
নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসসিংহ: ওরশে গিয়ে খুন হয় নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চিথোলিয়া গ্রামের মৃত ইনচান মিয়ার ছেলে কিশোর সুমন। হত্যাকান্ডের ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও পেটে দানাপানি পড়ছে না নিহত সুমনের মা রেনু আক্তারের। একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে পাগল প্রায় এই মা মাঝে মাঝে বলে উঠেন, ‘আমার সুমনরে আইনা দেন, সুমন খই?’ খুনিদের ফাঁসি চাই বলে বারবার মুর্চা যান তিনি।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা চিরাং ইউনিয়নের চিথোলিয়া গ্রামে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় নিহত কিশোর সুমনের মা রেনু আক্তার অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছেন। তাকে ঘিরে আছেন বিমর্ষ অশ্রুসজল স্বজনরা। সুমনের চাচা হারিছ মিয়া জানান, দুই বছরের সুমনকে রেখে মারা যান পিতা ইনচান মিয়া। বিধবা স্ত্রী রেনু আক্তার মানুষের বাড়িতে কাজ করে বড় মেয়ে ঝুমা আক্তারকে বিয়ে দেন।
মেঝো মেয়ে রুমা আক্তার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। একমাত্র ছেলে সুমন (১৪) কে খুব কষ্টে মানুষ করছিলেন মা। এ সময় কথা হয় সুমন যে দোকানে কাজ করত সে দোকান মালিক চিথোলিয়া গ্রামের
ওমর কাইয়ুম উজ্জল জানান, চিথোলিয়া মোড়ে তার সারের দোকানের কর্মচারী ছিল সুমন মিয়া। তিনি এবং স্থানীয় উজ্জল, ভগ্নিপতি রাজু আহমেদ, চাচা উকিল মিয়া, কাজল মিয়া, চাচাতো ভাই শফিকুল ইসলাম, চাচি আম্বিয়া, পারভিন, মিলনা আক্তারসহ সকলের দাবী রেনু আক্তারের একমাত্র পুত্র কিশোর সুমনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
গত শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) চিথোলিয়া মোড়ে ওই গ্রামের পূর্বপাড়ার সুমনের বয়সি কিছু ছেলে ঘোরাফেরা করছিল। ওই দিন চিরাং ইউনিয়নের সাগুলী গ্রামে হাসেন শাহ্’র মাজারে ছিল বার্ষিক ওরশ । রাত ৯টার দিকে ওরশে যায় সুমন ও তার বন্ধু রিয়াজ। মাজারের কাছে গেলে আগে থেকে উৎপেতে থাকা পূর্বপাড়ার কয়েকজনের কিশোর গ্রুপ ধারালো অস্ত্র নিয়ে রিয়াজ ও সুমনের উপর হামলা করে। এতে ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হয় সুমন ও রিয়াজ। স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করলে রাত ৩টায় মারা যায় সুমন। রিয়াজ এখনও মুমুর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পূর্বপাড়ার অনেকেই বাড়ি ছেড়ে রয়েছেন। নিহত সুমনের পশ্চিমপাড়ায় বিরাজ করছে নিরবতা। মাঝে মধ্যে সুমনের বাড়ি থেকে ভেসে আসে মায়ের আহাজারি। প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনরা শান্তনা দিচ্ছেন সুমনের মাকে। গ্রামে পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।
গ্রামের বেশ কয়েকজন জানান, এই গ্রামে “চিথোলিয়া সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সমিতি” নামে একটি সমিতি রয়েছে। সমিতির নামে নগদ অর্থসহ অনেক জমি রয়েছে যা ৫০কোটি টাকার সম্পদ হবে।
উজ্জল মিয়া আরও জানান, আতাউর রহমান নামে একজন সমিতির সম্পাদক ছিলেন। গ্রামে প্রবীণ, যুব ও কিশোর গ্রæপ করে তা পরিচালনা করেন তিনি। এই সমিতির কমিটি ও টাকা পয়সা নিয়ে গ্রামে একাধিকবার হামলা সংঘর্ষ, মারামারি, লুটপাট ও ভাংচুর হয়েছে। যার মামলা মোকদ্দমা এখনও চলমান।
গ্রামের অন্য একটি সূত্র জানায়, গত ৪/৫ মাস পূর্বে চিথোলিয়া গ্রামের মাঠে পূর্বপাড়া ও পশ্চিমপাড়ার কিশোরদের মাঝে ফুটবল খেলায় ঝগড়া হয়। এই ঝগড়াকে কেন্দ্র করে পূর্বপাড়ার কিশোরদের সাথে তাদের অভিভাবকরাও অস্ত্র-সস্ত্র নিয়েও পশ্চিমপাড়ায় হামলার চেষ্টা করে। পড়ে পশ্চিমপাড়ার লোকেরা পূর্বপাড়ার লোকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে মিমাংসা করেন। এছাড়া সমিতিকে কেন্দ্র করে
মারামারি, ভাংচুর, মামলা মোকদ্দমা, খেলা নিয়ে ঝগড়া ইদ্যাদি কারণে গ্রামে গ্রুপিং রয়েছে। ফলে কিশোরদের মাঝেও এর প্রভাব পড়েছে।
গত শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সাগুলী গ্রামের মাজারে যাবে দুই বন্ধু সুমন ও রিয়াজ এমনটি মনে হয় হত্যাকারীরা জানতে পেরে আগে থেকেই ধারালো অস্ত্র নিয়ে মাজার প্রাঙ্গণ অপেক্ষা করছিল। সুমন এবং রিয়াজ মাজারে যেতেই তারা হামলা করে। এই হামলায় সুমনের মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে আতাউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ঘটনার দিন নেত্রকোনায় ছিলাম। পরে শুনতে পেরেছি মাজারে গিয়ে গ্রামের ছেলেরা ঝগড়া করেছে এবং সুমন নামে একজন নিহত হয়েছে। আমিও প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচার দাবী করছি।
কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ জানান, এখনও মামলা হয়নি। গ্রামের পরিবেশ শান্ত রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: