• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

কুমিল্লায় অস্থির ভৌজ্য তৈলের বাজার সবই যেন সেন্ডিকেটের কারসাজি


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ০৮ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৫৬ এএম
কুমিল্লায় অস্থির ভৌজ্য তৈলের বাজার সবই যেন সেন্ডিকেটের কারসাজি
ভৌজ্য তৈল

মশিউর রহমান সেলিম, কুমিল্লা : দেশব্যাপী ভৌজ্য তৈলের বাজার মূল্য অস্থিরতায় তার প্রভাব পড়েছে কুমিল্লার দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার গুলোর হাটবাজার জুড়ে। নানাহ অজুহাতে ভৌজ্য তৈলসহ অন্যান্য পন্যের বাজারও অস্থির হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় মজুতদার ব্যবসায়ীদের ভৌজ্য তৈলের কারসাজি ও সঠিক মান নিয়ন্ত্রন নিয়ে এলাকার জনমনে নানান বির্তক চলছে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এ অঞ্চলের মানুষের। কুমিল্লার মানুষকে ভৌজ্য তৈলের মূল্য আর কত দিন নাকানি চুবানি খাওয়াবে। এলাকার জনমনে এ নিয়ে নানাহ ক্ষোভ বাড়ছে। সবই যেন সেন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি।

ভুক্তভোগীদের একাধিক সূত্র জানায়, জেলার হাটবাজার জুড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের পাশাপাশি ভৌজ্য তৈল কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। গত দু’সপ্তাহ জুড়ে ভৌজ্য তৈলের মূল্য একাধিকবার বাড়ায় জনমনে স্বস্তি নেই। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তৈলের ১ লিটার বোতল ১৯৮/২০০ টাকা এবং ৫ লিটার বোতল ৯৫০/৯৮০ টাকা এবং সরিষা তৈল কলে খুচরা-পাইকারী সোয়াবিন তৈলের মূল্যেও চেয়ে আরও বেশি ধরেই বিক্রি হচ্ছে।

গতবছরের বাজার দরের তুলনায় এ বছরের শুরুতেই ভৌজ্য তৈলের মূল্য ৪০/৫০ শতাংশ বেশি। তবে এসব ভৌজ্য তৈলের মূল্য বর্তমান বাজার জুড়ে লাগামহীন ঘোড়ার মত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত রিপোর্টে উঠে আসে আমরা এসব কি খাচ্ছি তা নিয়ে জনমনে নানান কথা বার্তা উঠে আসছে।

ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীরা চাল, ডাল, সবজিসহ মসল্লার বাজার দর নিয়ে লুটপাট চালিয়েছেন সেখানে ভৌজ্য তৈল ব্যবসায়ীরা বসে থাকবে এটা কিন্তু আসা করা অলীক কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। এ অঞ্চলে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বেশক’টি সয়াবিন তৈল তৈরী কারখানা গড়ে উঠলেও বাজার মনিটরিং কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

সূত্রটি আরও জানায়, এ দিকে গতবছরের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য মতে জানা যায়, হাটবাজার জুড়ে সংগৃহিত বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন, সরিষা ও নারিকেল তৈলের ৭৭টির নমুনায় ফ্রি ফ্যাটি এসিডের মাত্রা পরীক্ষা করে এতে ৩০টি নমুনায় স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ফ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া গেছে।

বিদেশ থেকে আমদানীকৃত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভৌজ তৈল পরিশোধনের মাধ্যমে নিরাপদ ও খাওয়া উপযোগী করতে হয় কিন্তু ওইসব পন্যের এ দেশীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খরচ বাচাতে কিংবা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে সঠিক মান নিয়ন্ত্রন করছে না। এছাড়া বোতলজাত সয়াবিন তৈলের ১৩টি নমুনা মধ্যে ৬টি তে মাত্রারিক্ত ফ্রি ফ্যাটি এসিডের ক্ষতিকারক মাত্রা ০.২ শতাংশ কিন্তু পরিক্ষিত ১৩টি নমুনার মধ্যে অপর ৬টিতে ২.২ থেকে ২.৮ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিকর ফ্রি ফ্যাট এসিড পাওয়া যায়। খোলা সয়াবিল তৈলের অবস্থা আরও খারাপ।

