• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ইটনা ও মিঠামইনের ২ শতাধিক পরিবার ঈদ থেকে বঞ্চিত


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ০৭ জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:২২ পিএম
ইটনা ও মিঠামইনের ২ শতাধিক পরিবার ঈদ থেকে বঞ্চিত
ইটনা ও মিঠামইন এলাকা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : আগামী রবিবার কোরবানি ঈদ। কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনা ও মিঠামইনের নতুন করে ফসলী জমিতে নির্মিত চল্লিশটি গ্রাম এখনও পানিতে ভাসছে। বন্যার পানি কমলেও এসকল গ্রাম হাওরে মাঝখানে নীচু হওয়ায় পানিতে ডুবে রয়েছে।

গতকাল ৭ ই জুলাই বৃহস্পতিবার এসব গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, এসকল গ্রামে অন্ততঃ ২ শতাধিক পরিবার এবার কোরবানির ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত। এসকল পরিবারের মধ্যে অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। কিছু কিছু পরিবার আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে বসবাস করছে তলিয়ে যাওয়া নতুন মাটিতে নির্মিত বাড়ি ঘর পূণরায়  তৈরি করে বাড়ি ফিরতে তাদের অনেক সময় লাগবে।বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। তার চেয়ে বেশি এখন টেউয়ের আঘাতে ক্ষতি হচ্ছে।

প্রতিটি বাড়ির পাশে বাঁশের পাইলিং সরে গিয়ে মাটি হাওরে মিশে যাচ্ছে। বন্যা শুরু হওয়ার পর প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় কৃষকের গোখাদ্য হিসাবে খেড়ের পাড়া ছিল। তাও পানিতে ভেসে  গেছে। গোখাদ্য সংকটের কারণে অনেক কৃষক শেষ পর্যন্ত কোরবানির জন্য রাখা গবাদিপশু পানির দামে বিক্রি করে দিয়েছে। এক শ্রেণীর গরু বেপারীরা বন্যার সুযোগে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে কম মূল্যে গরু মহিষ ছাগল, বেড়া  ক্রয় করে নিয়ে আসছে।

এখন তারা বিভিন্ন বাজারে এসকল গবাদিপশু চড়ামূল্যে বিক্রি করছে।কৃষকরা জানান,তলিয়ে যাওয়া বাড়ি ঘর থেকে ধান চাল সহ অন্যান্য জিনিস নিয়ে এসে আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে রাখলেও গবাদিপশু রাখার মত জায়গা নেই। তাই পানির ধরে বিক্রি করে দিলাম। কিছু কিছু মানুষের গরু কিনে কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে অথবা আশ্রয় কেন্দ্রে কোরবানি দেওয়ার পরিস্থিতি নেই।এছাড়া তলিয়ে যাওয়া বাড়ি ঘরে ও কোরবানি দেওয়ার অবস্থা নেই। কারণ পানি এখনও ঘোড় দোড়া।

মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের ওয়ারিশপুর, হাবিবপুর, নতুন হাটী, সাবাসপুর, চমকপুর নতুন পাড়া, বেড়ি বাঁধের হাটী, হোসেনপুর নতুন পাড়া, সুলতানপুর, আগলা হাটী, ঢাকী ইউনিয়নের নতুন চরপাড়া, কোলাহানী, সোনাপুর, কাটখাল ইউনিয়নের শান্তি পুর, রানীগঞ্জ, ওলীপুর, আশুপুর, গোপদীঘি ইউনিয়নের এককোষা, হাসানপুর, নতুন হাসানপুর, মশুরিয়া, খিলাপাড়া, কেওরজোড় ইউনিয়নের রানীগঞ্জ, নাগরপুর নয়া হাটী, মুমিন পুর, সিদ্দিক নগর, ইটা খলা, হাফিজ নগর, অলেকপুর, ইটনা উপজেলার লাইম পাশা,মৃগা,আনন্দ বাজার, আমিরগঞ্জ, বদরপুর, ধনপুর, দাস পাড়া, কালীপুর, সুন্দর নগর এসকল গ্রামে মানুষ এখনও পানি বন্দি।

