েন্টে তিস্তা নদীতে নতুন করে আবার বন্যা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে তিস্তায় এ বছর আট বার বন্যা হলো। বড় অসময়ে অর্থাৎ, অক্টোবরের ২০ তারিখে চারদিকে সবুজে ভরা থোড় আসা ধানক্ষেত, আলুর জন্য তৈরী জমি তলিয়ে গেছে। কার্তিক মাসে আগাম ইরি-আমনের ফুল ধরেছে। কোথাও কোথাও পাক ধরেছে হাইব্রীড ধানের শীষে। শাক-সব্জি, তামাক লাগানোর জন্য কৃষকরা জমি তৈরীর তৎপরতা শুরু করেছে। কেউ কেউ শীতের আগাম আলু, সব্জি লাগিয়েছে। এরই মাঝে হঠাৎ পানির ঢল এসে হাজির। নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে দশ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চারদিকে মন খারাপ করা খবরে মনটা এমনিতেই ভারী। তার ওপর হঠাৎ বন্যার সংবাদে মনটা আরো বেশী বিষিয়ে উঠছে। 

করোনা পরবর্তী ধাক্কা সামাল দিতে না পেরে এমনিতেই বহু মানুষ মানসিক সমস্যার চাপে ভূগছেন। করোনা এখনও চলে যায়নি, কিন্তু মাস্কের ব্যবহার প্রায় উঠেই গেছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিসের ব্যাথার কামড় শেষ হয়নি। কিন্তুু মানুষ আবারো অসতর্কভাবে দিনাতিপাত শুরু করেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মাদকের ঘনঘটার মধ্যে আগের বন্যায় পানিবন্দী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উঠানের কাদা না শুকাতেই খুলে দেয়া হয়েছে। ব্যক্তি মানুষের চলাচল বেড়ে গেছে। গতি বেড়েছে প্রতিটি কর্মযজ্ঞে। কিন্তু আবার হঠাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের হুমকি পাহাড়ি ঢলের প্রবল পানির চাপ নিয়ে তিস্তা নদীতে বান ডেকে ওঠায় এই মুহূর্তে সেখানকার মানুষ ও কৃষকদের কপালে বড় চিন্তার বলিরেখা দেখা দিয়েছে।

পনির তোড়ে তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাড বাই-পাস সড়ক উপচে যাবার পর ধ্বসে গেছে। গত ১৮ তারিখে রাতে নদীতে পানি বেড়ে গেলেও কেউ ততটা আমলে নেননি। অক্টোবর ১৯ তারিখে সকাল ৮ টায় বাড়ির রাস্তা উপচিয়ে নদী পাশ্ববর্তী বাড়িগুলোর উঠানে পানি দেখেতে পেয়ে অনেকে অবাক। সাধারনত: এত দ্রুত বাড়িতে পানি ঢুকে না। কিন্তু এবারের ঢল বেশ প্রবল। সকালেই লালমনিরহাট, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামের তিস্তা তীরবর্তী ১০টি ইউনিয়নের ২৬টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। বেশী ক্ষতি হয়েছে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলা। কারণ, ফ্লাড বাইপাসটি সেদিকে অবস্থিত। তাই বন্যা বন্যা প্রতিরোধের কোন উপায় না দেখে কর্তৃপক্ষ রেড এলার্ট জারি করেছেন। 

বেশ ক’দিন ধরে তিস্তার উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হলেও ছুটির কারণে পানি প্রবাহের সঠিক তথ্য সংরক্ষণ করা হয়নি। সতর্কতাও জারি করা হয়নি। পানি বিপদসীমার ৭০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করলে ফ্লাড বাই-পাস সড়কে উপচে ভাটির দিকে ছুটতে থাকে পানি। সংগে ফ্লাশ-ফ্লাডের গতিতে মানুষের বাড়ি ও ফসলি জমিতে ঢুকে যায়। শুরু হয় অকাল বন্যা। যার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। এটাই বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।

ভারতের বিহারে ক’দিন আগে থেকেই লঘুচাপ চলছে। সেজন্য সেখানে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি আসাম, সিকিম নাগাল্যান্ড প্রভৃতিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটেছে। তিস্তা নদী উজানের এত পানির চাপ সহ্য করতে না পারায় সিকিমের কয়েকটি ব্যারেজ সহ জলপাইগুড়ি জেলার গাজলডোবা ব্যারেজের সকল জলকপাট খুলে দেয়ায় প্রবল বেগে বাংলাদেশের তিস্তা নদীতে পানি ঢুকে গেছে। লঘুচাপের প্রভাবে ঢাকা সহ আমাদের দেশের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। বৃষ্টি হচ্ছে প্রায় সারা দেশে । গতকাল ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

স্রোতের তীব্রতায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারেজের ৬১০ মিটার ফ্লাড বাইপাসের ৩০০ মিটার ভেঙ্গে গেছে। টানা বৃষ্টিতে তিস্তাপাড়ের জনজীবনে নেমে এসছে করুণ অবস্থা। কৃষকরা বলছেন- ধান, আলুর আবাদ নষ্ট হয়ে গেলে সেখানে অভাব বেড়ে যাবে। বার বার অসময়ে বন্যা এবং আগাম সতর্ক বার্তার তথ্য না পাওয়ায় কৃষকরা খুব হতাশা ব্যক্ত করেছে। 

তিস্তার অসময়ে বন্যা অনেকটাই মনুষ্যসৃষ্ট। কারণ, কোনরকম তথ্য বা সতর্কবার্তা প্রদান ছাড়াই সীমান্তের ওপাড়ে উপরের ব্যারেজের সকল জলকপাট হঠাৎ খুলে দেয়া হয়। এর ফলে নিম্ন অববাহিকায় বসবসরত আমাদের দেশের মানুষ উঠতি ফসল, গবাদিপশু নিয়ে বিপদে পড়ে যায় বারংবার। এটাই এখন তিস্তাপাড়ের মানুষের নিয়তি। এটা লাঘবে উজানের অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলের তথ্য দ্রুত গতিতে পাবার ব্যবস্থা করে ভাটির মানুষকে সতর্কবার্তা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। ইন্টারনেটের যুগে দ্রুত আধুনিক ব্যবস্থায় আবহাওয়ার সতর্ক বার্তা আদান-প্রদান করতে না পারলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। সমুদ্র সাইক্লোনের মত আগাম তথ্য মাইকিং করে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সকল নদীপাড়ের মানুষদের জন্যও নিতে হবে। বিশেষ করে যেসব সীমান্তে পাহাড়ি নদীতে ফ্লাশ-ফ্লাড ও হঠাৎ বন্যা হয় সেগুলোতে এসব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তিস্তা নদীতে বার বার ঘটা বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও উজান থেকে হঠাৎ চলে আসা অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণের জন্য তিস্তার চরাঞ্চলে বৃহৎ জলাধার নির্মাণ করার পরিকল্পনা চীনের সাথে হাতে নেয়া আলোচিত তিস্তা পূনর্জীবন প্রকল্পে বলা হয়েছে।

তিস্তা সমস্যা আমাদের দীর্ঘদিন ধরে ভোগাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় বসবাসরত মানুষের দু:খ-কষ্ট লাঘবে চীনের সাথে হাতে নেয়া আলোচিত তিস্তা পূনর্জীবন প্রকল্প শুধু কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে এবছর থেকেই কাজ শুরু করে দিতে হবে।

*লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন, সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান। E-mail: fakrul@ru.ac.bd

ঢাকানিউজ২৪.কম / মো: জাহিদুল ইসলাম জাহিদ।

আরো পড়ুন

banner image
banner image