আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্থানীয় সময় শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। শেষ হবে বিকেল ৪টায়। আনুষ্ঠানিক ফলাফল পাওয়া যেতে পারে রোববার সকালে।
অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০২২ সালের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কায় তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ওই বছরের মে মাসে হাজার হাজার মানুষ সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসের বাসভবনে ঢুকে পড়ে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন গোতাবায়া। ক্ষমতায় বসেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে গত বুধবার মধ্যরাতে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়। এ নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৩৯ জন। তবে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার পর একজন প্রার্থী মারা যান। ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি ভোটার পাঁচ বছরের জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন।
দুই বছরেরও কিছু বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক মন্দা অনেকটাই সামলে নিয়েছে।
২০২২ সালে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থতার পর এখনো তা শুরু করা যায়নি। দেশটির বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। যার ফলে জীবন চালাতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় দারিদ্র্য দ্বিগুণ হয়ে ২৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
এমন পরিস্থিতিতে, এবারের নির্বাচনকে পরবর্তী নেতা বাছাইয়ের পরিবর্তে আইএমএফের কর্মসূচির ওপর গণভোট হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা। সেইসাথে এবারের নির্বাচন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের জন্যও অগ্নিপরীক্ষা বলে মত তাদের।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছাড়ার পর পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই ভোটের আগে শতাধিক সমাবেশ করেন বিক্রমাসিংহে।
শক্ত অবস্থানে আছেন বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়েগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসাও। তিনি সাবেক এক প্রেসিডেন্টের ছেলে, যিনি ১৯৯৩ সালে গৃহযুদ্ধের সময় আততায়ীর হাতে নিহত হন। সাজিথ প্রেমাদাসা এই নির্বাচনে বেশ ভালো করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার ভারতে থাকা নিয়ে যা বললেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট
লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা আরেক প্রার্থী হলেন ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতা অনুড়া কুমার দিসানায়েক। একসময় প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যাওয়া মার্ক্সবাদী দলের নেতা তিনি। তবে শ্রীলঙ্কার সংকট অনুড়া কুমার দিসানায়েকের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
রাজাপক্ষে পরিবার থেকে প্রার্থী হয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী নমল রাজাপক্ষে। এই পরিবার থেকে অতীতে দুজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। একজন হলেন নমলের বাবা মাহিন্দা রাজাপক্ষে আর অপরজন চাচা গোতাবায়া রাজাপক্ষে। নমল লড়ছেন শ্রীলঙ্কান পদুজন পেরামুনা (এসএলপিপি) দল থেকে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা তাঁর আরেক চাচা বাসিল রাজাপক্ষে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নতুন আইন অনুযায়ী, একজন ভোটার তিন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। কোনো একজন প্রার্থী কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বা এর চেয়ে বেশি ভোট পেলে, তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। আর কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা (রান-অফ) ভোট হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: