• ঢাকা
  • শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

আওয়ামী লীগে হানাহানির নেপথ্যে অনুপ্রবেশকারীরা


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৮:৩৮ এএম
শনাক্ত করে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে
আওয়ামী লীগ

সমীর কুমার দে

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ হানাহানি বাড়ছে। এতে প্রায়ই নেতাকর্মীর মৃত্যু ঘটছে। সর্বশেষ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সোনা মিয়া (৫৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা নিজেদের অবস্থান তৈরির জন্য এ ধরনের সংঘাতে যুক্ত হচ্ছেন। দেশের অধিকাংশ জায়গায় বিএনপি ও জামায়াতের বহু নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছেন। তারা নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের ওপর চড়াও হচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি সামনের দিনে আরে অবনতির আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের দায় এড়ানোর চেষ্টা না করে যারা এ কাজে যুক্ত হচ্ছেন, তাদের শনাক্ত করে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, গত এক দশকে রাজনৈতিক হানাহানিতে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৪০০ জনের। নির্বাচন সামনে রেখে শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেবেন তিনি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বলেছেন। এখন যেটা হচ্ছে, যিনি এমপি আছেন, তিনি আবার থাকতে চাইছেন। আবার যারা এমপি মনোনয়ন চান, তারা নিজেদের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছেন। কিন্তু সংঘাত করে মনোনয়ন পাওয়া যাবে না। বরং তাদের কপাল পুড়বে। আবার অনেক সুবিধাবাদী দলে প্রবেশ করেছে। তারাও নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে সংঘাতে জড়াচ্ছেন। দিন শেষে ত্যাগী নেতারাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন।’

গত সোমবার রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সোনা মিয়া নিহত ও কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঐ দিন বিকেলে হারাগাছে কাউনিয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে যান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাণিজ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া ও ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথক স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর রাতে আবারও খানসামার হাটে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপের কর্মী সোনা মিয়া নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

গত মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তারা হলেন জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম। রাত ১০টার দিকে জেলার সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগের দিন গত বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য খাইরুল আলম জেমকে (৫০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এর আগে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে গত ২৬ মার্চ লক্ষ্মীপুরে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। আহত তিন পুলিশসহ পাঁচ জনকে সদর হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা শিপন খলিফা, ইব্রাহিম খলিলসহ ছয় জনকে আটক করেছে পুলিশ। একই দিন বরিশালের উজিরপুরে সংসদ সদস্য শাহে আলমের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ১২ বছর বয়সি এক শিশু নিহত হয়। আহত হন আরো ১৫ জন।

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘নির্বাচন এগিয়ে এলে দেশে সংঘাত বাড়ে—এটা আমাদের সংস্কৃতি হয়ে গেছে। এর মধ্যে সরকারি দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাত নতুন মাত্রা। আওয়ামী লীগ যেটা বলছে, অনুপ্রবেশকারীরা এ ধরনের সংঘাতে জড়াচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? শুধু অনুপ্রবেশ বলে তো তারা দায় এড়াতে পারবে না। এর জন্য তাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। একদিকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা, অন্যদিকে আইনি ব্যবস্থা। এভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।’

এর আগে গত নভেম্বরে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাইয়ে আওয়ামী লীগের উপজেলা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ২০ জন। তখন সম্মেলন মঞ্চে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন এবং জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এভাবে বিভিন্ন জেলায় সংঘাতে জড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইংরেজি নববর্ষ বরণকে ঘিরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে মো. ফিরোজ আহমেদ (২৫) নামের এক যুবক নিহত হন। নিহত ফিরোজ ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) গত ১০ বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক সংঘাত ঘটেছে ৬ হাজার ১২৬টি। এসব সংঘাতে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন। এ ছাড়া আহত হয়েছে ৮৩ হাজার ১৭ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩৯২ জন ও বিএনপির ৮৪ জন নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এ দুই রাজনৈতিক দল ছাড়াও অন্য দলের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে।

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এখন আমাদের দেশে পুঁজিবাদের রাজনীতি হচ্ছে। এটা হলো ক্ষমতার জন্য। নিজেকে ক্ষমতাশালী প্রমাণের জন্য তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন। যে এলাকায় যিনি সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী, তার আয়-উপার্জনও বেশি। ফলে নিজেকে বিত্তশালী বানাতে তারা এ ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন। রাজনৈতিক এই সংঘাতের দায় রাষ্ট্রের। প্রত্যেক নাগরিকের জীবন ও অধিকার রক্ষার দায়ও রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্র সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না।’

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image