• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

উত্তরের অর্থনীতি বদলে দিয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ০৮ জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৮:৩৫ পিএম
বঙ্গবন্ধু সেতু কৃষককে সরাসরি বাজা
bongobondho shatu

জাহাঙ্গীর শাহ

বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর উত্তরবঙ্গের ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে, তৈরি হয়েছে নানা ধরনের শিল্প, কমেছে দারিদ্র্য। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু চালুর পর দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। জেলায় জেলায় শিল্পকারখানা হয়েছে। তবে কৃষি প্রক্রিয়াজাত কারখানাই বেশি। আবার উত্তরবঙ্গের কৃষকদের কৃষিপণ্য সহজেই রাজধানীসহ সারা দেশে চলে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতু কৃষককে সরাসরি বাজারের সম্পৃক্ত করেছে।

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ও সিরাজগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু তৈরি করা হয়। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে চালু হওয়া সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। গতকাল শনিবার পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতেও একই ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

যমুনা নদীর ওপর দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু তৈরির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন বড় অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ও সাবেক বিদ্যুৎসচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালের দিকে বিশ্বব্যাংক এই সেতুতে অর্থায়নে নিমরাজি ছিল। তখন সংস্থাটি বলেছিল, সেতুটির অর্থনৈতিক সুবিধা তুলনামূলক কম হবে, শিল্পায়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে না। তখন আমরা একটি বিশ্লেষণ করে বলেছিলাম, উত্তরবঙ্গের শীতকাল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দীর্ঘ।

আম, সবজিসহ কৃষিপণ্যের বড় উৎস এখন উত্তরবঙ্গ। শিল্পগোষ্ঠীগুলো উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকারখানা করছে। বঙ্গবন্ধু সেতু উত্তরের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

তাই এই অঞ্চলে সবজি ও ফলমূল চাষের সম্ভাবনা অনেক বেশি। ওই সময়ে এসব কৃষিপণ্য ফলাতে উৎসাহিত হতেন না কৃষকেরা। কারণ, রাজধানীসহ দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সেতু হয়নি। এখন সেতু হওয়ায় আম, সবজিসহ কৃষিপণ্যের বড় উৎস এখন উত্তরবঙ্গ।

দেশের অন্যতম প্রধান শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ১৯৮১ সালে রংপুর বিসিকে আরএফএল ফাউন্ড্রি নামে কারখানা নির্মাণ করে টিউবওয়েলের ব্যবসা শুরু করে। পরের দুই দশক তারা উত্তরবঙ্গে আর কোনো কারখানা করেনি। বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর শিল্পগোষ্ঠীটি ২০০১ সালে নাটোরে প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেড নামে কারখানা স্থাপন করে। এরপর একে একে রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় আরও আটটি কারখানা করে তারা। সব কটিই কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকারখানা।

শুধু প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ নয়, দেশের অন্য শিল্পগোষ্ঠীগুলো উত্তরবঙ্গে কারখানা করেছে। যেমন স্কয়ার গ্রুপ, এনভয় গ্রুপ, নীলসাগর গ্রুপ। স্কয়ার গ্রুপ পাবনায় নিজস্ব শিল্পপার্ক করেছে। আবার এনভয় গ্রুপ পাবনায় বেঙ্গল মিট নামে মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা করেছে।

উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় গ্রুপ নীলসাগর গ্রুপ নীলফামারী জেলায় কৃষি ও পোলট্রিশিল্পের কারখানা করেছে। এভাবেই নানা শিল্পকারখানা করায় উৎসাহী হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তারা। যদিও শিল্প ইউনিটে গ্যাসসংযোগ না দেওয়ায় এখনো কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হচ্ছে না। তবে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উদ্যোক্তারাই বেশি আগ্রহী।

দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা:  বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর উত্তরবঙ্গের জীবনমানের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের আয় বেড়েছে, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ১৯৯৫-৯৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, সারা দেশের জাতীয় দারিদ্র্যহার ছিল ৫৩ শতাংশ।

তখন রাজশাহী বিভাগে দারিদ্র্যহার ছিল ৬২ শতাংশের বেশি। ওই সময় রাজশাহী বিভাগের সঙ্গে বর্তমান রংপুর বিভাগ যুক্ত ছিল। মঙ্গার কারণে রংপুর বিভাগে জেলাগুলোয় তখন ৭০-৭৫ শতাংশ দারিদ্র্যহার ছিল।

১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর বদলে যেতে থাকে উত্তরবঙ্গে জীবনযাত্রা। দারিদ্র্যহার কমতে শুরু করে। ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ধরে করা দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী, রাজশাহী বিভাগের দারিদ্র্যহার কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশ। আর রংপুর বিভাগে এই হার ৪৭ শতাংশ।

বগুড়া সদর উপজেলার মহিষবাথান গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম। খেতে ফসল ফলানো তাঁর পৈতৃক পেশা। দুই যুগ আগে তিনি দুই ফসলি জমিতে ধান ফলাতেন। মাঝেমধ্যে করলা, আলু, কাঁচা মরিচ, টমেটোর মতো সবজি চাষ করতেন। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় খেতের সবজি খেতেই নষ্ট হতো। সবজি বিক্রির বাজার ছিল না। মাঝেমধ্যে খেত থেকে সবজি তুলে মহাস্থানগড় হাটে বিক্রি করতে যেতেন। সারা দিন বসে থাকলেও ক্রেতা মিলত না।

এখন সময় পাল্টেছে। বদলেছে এই কৃষকের ভাগ্য। ধান, আলু ছাড়াও করলা, কাঁচা মরিচ, শীতকালীন শিম, গাজর, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, মুলা, বেগুন, শসা, পটলসহ হরেক সবজির চাষ হচ্ছে। খেত থেকে সবজি তুলে মহাস্থান মোকামে বিক্রি করছেন কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি সাতসকালে মহাস্থান হাটে যে সবজি বিক্রি করছেন; কয়েক হাত বদলে দিনের আলো থাকতেই সেই সবজি পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সিলেটের মতো বড় বড় শহরের ক্রেতাদের কাছে।

শুধু কৃষক আনোয়ারুলের একার দুর্ভোগের অবসান হয়নি; উত্তরের কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু। সেতু চালুর পর বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে দেশজুড়ে।

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু চালুর আগে বগুড়ায় বড় ও মাঝারি শিল্পকারখানা চালু ছিল ১৫-২০টি। বর্তমানে বিসিক শিল্পনগরীতে ৮৮টি শিল্পকারখানা ছাড়াও বগুড়া অঞ্চলে কয়েক হাজার ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। বর্তমানে বগুড়ার হালকা প্রকৌশল শিল্পের বাজার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।

বরেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নওগাঁর অর্থনীতি কৃষিপ্রধান। জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতেই ধান চাষ হয়ে থাকে। বেশি জমিতে ধান উৎপাদন হওয়ায় স্থানীয় লোকজন গর্ব করে নওগাঁকে বলে ‘ধানের রাজধানী’। ধান ছাড়াও পাট, গম, শর্ষে, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল চাষ হয়ে থাকে। আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে বর্তমানে নওগাঁ সারা দেশের মধ্যে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।

নওগাঁ চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার জানান, বড় বিনিয়োগকারীরা ধান-চালের ব্যবসায় আসছেন। এ জেলায় ধান-চালের ব্যবসায় বছরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। শুধু বগুড়া, নওগাঁ নয়; রংপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুরসহ উত্তরের প্রায় সব জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য বঙ্গবন্ধু সেতুর সুফল পাচ্ছে।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image