• ঢাকা
  • শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে আরেকবার ভাবুন


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০১:২১ এএম
সেবা ও পণ্যের দাম বাড়ানো থেকে বিরত থেকেছে
পাইকারি বিদ্যুতের দাম

এম আবদুল্লাহ

নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামের প্রভাবে অসহনীয় মূল্যস্ম্ফীতির মধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসিতে রোববার অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে গ্রাহক পর্যায়ে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ১ টাকা ১০ পয়সা হারে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কারিগরি কমিটি। শুনানিতে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভুল নীতি থেকে বেরিয়ে আসার ওপর জোর দেন।

ডিসেম্বর থেকে পাইকারি বিদ্যুতের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর পরই গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়। সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রশ্নে যে অনমনীয়- তা স্পষ্ট হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সাম্প্রতিক কয়েকটি বক্তব্যে। হঠাৎ বিইআরসি আইন সংশোধন করে বিদ্যুৎসহ সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়ানো বা কথিত সমন্বয়ের ক্ষমতা সরকারের এখতিয়ারে নেওয়ার মধ্যেও সরকারের এহেন বেপরোয়া মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

রেকর্ড হারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, তার আগে গ্যাসের দাম বাড়ানো এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহে সংকটের কারণে জীবনযাত্রার সব পর্যায়ে ব্যয় বেড়েছে কল্পনাতীতভাবে। মানুষ খাদ্য থেকে শুরু করে জীবনযাপনের প্রতিটি পর্যায়ে কাটছাঁট করে কোনোমতে বেঁচে থাকার লড়াই করছে। সঞ্চয় ভেঙে জীবনের চাকা সচল রাখার প্রাণান্ত চেষ্টার খবর আসছে সংবাদমাধ্যমে। কোলের সন্তান বিক্রি করে সংসার চালানোর মতো হৃদয়বিদারক একাধিক ঘটনা সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে। এমন একটি পর্যায়ে বিদ্যুতের মতো জীবনের অপরিহার্য একটি উপাদানে আরেক দফা ব্যয়-উল্লম্ম্ফন ঘটলে তা যে জনজীবনে কত বড় অভিঘাত হয়ে দেখা দেবে- এটি অনুধাবনে তেমন গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না।

একটি সংবাদপত্র সোমবার হিসাব কষে দেখিয়েছে, প্রস্তাবিত হারে বিদ্যুতের দাম বাড়লে চার সদস্যের একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মাসিক খরচ কমপক্ষে ১৮২ টাকা বাড়বে। ব্যয় বৃদ্ধি এখানেই থেমে থাকবে না। বিদ্যুৎ খরচ বাড়ার প্রভাবে পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়বে। অনিবার্যভাবে সব পণ্যের দাম আরেকবার বেড়ে যাবে। রাজধানীর একজন বাসিন্দাকে উদ্ৃব্দত করে সংবাদপত্রের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, চার-পাঁচ বছর আগে যেখানে মাসিক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হতো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, এখন তা পরিশোধ করতে হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা।

তথ্য-পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্য ছিল ৩ টাকা ১৫ পয়সা। ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ১১ দফায় দাম বাড়ানোর ফলে বর্তমানে ইউনিটপ্রতি গড় মূল্য দাাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৫৬ পয়সা। অর্থাৎ এরই মধ্যে বর্তমান সরকার ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ বাড়িয়েছে। এবার ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ১০ পয়সা বাড়ানো হলে আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদ মিলিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ার হার দাঁড়াবে ১৬১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগামী এক বছরে সরকার বিদ্যুতের দাম আর না বাড়ালেও প্রতি পাঁচ বছর মেয়াদে গড়ে মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে প্রায় ৫৪ শতাংশ। স্বাধীন বাংলাদেশে অতীতে কোনো সরকার এত উচ্চ হারে বিদ্যুতের দাম চাপিয়ে দেয়নি।

দেশের উন্নয়ন তথা জিডিপি প্রবৃদ্ধির একটি বিশেষ উপাদান হিসেবে বিদ্যুৎ খাতকে বিবেচনা করা হয়। অস্বীকার করার সুযোগ নেই, বর্তমান সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। একই সঙ্গে দেশকে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ আমদানিকারক দেশে পরিণত করা হয়েছে- সেটিও ভুলে গেলে চলবে না। প্রতিবেশী দেশ থেকে এখন প্রায় ২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি রয়েছে।

বসে থাকা ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় চুক্তি নবায়ন, ৪১ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির মুখে পড়ে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল পরিশোধে পিডিবির অপারগতা, জ্বালানির কথা না ভেবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানো, নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন খরচ ভারতের চেয়ে ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি, ২৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার দাবি সত্ত্বেও বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে শীতের জন্য অপেক্ষা, বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় পাঁচ বছরের ব্যবধানে ৮ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হওয়ার মতো ইস্যুগুলোকে পাশ কাটানোর সুযোগ নেই। গত এক যুগে বিদ্যুৎ খাতে কী হয়েছে, তা সবার জানা। কুইক রেন্টাল, রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে সেগুলো বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের উদ্বেগজনক তথ্য-পরিসংখ্যান চাপা দিয়ে রাখা যায়নি। জ্বালানি খাতের জন্য দায়মুক্তি আইন করে গোটা খাতকে এক ধরনের লুটের রাজ্যে পরিণত করা হয়েছে।

ভুল নীতি-পরিকল্পনা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে জোর না দিয়ে দাম বাড়ানোর প্রতি মনোযোগ দিয়ে সরকার কার্যত দেশের মানুষের সাধ্য-সামর্থ্যের যে তোয়াক্কা করছে না- সেটিই জানান দিচ্ছে। এক শ্রেণির লুটেরা ও অর্থ পাচারকারীকে সুযোগ করে দিতে জনগণের ওপর বাড়তি খরচের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সাধারণভাবে অতীতে নির্বাচনী বছরে সরকার সেবা ও পণ্যের দাম বাড়ানো থেকে বিরত থেকেছে।

কিন্তু নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং ভোটারদের কাছে জবাবদিহির দিনগুলো অতীত হওয়ায় এখন আর সে অবস্থা নেই। তবুও জনগণের কষ্ট অনুধাবনের দাবিদার সরকারের উচিত হবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা।

লেখক:  এম আবদুল্লাহ, সাংবাদিক ।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image