
মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলে হবিগঞ্জ রোডে অযত্নে অবহলোয় পড়ে আছে পুরাতন নিদর্শন দৃষ্টিনন্দন ত্রিপুরা মহারাজার স্থাপনা কাচারী বাড়িটি। এই বাড়ির সাথে শান বাঁধানো ঘাটসহ একটি বিশাল পুকুর আর কাচারী বাড়ির নাম অনুসারে এর পাশেই নির্মিত হয়েছে বর্তমানে কাচারী জামে মসজিদ।
এ উপজেলায় অবস্থিত শতাব্দীর প্রাচীন নিদর্শন ঐতিহাসিক ত্রিপুরা মহারাজার কাচারী বাড়িটি সংস্কারের অভাবে বর্তমানে জড়াজীর্ণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে।পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলের অনেক পুরাকীর্তি ও ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানের মধ্যে এটি অন্যতম। ১৮৯৭ সালে তৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজা এটি নির্মাণ করেন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের অভাবে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহাসিক কাচারী বাড়ি। ইতিমধ্যে এসব পুরাকীর্তির কোনটি আংশিক এবং কোনটি পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে এসে দাড়িয়েছে। দেওয়াল গুলোতে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল, বিল্ডিংগের ছাদে দেখা দিয়েছে ফাটল, পুরো স্থাপনা জুড়ে শেওলা জমাট বেঁধেছে।
কাচারি বাড়িটি প্রায় ১.৬৭ একর জায়গার ওপর নির্মিত শতাধিক বছরের পুরনো একতলা কাচারি বাড়িটি প্রস্থে ৩০ ফুট ও দৈর্ঘ্যে ২০ ফুট লম্বা।এতে রয়েছে ৩টি কক্ষ, ৮টি দরজা ও ৯টি জানালা।যার প্রতিটি দেয়াল ১২ ইঞ্চি চওড়া ও প্রাচীন চুন–সুরকি দ্বারা নির্মিত।
কারুকাজও রয়েছে চোখে পড়ার মতো।১৮৯৬ সালে এক ভূমিকম্পে এ অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হলে উপজেলার মতিগঞ্জের সদর দপ্তর বিলাসছড়ার হুমকির মুখে পতিত হওয়ায় তা শ্রীমঙ্গলে স্থানান্তর করা হয়।
ওই সময় শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ সড়কে কাচারী বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন ত্রিপুরা মহারাজা।তৎকালীন সময়ে মহারাজার পদস্থ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শৈলেন্দ্র গুহ শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের খাজনা আদায়ের জন্য সহকারি ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।এ কাচারী বাড়িতে তখন খাজনা আদায় হত।
ইতিহাস পিপাসুরা সহজেই ইতিহাস সমৃদ্ধ ত্রিপুরা মহারাজার কাচারি বাড়িটি থেকে জানতে পারবেন অষ্টাদশ শতকে ত্রিপুরার মহারাজা কৃষ্ণ মাণিক্য কিভাবে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন এবং পরবর্তীতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক ত্রিপুরার সূচনালগ্নে মহারাজ মানিক্য বাহাদুর দেববর্মা কিভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন।
২০১৭ সালের তৎকালীন ভূমি (সহকারী কমিশনার) মো. নুরুল হুদা বলেছিলেন , ২০১৪ সালে ত্রিপুরা মহারাজার ১২০ বছরের প্রাচীন এ কাচারি বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। ভবনটিকে কিছু রং করা হলেও বৃষ্টিতে রোদে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। একটি নেমপ্লেট লাগানো হয়েছিল।বিশ্বব্যাপী পরিচিত ও দেশের অন্যতম পর্যটন উপজেলা এবং চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও এসব বিষয় মাথায় রেখে এ কাচারি বাড়িটি পর্যটকদের জন্য অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মতই আকর্ষনীয় করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এমনটি অতীতে বহুবার বহু কর্মকর্তারা বলে গেছেন কিন্ত তাতে কোন কাজ হয়নি। এটি নিয়ে বেশ কয়েক বার দফায় দফায় উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়ে কাজের কাজ হচ্ছে না। স্থানীয়দের দাবী এটিকে দ্রুত সংস্কার করে ত্রিপুরা মহারাজার কাচারী বাড়িটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক।
শ্রীমঙ্গলের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শ্রীমঙ্গল দ্বারিকাপাল মহিলা কলেজের অধ্যাপক রজত শুভ্র চক্রবর্তী জানান,বেশ কবার সরকারী কর্মকর্তারা সংস্কারের কথা জানালেও হালকা কিছু কাজ করে এখানেই শেষ। স্থানীয়ভাবে এটিতে কাজ করা হচ্ছে না।ফলে এই অঞ্চল থেকে ত্রিপুরা মহারাজার কাচারী বাড়িটি সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে।
স্থাণীয়দের দাবী বর্তমানে বাড়িটি অযত্নে অবহেলায় ও সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের সম্মুখীন।এটি দেখার যেন কেহ নাই।এই ভবনটি সংস্কার করা হলে ঐতিহ্যের দর্শন হয়ে নতুন প্রজন্মের নিকট ইতিহাসে শিক্ষণীয় বিষয় হওয়ার পাশাপাশি দর্শনীয় কেন্দ্রও হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / মো.জহিরুল ইসলাম/কেএন
আপনার মতামত লিখুন: