
কুমিল্লা প্রতিনিধি: মহান একুশে ভাষার মাস চলমান। আর ক’দিন পরেই পালিত হবে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে বিশ্বের অসংখ্য দেশে। আমাদের দেশেও দিবসটি সরকারী-বেসরকারী ভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে। এ উপলক্ষে লাকসাম উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো নিয়েছে ব্যাপক আয়োজন।
বিশেষ করে দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে এটা বাঙ্গালী জাতির ত্যাগ আর গৌরবের বিষয়। এ মাসে মনে পড়ে এ অঞ্চলের প্রবীন রাজনীতিবিদ, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক কমরেড জিন্নতের রহমানের রেখে যাওয়া অনবদ্য স্মৃতি। তিনি গত ২রা ডিসেম্বর ২০১৬ চলে গেলেন না ফেরার দেশে। কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ভাষা সৈনিক জিন্নত ছিলেন মাতৃভাষার অস্তিত্ব আর প্রেরনা।
প্রবাদ আছে, মাতৃভাষা একটি দেশ ও জাতির অস্তিত্ব। দীর্ঘ ৬৮ বছর পার হলেও বাঙ্গালী জাতিকে সেই অস্তিত্ব রক্ষায় অনেক ত্যাগ ও রক্ত ঝরাতে হচ্ছে। মানুষের আবেগ, অনুভুতি আর মত প্রকাশের তীব্র ক্ষমতা অন্য ভাষার চেয়ে বাংলা ভাষার কোন বিকল্প নেই। প্রকৃতির মতোই আমাদের বাংলা ভাষা অতি কোমল আর শক্তিধর গতিময়। বাঙ্গালী চেতনার নিয়ামক এ মাতৃভাষা বাংলা অর্জনে ত্যাগ স্বীকার ও জীবন দিয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। তবুও মাতৃভাষার দাবী ছাড়েনি ওই সময়ে ভাষা সৈনিকরা।
আজকের এ মাসে এ অঞ্চলের মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছে মাতৃভাষার প্রতীক কমরেড জিন্নতকে। তিনি রেখে গেছেন আগামী নতুন প্রজন্মের জন্য তার দেশপ্রেম, ত্যাগ, আদর্শ ও নীতি দর্শন বানী। তিনি নিজের জীবনের দুঃখ- যন্ত্রনা আর ত্যাগের উপলব্ধিতে অন্যের ওইসব কষ্টে প্রচন্ড ভাবে মূমূর্ষ হতেন। আজও তাকে উন্নত ও মানবিক জীবন বোধে শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছে লাকসাম তথা কুমিল্লার রাজনৈতিক পরিমন্ডলের সকল শ্রেনী পেশার মানুষ।
এ দিকে বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে গবেষনা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ করবে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের মাধ্যমে। গেøাবাল প্লেট ফরমে একটি অগ্রগামী ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে। গবেষনার মাধ্যমকে ১৬টি টুলস্ও তৈরী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব সফটওয়ার ও টুলসের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সঠিক ষ্পেসিফিকেশনও করা হবে বলে ২০১৭ সালে মন্ত্রি পরিষদের একনেক সভায় একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় ভাবে দাবী উঠেছে ভাষা সৈনিক কমরেড জিন্নতের স্মৃতি স্মরনীয় করে রাখতে তার নামে এলাকায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ ও সড়কের নামকরনের। তিনি অর্থ প্রাচুর্যে বিত্তবান না থাকলেও মনের দিক থেকে ছিলেন অনেকটাই শক্তিশালী। নিজেকে লোভ-লালসা কিংবা পরিবারের সুখ-শান্তিকে উপেক্ষা করে এ অঞ্চলের নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে বহু ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
তিনি আজ মরেও যেন অমর। দলমত নির্বিশেষে তিনি সবার সাথে প্রানখুলে মিশতেন বলে ‘‘জিনু ভাই’’ নামে সবার কাছে পরিচিত। আবার কেউ কেউ ভাষানী সাব বলে ডাকতেন তাকে। এছাড়া একজন ত্যাগী, প্রবীন রাজনীতিবিদ, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে তিনি এলাকার মানুষের কাছে ছিলেন অত্যান্ত আপনজন। তবে এ ত্যাগের কোন সীমানা না থাকলেও ভাষার মাস আসলে শুরু হয় ভাষা সৈনিকের নামে অপতৎপরতা। ফলে প্রকৃত ভাষা সৈনিকদের আত্মত্যাগ থেকে যায় পর্দার অন্তরালে।
এ দিকে দীর্ঘ ৬৮ বছর পূর্বের রক্তাক্ত ইতিহাসের মধ্যে বাংলা ভাষা সবটুকু গৌরব কিংবা অর্জন যেন আমাদের অহংকার। আমাদের এ মহান মাতৃভাষার গতি-প্রগতি আর বন্ধন-মুক্তির মধ্যেই বিদ্যমান। ভাষিক সৌন্দর্যের প্রতীক মানুষের ভালবাসা প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করে তুলেছে আমাদের এ মাতৃভাষাকে। এছাড়া আমাদের বাংলা ভাষা বিশ্বের অসংখ্য দেশে সবচেয়ে মিষ্টি ও মধুর ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আজকের মহান এ মাসে মরহুম ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কমরেড জিন্নতকে সংগ্রামী লাল সালাম এবং এ মহান ভাষা ব্যাক্তিত্বকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রত্যাশা করছেন এ অঞ্চলের মানুষ।
ঢাকানিউজ২৪.কম / মশিউর রহমান সেলিম/কেএন
আপনার মতামত লিখুন: