• ঢাকা
  • শনিবার, ১৭ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ; ০১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

গৃহশ্রমিককে রাস্ট্রীয় সুরক্ষার আওতায় আনা জরুরী 


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ১২ ফেরুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৭:১৫ পিএম
গৃহশ্রমিককে রাস্ট্রীয় সুরক্ষার আওতায় আনা জরুরী 
কর্মক্ষেত্রে গৃহশ্রমিকদের গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন

জহিরুল ইসলাম সানি:

সকল গৃহশ্রমিককে রাস্ট্রীয় সুরক্ষার আওতায় আনা, শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা এবং গৃহশ্রমিকের জন্য শোভন কাজ সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন-১৮৯ অনুস্বাক্ষর করা জরুরী বলে উল্লেখ করেছে 'বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্স'-এর আয়োজিত শোভন কাজ ও কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার সহিংসতা বিষয়ে বাংলাদেশের গৃহশ্রমিকদের উপর পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা জানান।

বক্তারা বলেন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে গৃহশ্রমিকের শোভন কাজ নিশ্চিত করা সম্ভব এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমে যদি গৃহশ্রমিকের মর্যাদার বিষয়টি যুক্ত করা যায় তাহলে তা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়ক হবে। তবে গৃহশ্রমিককে রাস্ট্রীয় সুরক্ষার আওতায় আনতে তাদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা এবং গৃহশ্রমিকের জন্য শোভন কাজ সংক্রান্ত আইএলও  গ্লোবাল এফেয়ার্স কানাডা এবং অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় পরিচালিত “সুনীতি” (সিকিউরিং রাইটস অফ উইমেন ডমেস্টিক ওয়ার্কাস ইন বাংলাদেশ) প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়। বিলস-সুনীতি প্রকল্পের পক্ষে গবেষণাটি পরিচালনা করে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ডিনেট। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল নারী গৃহকর্মীদের শ্রম অধিকার ও জেন্ডার সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতি অন্বেষণের পাশাপাশি নারী গৃহকর্মীদের শোভন কাজ নিশ্চিতকরণের বিদ্যমান সুযোগ বা প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা। 

গবেষণায় দেখা যায়, দারিদ্র্য, পেশার সহজলভ্যতা এবং বিবাহ বিচ্ছেদজনিত কারণসহ বিভিন্ন কারনে  গৃহকর্মীর কাজ বেছে নেন নারীরা। কিন্তু সেই পেশায় এসে ৪২% আবাসিক গৃহকর্মী বসার ঘর কিংবা রান্নাঘরের মতো খোলা জায়গায় ঘুমান। ৭৫% অনাবাসিক/খন্ডকালীন গৃহকর্মী বস্তিতে বাস করেন। গৃহকর্মীদের গড় মাসিক আয় ৫,৩১১ টাকা যেখানে তাদের মাসিক গড় ব্যয় ১০,৮০১ টাকা। ৯৬% গৃহকর্মী বলেছেন যে তাদের বর্তমান মজুরি মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। শত ভাগ গৃহকর্মীই মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে কাজ করেন। ২৬% গৃহকর্মী কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি বা বিলম্বের কারণে মজুরি কর্তনের শিকার হয়েছেন। আবাসিক গৃহকর্মীরা দৈনিক ১০ থেকে ১৪ ঘন্টা কাজ করেন। ৮৭% অনাবাসিক/খন্ডকালীন গৃহকর্মী কোনো সাপ্তাহিক ছুটি পান না। গৃহকর্মীদের ৯৯% পেশাগত কোনো দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ পাননি। এক্ষেত্রে, ৮৫% নিয়োগকর্তা মনে করেন যে জীবন দক্ষতা প্রশিক্ষণ অধিকার বৃদ্ধিতে এবং গৃহকর্মীদের স্বীকৃতি দিতে অবদান রাখে। মাত্র ৪% গৃহকর্মী কোন না কোন সংগঠনের সাথে জড়িত। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ সম্পর্কে ৯৯% গৃহকর্মীর এবং ৬৬% নিয়োগকর্তাদের কোন জ্ঞান নেই। ৬৭% গৃহকর্মী মানসিক নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন। ৯১% নারী গৃহকর্মী জেন্ডার সহিংসতার বিষয়ে সাহায্য চাওয়ার উপায় হিসেবে কোনো হটলাইন/হেল্পলাইন নম্বর সম্পর্কে সচেতন নন। কোভিড-১৯ সংকটের সাথে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার ঘটনাগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, ২% চাকরি হারিয়েছেন এবং ২% আয়ের উৎস হারিয়ে তাদের স্বামী/পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসা অন্যান্য সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম- গৃহশ্রমিকের নিবন্ধন, থানাগুলোতে গৃহশ্রমিকদের জন্য পৃথক কোন অভিযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ তৈরী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে গৃহশ্রমিকের অধিকার ও তা লঙ্ঘনের প্রতিকার বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তনে ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি।

বিল্স এর যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত সচিব (অবঃ) ও বিশ্বব্যাংক  এর পরামর্শক এবিএম খোরশেদ আলম, শ্রম অধিদপ্তর এর পরিচালক বেল্লাল হোসেন শেখ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ এর উপপরিচালক সুস্মিতা পাইক, আইএলও ওয়ার্ক ইন ফ্রিডম প্রোগ্রামের ন্যাশনাল প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর এনি দ্রং, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এর সুনীতি প্রকল্পের সমন্বয়কারী তারেক আজিজ, ডিনেট এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক এম. শাহাদাৎ হোসেন, বিলস উপদেষ্টা পরিষদ এর সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল, বিলস নির্বাহী পরিষদ এর সম্পাদক শাকিল আখতার চৌধুরী, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ বাদল, গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসাইন, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম কোয়ালিটি স্পেশালিস্ট মুরাদ পারভেজ, লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, সলিডারিটি সেন্টার এর প্রোগ্রাম অফিসার এ্যাডভোকেট মোঃ নজরুল ইসলাম সহ ট্রেড ইউনিয়ন ও নাগরিক সমাজ নেতৃবৃন্দ, নিয়োগকারী ও গৃহশ্রমিক ও মিডিয়া প্রতিনিধি বৃন্দ।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image