• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১২:২৮ পিএম
আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিউজ ডেস্ক : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের High-level week চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোট ৮টি উচ্চ পর্যায়ের সভা ও সাইড-ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া, রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ১২টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন। 

এ বছর সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য ছিল A Watershed moment: Transformative Solutions to interlocking challenges।করোনাভাইরাস মহামারি ও বিশ্বে চলমান বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন দেশে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি হয়েছে। নতুন এ সংকটের ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

এ প্রেক্ষাপটে, এবারের সাধারণ অধিবেশনে কোভিড-১৯ মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, বহুপাক্ষিকতাবাদ, বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা, বৈশ্বিক সংকটের মুখে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জ, সংকট মোকাবিলায় উপযুক্ত তথ্য-প্রযুক্তির অবকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনায় গুরুত্ব পায়। 
গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে ভাষণ প্রদান করেন। 

কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে সৃষ্ট খাদ্য ও জ্বালানি সংকট এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তির জন্য অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে অধিক পারস্পরিক সংহতি প্রদর্শন করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এ সকল সংকটের কারণে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট ও বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। 

সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ওপর গুরত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত শান্তি ও উন্নয়নভিত্তিক পররাষ্ট্র নীতি বর্তমান সংকট নিরসনে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। 

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং সাফল্যের কথা তুলে ধরে অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু কার্যক্রমের প্রসারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানান। প্রযুক্তির ব্যবহারে সকলের ন্যায্য ও সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত বিভাজন দূর করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। 

বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ কার্যক্রমে বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরেন। মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।  

তিনি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে এক মিলিয়নের বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগ কোনটিই এখনও সফল হয়নি বলে উল্লেখ করেন। মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চলমান সংঘাত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে দুরূহ করে তুলেছে। 

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানান। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনের সভাপতি সাবা করোসির আমন্ত্রণে বিশ্বের নারী নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে আয়োজিত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। 

সভায় তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীদের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে নারীর সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, নারী নেতৃত্ব গঠন ও প্রসার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়াও, লিঙ্গসমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন। 

২১ সেপ্টেম্বর তিনি টেকসই আবাসন বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড-ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন। সভায় টেকসই আবাসন নিশ্চিতে লক্ষ্যে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য যেমন- গৃহহীন ও ভূমিহীন জনগণের জন্য ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’, গ্রামীণ জনগণের উন্নয়নের জন্য ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ উদ্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে 

-২-
বাস্তুচ্যুতদের জন্য আবাসন উদ্যোগ ইত্যাদি তুলে ধরেন। এছাড়া Global Crisis Response Group (GCRG) এর চ্যাম্পিয়ন হিসেবে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করেন। বৈশ্বিক আর্থিক সংকট মোকাবিলায় G-7, G-20, OECD, IMF, World Bank-কে আরো জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যেসব সুনির্দিষ্ট রাজস্ব ও আর্থিক নীতি গ্রহণের কথা তিনি তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে একটি রিসেপশনে অংশগ্রহণ করেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তিনি বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী Antimicrobial Resistance (AMR) বিষয়ে ‘One Health Global Leaders Group on Antimicrobial Resistance (AMR)’- শীর্ষক গ্রুপের সহ-সভাপতি হিসেবে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করেন।

একই দিন প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত একটি উচ্চপর্যায়ের সাইড-ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, গাম্বিয়া এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে এই সভা আয়োজন করে। এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে সৌদি আরব, তুরস্ক, গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ এবং যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী বক্তব্য দেন। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনি ৫টি প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবসমূহ হলো:
রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তা প্রদান করা; আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও জাতীয় আদালতসহ আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দায়ের করা মামলায় সমর্থন করা; জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা; আসিয়ানের পাঁচ-দফা ঐক্যমতে মিয়ানমারের অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করা এবং মিয়ানমারে জাতিসংঘসহ মানবিক সহায়তাকারীদের নির্বিঘ্নে প্রবেশ নিশ্চিত করা।

একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা US-Bangladesh Business Council-এর আয়োজনে একটি উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এ বৈঠকে তিনি তথ্য প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, চিকিৎসা শিল্প, সামুদ্রিক শিল্প, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বেশ কয়েকটি হাই-টেকপার্কসহ বিদ্যমান অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগের জন্য মার্কিন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানান।

এ ছাড়াও, এবারের অধিবেশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রপতি Borut Pahor, ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি Guillermo Lasso, কসোভোর রাষ্ট্রপতি Vjosa Osmani-Sadriu,কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী Hun Sen,জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার Filippo Grandi,আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর Karim A.A. Khan QC, ইউএন হ্যাবিট্যাট-এর নির্বাহী পরিচালক Maimunah Mohd Sharif,আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IOM)এর মহাপরিচালক António Vitorino, জাতিসংঘের High Representative Rabab Fatima, Global Affairs, Meta-এর প্রেসিডেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী Nick Clegg, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর Klaus Schwab এবং জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস। এ সকল দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, সাংসদ, সচিববৃন্দ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

এবারের জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ গুরুত্বপুর্ণ সকল সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ৭৭তম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন আরো সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করবে বলে তিনি আশাবাদী।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image