• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

তিন বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৩৯০ কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ১১ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:১৬ পিএম
তিন বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুর্নীতি
টিআইবি

ডেস্ক রিপোর্টার: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি কয়লা বিদ্যুৎ বিকল্প হিসেবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ খাতে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

সকালে 'বাংলাদেশে কয়লা ও এলএনজি বিদুৎ প্রকল্প: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ  ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা জানায় টিআইবি। এ সময় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। যেখানে প্রকল্প গুলোর বিভিন্ন অসঙ্গতি ও জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির বিষয়টি উঠে আসে। জ্বালানি সংগ্রহে সরকার একটি কার্যকর রূপরেখা প্রণয়নের মাধ্যমে এ খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করার পাশাপাশি, জ্বালানি খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহবান জনান টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে খাসজমির জাল দলিল তৈরি করে তা বিক্রয় বাবদ ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির জবরদখল ও অর্থ প্রদান না করা বাবদ ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা দুর্নীতিসহ এই প্রকল্পে ১৫ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার দুর্নীতি হয়েছে। বাঁশখালী এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ব্যক্তিগত জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ বাবদ মূল্য প্রদানে ২০০ কোটি টাকার কমিশন আদায় এবং ইজারাকৃত জমি ব্যবহারকারীদের ক্ষতিপূরণের অর্থ থেকে ৫৫ কোটি টাকা কমিশন আদায়সহ মোট ২৫৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।

এ ছাড়া মাতারবাড়ী এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যক্তিগত জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ বাবদ মূল্য প্রদানে ৮২ কোটি ৫ লাখ টাকার কমিশন আদায়সহ ১১৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে।

এই দুর্নীতিতে অর্থ গ্রহীতা ছিলেন বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ, ডরপ এনজিও কর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প বলে আইসোটেক কর্তৃক প্রশাসনের সহায়তায় জমির মালিকদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও ভূমি দখল করা হয়েছে। ক্রয়কৃত জমির চেয়ে বেশি জায়গা দখল এবং ক্ষেত্রবিশেষে জমি ক্রয় না করেই জোরপূর্বক দখল করা হয়েছে। বাঁধে বসবাসকারী জেলে পরিবারের ওপর হামলা, মামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে। দলিল ও ভুয়া মালিক তৈরি করে খাস ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২০টি রাখাইন পরিবারের ৭০ একর কৃষিজমি, উপকূলীয় বনসহ নদী ও খাল দখল করা হয়েছে।

বাঁশখালী এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ২ কিলোমিটার সমুদ্রতট দখল করে লবণচাষিদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। খাসজমিসহ স্থানীয়দের প্রায় ১০০ একর জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে জমির মালিকদের নামমাত্র মূল্য দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়া হয়েছে বলেও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ প্রদান করেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক কম মূল্যে স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি কিনে বেশি মূল্যে এস আলম কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে তথ্যদাতারা জানান।

এ ছাড়া মাতারবাড়ী এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে স্থানীয়দের থেকে জোরপূর্বক ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জমির মূল্য পেতে ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রদানে বাধ্য করা হয়েছে। লবণ ঘেরকে নাল জমি দেখিয়ে কম মূল্যে জমি ক্রয় করারও অভিযোগ রয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, এসব প্রকল্পে প্রয়োজনের অধিক জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশে নির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ০.২৩ একর এবং এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ০.০৫৩ একর জমি প্রয়োজন হয়। সেই হিসাবে গবেষণার আওতাভুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট ৯৪২ একর অতিরিক্ত জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে নির্বাচিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গড়ে ০.৬৯ একর এবং এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ০.৬৫ একর জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারীদের মৃত্যু; মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও বিচার না হওয়াসহ অপরাধীদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। প্রভাবশালী মহলকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানে প্রকল্প অনুমোদন, বিবিধ চুক্তি সম্পাদন, ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগ, বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ এবং বিদ্যুৎ কেনায় প্রতিযোগিতাভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার না করে বিশেষ বিধানের আওতায় চুক্তি ও কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়েছে।’

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। গবেষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি, পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে এবং পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশদূষণ এবং সংকটাপন্ন এলাকাসমূহে ঝুঁকি বৃদ্ধি পেলেও পরিবেশ অধিদপ্তর বিদ্যমান আইন ও বিধি কার্যকরভাবে প্রয়োগে ব্যর্থ; বন, নদী, খাসজমিসহ প্রাকৃতিক সম্পদের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি সাধন হবে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image