• ঢাকা
  • শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার নেপথ্যে পাঁচ কারণ


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ০৬ এপ্রিল, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:৩৬ এএম
তা নির্ভর করে বাজার পরিস্থিতির ওপর

নিউজ ডেস্ক:  আমদানিকারকের কারখানা থেকে প্রক্রিয়াজাত হয়ে ভোগ্যপণ্য সরাসরি যাওয়ার কথা পাইকারি মোকামে। সেখান থেকে খুচরা বাজার হয়ে পণ্য যাওয়ার কথা ভোক্তার কাছে। বাজারে থাকা ৯৮ শতাংশ পণ্যের বিপণন ও সরবরাহ ব্যবস্থা এভাবে চললেও ব্যতিক্রম হচ্ছে ভোজ্যতেল। মাত্র ছয় আমদানিকারক ১৬ কোটি মানুষের ভোজ্যতেল সরবরাহ করায় এখানে গড়ে উঠেছে ভিন্ন এক পদ্ধতি। পণ্য জাহাজে থাকতেই আমদানিকারকরা বড় ট্রেডিং কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে থাকেন 'এসও বা সরবরাহ আদেশ'।

জাহাজ থেকে নামানোর পর তেল পরিশোধন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই এসও আবার কমিশনের ভিত্তিতে হাত বদল হয় কয়েক দফা। যতবার হাত বদল হয় ততবার বাড়তে থাকে এর দাম। একটি এসও এভাবে চার-পাঁচ দফা হাত বদল হয়ে আসে পাইকারি মোকামে। এতে বেড়ে যায় দাম। দাম নিয়ে কারসাজি করায় পাইকারি মোকামে থাকা 'ডিও প্রথা' বছর কয়েক আগে বাতিল করা হয়েছিল। তবে একই আদলে এরপর গড়ে ওঠে এই 'এসও প্রথা'।

পণ্যের সরবরাহ আদেশ বারবার হাত বদল হওয়ায় কারসাজির হোতাকেও চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। দাম বাড়লে ভোজ্যতেলের আমদানিকারক দায় চাপায় এসও সরবরাহকারীর ওপর। এসও সরবরাহকারী দায় চাপায় পাইকারদের ওপর। পাইকার আবার দায় চাপায় খুচরা বাজারের ওপর। খুচরা ব্যবসায়ী আবার দায়ী করে পাইকারকে। 'টম অ্যান্ড জেরির' এই খেলা চলতে চলতেই মাঝখানে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে ভোক্তার পকেট। এদিকে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কম থাকায় আজ আবারও ভোক্তা অধিদপ্তরে ব্যাখ্যা দিতে যাচ্ছেন চার আমদানিকারক।

ফের ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার নেপথ্যের কারণ জানতে কথা বলেছে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীর সঙ্গে। উঠে এসেছে দাম বাড়ার নেপথ্যের পাঁচ কারণ। এসও যত বেশি হাত বদল হয়; দাম তত বেশি বাড়ে বলে মত দিয়েছেন সবাই। মাত্র ৬ প্রতিষ্ঠানের কাছে ভোজ্যতেলের পুরো বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকাটাও বড় একটি সমস্যা বলে মনে করছেন অনেকে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া, এসও হাত বদলকারীদের তথ্য না থাকা ও প্রশাসনের মনিটরিং দুর্বলতায়ও বাজার অস্থির হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'যে কোনো পণ্য যত বেশি হাত বদল হবে তত বেশি এর দাম বাড়বে। কারখানা থেকে পণ্য সর্বোচ্চ সহজ উপায়ে পাইকারিতে নিতে হবে। পাইকারি থেকে খুচরাতে নেওয়ার পদ্ধতিতেও থাকতে হবে স্বচ্ছতা। এ জন্য কারা এসও কিনছে, সে এটা কার কাছে কত দামে বিক্রি করছে, সেটির ডাটাবেজ থাকতে হবে। এটি অনলাইনে সংরক্ষণও করতে হবে প্রশাসনকে। যারা এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকবে তাদের প্রত্যেককে নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। এমনটি করে সারের ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছিলেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। এখানেও এই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।'

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আসলে ১৬ কোটি মানুষের তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র ছয়টি প্রতিষ্ঠান। এ কারণে এখানে ভিন্ন কিছু পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। সুযোগ তৈরি হয়েছে মনোপলির (একাধিপত্য)। এটি নিয়ে কাজ করা উচিত প্রতিযোগিতা কমিশনের।'

পাইকারি মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোজ্যতেলের একটি এসও কত বেশি হাত বদল হবে, তা নির্ভর করে বাজার পরিস্থিতির ওপর। এখন রমজান চলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির হওয়ায় এসও'র চাহিদা বেশি। এজন্য নিজের কমিশন রেখে একজন আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে এসও। কয়েক হাত বদল হওয়ার পর সর্বশেষ যিনি এটা মিল গেটে নিয়ে যান, তিনি আবার কিছু লাভ করে তা সরবরাহ করেন পাইকারি মোকামে। এতে সরকার নির্ধারিত দামে বেচাকেনা হচ্ছে না ভোজ্যতেল। মিল গেট ও পাইকারিতে সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা মানতে পারছে না কেউই।

খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের এসও সরবরাহ করা মো. খোরশেদ বলেন, 'তিন দফা হাত বদল হয়ে আমার কাছে আসা এসও নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে বসে আছি। মিল গেটে গাড়িও পাঠিয়েছি। তবু তেল পাচ্ছি না।'
জানা যায়, এক সপ্তাহ ধরে কারখানাগুলো পুরোনো সরবরাহ আদেশ অনুযায়ী ভোজ্যতেল সরবরাহ করছে। নতুন করে সরবরাহ আদেশ বাজারে ছাড়ছে না। এতে সংকট তৈরি হচ্ছে। বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে।

ভোজ্যতেলের বড় ট্রেডিং কোম্পানি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনেরও সভাপতি। ভোজ্যতেলের চলমান সংকট প্রসঙ্গে সমকালকে তিনি বলেন, 'মিল গেট থেকে যত সহজে পণ্য পাবেন পাইকাররা তত নিয়ন্ত্রণে থাকবে দাম। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ঠিক না থাকলে সংকট তৈরি হবে। সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে, কারা করছে- তা খুঁজে বের করতে হবে প্রশাসনকে। যারা কারসাজির সঙ্গে যুক্ত থাকবে তাদের প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনা হোক। কিন্তু অযথা যাতে কেউ হয়রানি না হন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে প্রশাসনকে।'

ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২৮ মার্চ মণপ্রতি যে পামঅয়েলের সরবরাহ আদেশ (এসও) ছিল ৫ হাজার ২৫০ টাকা, তা এখন ৫ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মণপ্রতি খোলা সয়াবিনের এসও ছিল ৫ হাজার ৭০০ টাকা, যা এখন ৬ হাজার টাকা। আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে মণপ্রতি গড়ে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image