এসকল গ্রাম ২০১০ থেকে ২০২২ এর মধ্যে হাওরে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। বাড়ির উচ্চতা কম হওয়ায় অল্প পনিতেই এসকল বাড়ি ঘর তলিয়ে গেছে।এ অঞ্চলের প্রবীন লোক ও সমাজ সেবক আক্কাস উদ্দিন জানান,এবার যে পানি হয়েছে সেটা কোনো বন্যা নয়।বিশ বছর পূর্বে এরকম পানি হইতো।নদীর তলদেশ পলি পড়ে ভরে গেছে তাই পানি আসা  মাএ ঐ নদীর তীর উপছে পানি হাওরে প্রবেশ করে বাড়ি ঘর তলিয়ে যায়।

ঘাগড়া ইউনিয়নের হাবিব পুরের মকুল, বকুল, পাভেল, জয়নাল, মজিবুর তাড়া ৪ টি পরিবার এখনও উচ্ছেদ হয়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করছে।তাড়া জানান বন্যার সময় গরুর খাওন দিতে না পেড়ে অন্ততঃ ১০ টি গরু খাওয়নের অভাবে পানির ধরে বেইচ্ছা দিছি। নিজেই খামু কি গরুরেই খাওয়ামু কি এখন কোরবানি দেওয়ার মত জায়গা নেই। কষ্ট করে ৩/৪ জনে মিল্লা গরু কিনলেও জায়গার অভাবে কোরবানি দিতে পারুম না।এবার আমাদের কোনো ঈদ নাই।বাজার থেকে পোলট্রি মুরগী এনে ঈদ করমু। একই উপজেলার রানীগঞ্জের মিলন মিয়া জানান,তার পরিবারে ১৫ জন লোক বন্যার সময় বাড়ি তলিয়ে গেলে আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তার ৪ টি গরু ছিল। গরুর খাবার দিতে না পেরে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করে দিয়েছে।

যার বর্তমান বাজার মূল্য ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।এখন কোরবানি দিলে চড়ামূল্যে গরু কিনে কোরবানি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত কোরবানি দেওয়ার মত কোনো জায়গা নেই বাড়িতে এখনও পানি।গরু কিনে সাহস পাচ্ছেন না জায়গার অভাবে কোরবানি দিতে। গোপদিঘীর শালদীঘার আলি আকবর বলেন, ঘর বাড়ি পানির তলে ৫ জনে মিল্লা একটা গরু কিনছি কোরবানির লাগি।জায়গা না পাইলে বড় রাস্তার মধ্যে কোরবানি দিয়া দিমু নিজের ঘরের ৭ টি গরু  মাগনা বেইচ্ছা দিছি খাওয়নের অভাবে।

ময়মসিংহের নান্দাইল উপজেলার গরু ব্যবসায়ী সুলতান মিয়া জানান, তিনি বন্যার সময় ইটনা, মিঠামইন থেকে ৫০ টি গরু কিনেছেন  কম দামে।এসকল গরু খামারে নিয়ে তাজা করে এখন লাভ করে বিক্রি করছে। মিঠামইন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাওরে পানি কমতে শুরু করেছে। হাওরের মাঝখানে। নির্মাধীন বাড়ি ঘর এখনও পানিতে ভাসছে এসকল পরিবারের সদস্যরা আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে উঠেছে।

তবে এবছর বন্যার কারণে মিঠামইনে কোরবানির সংখ্যা কম হবে বলে তিনি মনে করেন। অনেকই গো খাদ্যের সংকটের কারণে গবাদিপশু বিক্রি করে দিয়েছে। মিঠামইনের হাট বাজারে কোরবানির পশুর দাম কিছুটা চড়া হলেও ক্রেতারা কিনে নিচ্ছে।

বাহিরের গরুর আমদানী কম।তিনি উপজেলা বাসীর সকলকে ঈদের সময় টুকু সাবধানে চলাফেরার পরামর্শ দেম।তিনি পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বলেন মটরবাইক নিয়ে আসবেন না। ঈদের সময় টুকু নিভিঘ্নে  চলাফেরার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার অনুরোধ করেন।

 

ঢাকানিউজ২৪.কম / বিজয়কর রতন/কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image