ডেস্ক রিপোর্টার: পহেলা বৈশাখ মানেই বাঙালির জন্য সাদা শাড়ির সঙ্গে ছেলেদের পাঞ্জাবি, আর বৈশাখের মেলা তো আছেই। তবে একটি জিনিস যেন না হলেই নয়, তা হলো বাঙালির ঐতিহ্য পান্তা ইলিশ। পহেলা বৈশাখের সকালটা যেন জমেই ওঠে না পান্তা ইলিশ না হলে। তবে বাঙালির বৈশাখের উদযাপনে কীভাবে এল এ পান্তা-ইলিশ তাই জানব।
বাংলা নববর্ষের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের সম্পর্ক ঠিক কীভাবে শুরু হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও বাংলা সালের শুরুর ইতিহাস প্রায় সবারই জানা। শাসক শ্রেণি তৎকালীন সময়ে তাদের নিজেদের সুবিধার্থেই বাংলা বছরের শুরু করেছিল। তবে মুঘল শাসনামলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা মুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করত, আগত দর্শক শ্রোতারা তখন ঐতিহ্যবাহী পান্তাভাত খেতো। এরপর থেকেই বিংশ শতাব্দীর শেষে শহুরে বাঙালিরা বাংলা নববর্ষকে ঘটা করে উদযাপন শুরু করে। তবে তখনও পান্তার সঙ্গে ইলিশের যোগসূত্র হয়নি।
একুশ শতাব্দীতে এসে বাঙালির বৈশাখের সঙ্গে যোগ হয় পান্তা-ইলিশ। রমনার বটমূল থেকে শুরু করে পুরো বাংলাদেশেই শুরু হয় নববর্ষের সকালে পান্তা-ইলিশ খাওয়া। তবে এসব কিছুর শুরু হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। জানা গেছে, চৈত্রের কোনো এক বিকেলে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন সাংবাদিক বোরহান আহমেদ, উনিই নাকি রমনার বটমূলে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার প্রস্তাব দেন, এবং তারে প্রস্তাবে রাজি হয়ে তার সহযোগীরা মিলে ৫ টাকা করে চাঁদা তুলে পুরো আয়োজনের ব্যবস্থা করলেন। বাজার করা হলো, রান্না হলো, রাতে ভাত রান্না করে পান্তা তৈরি করে তাতে কাঁচামরিচ-শুকনো মরিচ, পেঁয়াজ ও ইলিশ ভাঁজা নিয়ে পর দিন বৈশাখের ভোরে হাজির হলেন বটমূলের রমনা রেস্টুরেন্টের সামনে। আর সেই প্রথমবারেই মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয় পান্তা-ইলিশ।
এরপর সম্ভবত ঠিক তার পরের বছরেই পরিচালক শহিদুল হক খান বৈশাখের এ পান্তা-ইলিশের সঙ্গে যুক্ত হন। এ বিষয়ে বিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, নিজ হাতে পান্তার পোস্টার লিখেছেন, তার পরিবারের সদস্যরা ভাত রেঁধেছেন, ইলিশ মাছ ভেজেছেন, কাঁচামরিচ পেঁয়াজ কেটেছেন, মাটির সানকি সংগ্রহ করেছেন। আর সেই থেকেই নাকি রমনার বটমূলে খাওয়া শুরু হয় পান্তা ইলিশ। তবে এখনো এককভাবে কেউই দাবী করতে পারেননি যে বাংলাদেশের বৈশাখের সকালে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার রীতি আসলে কে শুরু করেছে।
প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে পান্তা-ইলিশ বাঙালি খুব ঘটা করে খেলেও অনেকেই এর সমালোচনাও করে থাকেন। সমালোচকদের মতে, শহরে পান্তা ভাত খাওয়া আমাদের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সংস্কৃতিকে ব্যঙ্গ করা। এটি শুরু হয়েছিল টাকা কামানোর ধান্দায়, সংস্কৃতি-প্রেমের জন্য নয়।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: