• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ১৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

হাওড়ে মিলছে না দেশীয় প্রজাতির মাছ


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ২৮ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৮:০২ পিএম
আশুগঞ্জ, হবিগঞ্জ চালান করে দেয়
দেশীয় প্রজাতির মাছ

বিজয়কর রতন, মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধ:  বিস্তীর্ন হাওড় অঞ্চলের অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, ইটনা, হবিগঞ্জের আজমেরিগঞ্জ, লাখাই, বানিয়াচং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, সরাইল ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলছে।

একসময়ে এ হাওড় উপজেলাগুলোতে দেশীয় মাছ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে জাতীয় পর্যায়ের বাজারজাতসহ পর্যাপ্ত মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হতো। এখন আর তা হয় না বললেই চলে। মাছের দুর্মূল্য ও পাওয়া না যাওয়ায় এ হাওড় উপজেলাগুলোর সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টি সাধনে ব্যর্থ হচ্ছে। অভিজ্ঞ জেলে ও গণ্যমান্য লোকজনের ভাষ্য, হাওড় উপজেলা থেকে ৫০ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে।

একসময়ে দেশের মৎস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত হাওড় উপজেলাগুলোতে অগণিত নদী বিল বাদার হাওড় খালে পরিপূর্ণ ছিল। মিঠা পানিতে পরিপূর্ণ এ উপজেলায় প্রায় ২৫০ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত বলে জানা গেছে। মাছের জন্য সুপ্রসিদ্ধ এই হাওড় উপজেলায় দেশ-বিদেশের লোকজন এসে মাছ শিকার এবং মাছের তৈরি সুস্বাদু খাবার খেয়ে পরিবারের লোকজনের জন্য মাছ নিয়ে যেত।

 নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস খালবিল ভরাট করে কৃষিজমি অথবা বাড়িঘর তৈরি এবং জলমহালগুলোতে ইজারাদারদের স্বেচ্ছাচারিতা, মাছের অভয় আশ্রয়স্থলের পার্শ্ববর্তী জমিগুলোতে কীটনাশকের ব্যবহারে মৎস্য সম্পদ উজাড় হয়ে গেছে। এছাড়াও অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ সৃষ্টি করে মাছের চলাচলে বাধা সৃষ্টি, সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিষ প্রয়োগে পাটি বাঁধে ও বিলের পানি সেচের মাধ্যমে মাছ আহরণ কারেন্ট জাল, মশারি জালসহ অবৈধ জাল দিয়ে পোনামাছ ও মাছ ধরার কারণে এ হাওড় অঞ্চলের মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং বিলুপ্ত হতে চলছে।

বিলুপ্ত হওয়া প্রধান মাছগুলোর মধ্যে রয়েছে নানিদ মাছ, মাশুল মাছ, পাঙ্গাশ মাছ, টাকামাছ, কই মাছ, মাগুর মাছ, শিং মাছ, বাতাসি মাছ, গুং মাছ, রানী মাছ, পান মাছ, মৃগা মাছ, রিডা মাছ, খৈলিশা মাছ, বৈচা মাছ, কানলা মাছ, বামট মাছ, পাপদা মাছ, চেং মাছ, বাঘাইর মাছ, বেংরা মাছ, সিলুন মাছ, খল্লা মাছ, লাচ মাছ, এলগন মাছ, রামচেলা মাছ, গিলাকানি নাপিত মাছ ও গলদা চিংড়ি। এছাড়াও বিলুপ্তির পথে প্রধান মাছগুলোর মধ্যে রয়েছে ইলিশ মাছ, মলা মাছ, রুই মাছ, কাতলা মাছ, বজরি মাছ, হালনী মাছ, ডানকানা মাছ, গুতুম মাছ, সরপুঁটি মাছ, চান্দা মাছ, ডিমা চিংড়ি, বাইম মাছ ও মেনি মাছ।

অষ্টগ্রামের, আব্দুল্লাপুর, আদমপুর, ইকুরদিয়া, বাংগালপাড়া, সাভিয়ানগর, কাস্তুল, অষ্টগ্রামসদর, পূর্ব অষ্টগ্রাম, মিঠামইনের ঘাগড়া, ঢাকী, সদর, ইটনার, এলংজুরি, ধনপুর, জয়সিদ্ধি, আজমেরি, পাহারপুর, বদলপুর, খাকাইলচেও, বানিয়চং সদর, নতুনবাজার, ইকরাম, বিথলংবাজার, লাখাইবাজার, বামৈরবাজার, মুড়াকুড়ি, নাসিরনগরের সদর, চাতলপাড়, ফাউন্দাক, গোয়ালনগরসহ হাওড়ের বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, খামারের মাছই বাজারের ভরসা।

নদী ও হাওড়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ মাঝে মধ্যে পাওয়া গেলেও এগুলোর দাম অত্যন্ত চড়া এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। খামারের মাছের দাম আনুপাতিক হারে কম। এ ব্যপারে একাধিক মাছ বিক্রেতাক জিজ্ঞাসা করা হলে এ প্রতিনিধিকে জানান, দেশীয় প্রজাতির মাছ খুবই কম পাওয়া যায় এবং দাম বেশি। এছাড়াও ফড়িয়া ব্যাপারিরা নদী ও হাওড় থেকে এগুলো কিনে ভৈরব, কুলিয়ারচর, আশুগঞ্জ, হবিগঞ্জ চালান করে দেয়।

পরে রাজধানী শহর ঢাকা, চিটাগাংসহ জাতীয় পর্যায়ের বাজারগুলোতে এ মাছ বাজারজাত করা হয়ে থাকে। এই ব্যাপারে হাওড়াঞ্চলবাসী ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান কামরুল হাসান বাবু বলেন, ইজারাদারদের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব ও অধিক মুনাফার কারণে অবৈধ জাল দিয়ে মা মাছ ও পোনা মাছ অবাধে নিধনের ফলে এমনটি হচ্ছে। যদি প্রজননকালীন স্থানীয় প্রশাসন সঠিকভাবে নজর রাখে তাহলে দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হবে। এবং প্রজননকালীন সময় যদি কার্ডধারী জেলেদেরকে বিশেষ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তাহলেই দেশীয় মাছ বৃদ্ধি পাবে।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image