বিশেষ করে পুষ্টিমান বলতেই কিছু নাই। এরমধ্যে দু’টি নমুনা পরীক্ষা করে দু’টিতেই ২.৬ থেকে ৩.৫ শতাংশ ফ্রি ফ্যাট এসিডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। হাটবাজার জুড়ে খোলা বাজারে বিক্রি সরিষার তৈলেও ১.২৫ শতাংশ ফ্যাট এসিড। বোতলজাত সরিষা তৈলে ১৯টির নমুনার মধ্যে ১০টিতে ১.৩ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত ফ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া গেলেও খোলা সরিষা তৈলের ৫টি নমুনার মধ্যে ৪টিতেই ১.৩ থেকে ২.৪ শতাংশ ফ্রি ফ্যাট এসিড থাকার সনাক্ত করা গেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে।

সূত্রটি আরও জানায়, বাদামও তিলের তৈলেও অধিকাংশ নমুনায় মাত্রাতিরিক্ত ওইসব ক্ষতিকর দ্রব্য রয়েছে। নারিকেল তৈলের ১৭টি নমুনার মধ্যে ৪টি ক্ষতিকর দ্রব্য, অলিভওয়েল ও রাইচব্র্যান ওয়েলে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কিছু বেশি ক্ষতিকর দ্রব্যের প্রমান পাওয়া গেছে। তবে সঠিক মানের সয়াবিন তৈল নির্নয় করতে হয় বিএসটিআই কর্তৃপক্ষকে এবং ওইসব পন্যের রং, এসিড, আয়োডিন ভ্যালু, রেজিষ্টিভ ইনডেক্স ও মেলটিং পয়েন্ট পরীক্ষা হয়ে থাকে ওই প্রতিষ্ঠানে। তবে বাজার মনিটরিংয়ে স্ব স্ব এলাকার স্যানেটারী ইন্সপেক্টর বিষয়টি দেখভাল করে থাকেন। এ ব্যাপারে তারাই ভালো বলতে পারবেন।

জনস্বাস্থ্য ল্যাবের পরীক্ষায় ওইসব ভৌজ্যতৈলে অতিমাত্রায় ভেজাল, পাম্প অয়েল ও নিম্ন মানের ভৌজ্যতৈল মিশ্রনের প্রমান মিলেছে। ওইসব ভৌজ্যতৈল মানব দেহে শক্তিজোগান ও টিস্যু গঠন বাঁধাগ্রস্থ সহায়ক ভূমিকা রাখে। এসিটিক এসিডের অতিরিক্ত এ মাত্রা প্রয়োগে মানবদেহে হার্ট’র জন্য ভয়ংকর ঝুঁকি ছাড়াও ক্যান্সার, হাইপারটেনসন ও ডায়বেটিকসসহ শরীরের ওজন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে মৃত্যুর ঝুঁকির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
স্থানীয় অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাধিক সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে প্রায় ৩ হাজার টন ভৌজ্যতৈলের চাহিদার বিপরীতে স্থাণীয় ভাবে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১০ ভাগ। ফলে অবশিষ্ট পুরোটাই এলাকার চাহিদা মিটাতে বাহির থেকে আনতে হয়।

এ অঞ্চলের হাটাবাজার জুড়ে অতি মুনাফাখোর, অতিলোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেবল মুখে মুখে নয়। ভৌজ্যতৈলসহ নিত্য পন্যের বাজার মূল্যে কারসাজিতে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

সকলকে মনে রাখতে হবে এ অঞ্চলের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রধান উপকরন হচ্ছে ভৌজ্যতৈল। তা স্থানীয় প্রশাসনের যে কোন মূল্যে বাজার দর নিয়ন্ত্রন করা উচিত। আমরা ভৌজ্যতৈলের এ পরিস্থিতির দ্রুত অবসান চাই। জেলা বিএসটিআই ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সহ একাধিক সংস্থা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষ।

এ ব্যাপারে জেলা- উপজেলা ও বিভাগীয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্মকর্তাদের একাধিক মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

ঢাকানিউজ২৪.কম / মশিউর রহমান সেলিম/কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image