
মশিউর রহমান সেলিম, কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের বানিজ্যিক নগরীখ্যাত লাকসাম উপজেলা জুড়ে এক সময় গ্রামাঞ্চলের মানুষের করোনা টিকা নেয়ার প্রতি কোন আগ্রহ ছিলো না। তাদের ধারনা ছিলো করোনা ভাইরাস আক্রান্ত শুধু শহর কেন্দ্রীক মানুষের হবে। তাদের সেই ধারনা গত দুই মাস যাবত ভুল প্রমানিত হয়েছে। এ অঞ্চলে মহামারী করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলেই বেশি। তাই সকল শ্রেণি পেশার মানুষ নিজেদের জীবন রক্ষায় এখন সবাই ছুটছেন গণ টিকা কেন্দ্রগুলোতে। প্রতিনিয়ত মানুষের মধ্যে টিকা নিতে আগ্রহ বেড়েই চলেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মহামারী করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে গণ টিকাদান কর্মসূচী শুরু করেছে লাকসাম সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ১ম, ২য় দফায় এ টিকা নিয়ে নানামুখী গুজব ছিলো। বিভ্রান্তি ছিলো একটি মহলের কাছে তা স্বত্তে¡ও ৩য় দফায় টিকা নিতে রেজিঃ, নমুনা দেয়া ও টিকা প্রয়োগে আগ্রহ বাড়ছে সকল শ্রেণি মানুষের। অপরদিকে কুমিল্লার লাকসাম পৌরশহর ও উপজেলার সর্বত্র করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগে এ অঞ্চলের সাধারন মানুষের আস্থা বাড়াতে নানাহ কৌশলের উদ্যোগ নিয়ে গত কয়েকদিন যাবত ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলা প্রশাসনসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, প্রথম দফায় ওই করোনা ভ্যাকসিন ডোজ এ উপজেলায় আসলে সরকারি হাসপাতাল ইনচার্জ ডাঃ নাজিয়া বিনতে আলম এলাকার সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিতে ইচ্ছুক ব্যাক্তিদের রেজিষ্ট্রেশন করতে আহবান জানিয়েছিলেন। আজ সোমবার ১৬ আগষ্ট ২০২১ পর্যন্ত প্রায় ৬৯ হাজার ৩’শ১৮ জন টিকা ডোজ নিতে রেজিঃ করেছেন মানুষ। ১৬ আগষ্ট সোমবার সকাল পর্যন্ত সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৫ হাজার ৩’শ২০ জন। মানুষের শরীরে করোনা সংক্রমনে আক্রান্ত সনাক্ত করা হয়েছে ২ হাজার ৯৩জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জন ও সুস্থ্য হয়েছে ৮’শ৩ জন। পারিবারিক পর্যায়ে আইসোলেশনে রয়েছে ৩ শতাধিক মানুষ এবং সরকারী হাসপাতালে আইসোলেশনে ভর্তি ছিলেন ১০৪ জন।
আরও জানায়, এ পর্যন্ত ৮ হাজার ২’শ১৫ সিনোফার্মার টিকা ডোজ এবং কোন্ডিশিল্ড ২ হাজার ৫’শ ৫০ ডোজ টিকা এসেছে। হাসপাতালে ভর্তি আছে বর্তমানে ১৪ জন। এ হাসপাতালে সেন্ট্রাল সিলিন্ডার অক্সিজেন সিলিন্ডার সচল থাকলেও আইসিও এবং সিসিও বেড নাই। টিকা প্রয়োগ করেছেন ১ম দফায় ১৭ হাজার ২’শ৫০ জন এবং ২য় দফায় ১৩ হাজার ৮’শ ২১ জন, গত দু’সপ্তাহে রোগী সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য দপ্তর কর্মকর্তারা মানুষকে সচেতনতা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে চলমান রাখছেন।
স্থানীয় বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি এ উপজেলায় করোনা ভাইরাস টিকা আসায় করোনা সু-রক্ষা পন্য মাক্স ব্যবহারে কারোই যেন আগ্রহ নেই। পৌরশহর এলাকার চাইতে গ্রামাঞ্চলে মাক্স ব্যবহার না করার প্রবনতা অনেকইটা বেশি। লাকসাম সরকারি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের চাপও বেড়ে গেছে। ঘন্টা শেষ না হতেই শহরের সড়কগুলোতে এ্যাম্বুলেন্সের ডাক আর চর্তুরদিক থেকে আসছে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং কমছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতেরসংখ্যা। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি অনেক মানুষ মানতে চায় না। নানাহ অজুহাতে নারী-পুরুষরা ঘরের বাহিরে চলে আসছেন।
এ ব্যাপারে লাকসাম সরকারি হাসপাতালের ইনচার্জ ডাঃ নাজিয়া বিনতে আলম জানায়, চলমান মহামারী করোনার ৩য় ঢেউ চলাকালে এ অঞ্চলে করোনায় আক্রান্ত মানুষের পাশাপাশি এ হাসপাতালে এ সময়ে সাধারণ রোগীদের চাপও বেড়ে গেছে। জনবল সংকটে সকল রোগীদের চাপ সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
৩রা আগষ্ট থেকে সরকারি হাসপাতাল থেকে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা পাড়ামহল্লায় গিয়ে মানুষের রেজিঃ এবং টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / মশিউর রহমান সেলিম
আপনার মতামত লিখুন: