
নিউজ ডেস্ক : নতুন টাকায় সালামি দেয়া আবহমান কাল ধরে চলে আসা ঈদ ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময়ের পরিক্রমায় বদলেছে প্রযুক্তি, তবে বদলায়নি ঐতিহ্য। বরং ঐতিহ্যে লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। যার সঙ্গে মিশে আছে মানুষের অকৃত্রিম আবেগের বহিঃপ্রকাশ।
ঈদে অনেকেই বাড়ি ফিরতে পারেন না। বঞ্চিত হন প্রিয়জনদের সান্নিধ্য থেকে, তবে আপন মানুষদের সালামি কিংবা বকশিস পাঠিয়ে সেই দুঃখ ভোলার চেষ্টায় থাকেন তারা। এ রকমই একজন তেজগাঁয়ের বাসিন্দা মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। চাকরি করেন বিজি প্রেসে। ঈদে বাড়ি না গেলেও প্রিয়জনদের সালামি পাঠাতে ভোলেননি। তিনি বলেন, আমি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমার বন্ধু ও বোনকে ঈদ সালামি পাঠিয়েছি।
এভাবেই ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় খুব সহজেই প্রিয়জনদের কাছে সালামি বা ঈদ বকশিস পাঠাতে পেরেছেন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের মতো আরও অনেকেই। ঝামেলামুক্ত ও তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছে যাওয়ায় এবারের ঈদে মোবাইলের মাধ্যমে সালামি ও বখশিস পাঠানোর প্রবণতা সাড়া ফেলেছে।
মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট মো. শাহজালাল বলেন, ঈদের সময় বিকাশ, রকেট ও নগদ ব্যবহার করে অধিকাংশ মানুষই ১০০ থেকে ৩০০ টাকা প্রিয়জনকে পাঠাচ্ছেন। সম্ভবত তারা ঈদের সালামি বাবদই এগুলো পাঠিয়েছেন।
সেন্ড মানিতে বাড়তি চার্জ না থাকায় নিজেদের প্লাটফর্মে এবারের ঈদে সালামি ও বকশিস লেনদেনে গ্রাহকদের ব্যাপক সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের এমএফএস সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ।
প্রতিষ্ঠানটির হেড অব পাবলিক কমিউনিকেশন্স মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, শুরু থেকেই নগদে সেন্ড মানি একদম ফ্রি। কাজেই আলাদা করে আমরা সালামি পাঠানো নিয়ে কোনো ক্যাম্পেইন করিনি। ফলে সারা বছরই নগদের সালামি ফিচারটির সুবিধা নেয়া সম্ভব। এরপরেও যদি কেউ নগদ দিয়ে সালামি দেন বা দিয়েছেন, তাদের জন্য একটি অপশন রাখা ছিল, সেটি হচ্ছে রেফারেন্সের জায়গাটিতে গিয়ে লিখে দেয়া সালামি বা কোনো খুদে বার্তা বা ঈদি। এ ধরনের খুদে বার্তা যদি কেউ লিখতে চায়, তাহলে সে অপশনটিও ছিল
সালামি নিয়ে কোনো ক্যাম্পেইন না করার পরও ব্যাপক সাড়া পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষ করে ঈদের আগের দুই দিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পর দিনও আমরা বিষয়টি লক্ষ্য করেছি। নগদের সাধারণত গড় লেনদেন যা হয় বা টিকিট সাইজ, সেটি ২ হাজার টাকার ওপর। কিন্তু আমরা এ তিন থেকে চার দিন দেখেছি যে এই টিকিট সাইজ অনেক ছোট হয়েছে গেছে। সেটি দেড় হাজার টাকারও নিচে নেমে গেছে। তা ১ হাজার ২০০ টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। আমরা লেনদেনের ধরণ দেখে বুঝতে পারছি যে এগুলো মূলত সালামির উদ্দেশ্যেই পাঠানো হয়েছে। সাধারণত সালামির অংকগুলো একটু ছোটই হয়, খুব বড় হয় না। কাজেই সালামি দেয়ার কারণে আমাদের অ্যাভারেজ টিকিট সাইজ কমে এসেছে।
দূর থেকে শুধু ঈদের সালামি কিংবা বকশিসই নয়; মানুষের মধ্যে শুভেচ্ছা, আশির্বাদ ও ভালাবাসার বার্তা পাঠানোর আকাঙ্ক্ষাও থাকে। দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস প্লাটফর্ম বিকাশের মাধ্যমে ঈদ বকশিস কিংবা সালামি পাঠানোর সঙ্গে প্রাপকের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বার্তাও পাঠাতে পারছেন গ্রাহকরা।
প্রতিষ্ঠানটির চিফ কমিউনিকেশন্স অফিসার মাহফুজ সাদিক বলেন, ‘আমরা সব সময় গ্রাহক বা ক্রেতাকেন্দ্রিক। আমরা দেখেছি আমাদের গ্রাহকের কোন সেবাটি সবচেয়ে বেশি কাজে আসবে। ঈদের চিরাচরিত এ ধারণার সঙ্গে আমরা নতুন পদ্ধতিগত একটি উদ্ভাবন আনার চেষ্টা করেছি যে, মানুষ একে অপরকে বিকাশের মাধ্যমে শুধু টাকা সালামি হিসেবে পাঠাতে পারবেন না; তারা একটি সুন্দর বার্তাও পাঠাতে পারবেন। এ ধরনের বার্তা দিয়ে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সালামি দেয়ার এ সেবাটিকে আমরা চালু করেছি।
ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের এই যুগে জীবন যত আধুনিক হচ্ছে, বাড়ছে জীবনের গতি। গতিশীল এই জীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে শুধু ঈদের সালামি কিংবা বকশিসই নয়; যেকোনো আর্থিক লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর মানুষের নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে।
এ বিষয়ে নগদের হেড অব পাবলিক কমিউনিকেশন্স মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের সেবা বিতরণ করতে গিয়ে খেয়াল করেছি যে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার লেনদেনে বা তাদের প্রাত্যহিক যত কাজকর্ম আছে যেমন- পেমেন্ট, বিল পেমেন্টে থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জিনিস এখন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্ল্যাটফর্মে চলে এসেছে। আমি মনে করি, এমনও হওয়া সম্ভব যে একজন মানুষ বাসা থেকে বের হওয়া থেকে শুরু করে সিএনজি ভাড়া, অফিসে আসা, রেস্তোরাঁয় যাওয়া, বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত তার সারাদিনের সব ধরনের লেনদেন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্ল্যাটফর্মে মাধ্যমে করতে পারবেন।
শুধু তাৎক্ষণিক লেনদেনের মাধ্যম হিসেবেই নয়, মানুষের আর্থিক প্রয়োজনের সব ধরনের চাহিদা মেটাতে নতুন নতুন অফার এবং আর্থিক পণ্য নিয়ে আসছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
এক্ষেত্রে ন্যানো লেনদেনের (ক্ষুদ্র ঋণ) কথা উল্লেখ করে বিকাশের চিফ কমিউনিকেশন্স অফিসার মাহফুজ সাদিক বলেন, আমার মনে হয় যে, বাংলাদেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা এমএফএস খাতে সামনের দিকে আমরা যে সম্ভাবনাগুলো দেখতে পাচ্ছি সেগুলোর মধ্যে কিছু আমরা ইতোমধ্যে শুরু করেছি। যেমন- বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ন্যানো লোন। অর্থাৎ বিকাশের লাখ লাখ গ্রাহককে তাদের লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ইতোমধ্যে কোটি কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এসব ঋণ আমাদের সহায়ক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা এ সেবাগুলো আরও বাড়াবো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১৩টি এমএফএস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশে এমএফএসের মোট গ্রাহক ১৯ কোটি ৬৮ লাখ। গত এক বছরে এমএফএসের মাধ্যমে দৈনিক অর্থ লেনদেন ২৪ শতাংশ বেড়েছে।
তবে প্রতি বছরই ঈদের সময়ে বেড়ে যায় মোবাইলে অর্থ লেনদেনের পরিমাণ। গত বছরের এপ্রিল মাসেও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে হয়েছিল রেকর্ড এক লাখ ৭ হাজার কোটি টাকার লেনদেন। সে হিসেবে চলতি এপ্রিল মাসেও এমএফএস-এর মাধ্যমে লেনদেন অনেকটাই বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই লেনদেনের বড় অংশজুড়ে থাকবে ঈদের সালামি কিংবা বকশিস।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: