• ঢাকা
  • শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

আশি দিনেও সংস্কার হয়নি মহারশি নদীর বাঁধ: চলাচলে দুর্ভোগ


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: সোমবার, ২৯ আগষ্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৫৩ এএম
আশি দিনেও সংস্কার হয়নি
মহারশি নদীর বাঁধ

শেরপুর প্রতিনিধি: আর কত ছবি তুলবেন? আপনার মত আরও কমপক্ষে ৫০জন (সাংবাদিক) ছবি তুলে নিয়ে গেছে। কই নদীর পাড় ভাঙায় পড়ে আছে; ভাঙা গুলোতে এক ছটাক মাটিও পড়ে নাই এহানে। এ রাস্তা দিয়ে আমগোর পোলাপান স্কুলে যাইবার পায় না। আমগোর বাড়ি আধা কিলোমিটার দূরে। অথচ এ নদীর পাড় ভাঙা থাহায়, আরও আড়াই কিলোমিটার ঘুইরে বাড়িতে যাওন লাগে। আমরা খুব অসুবিধায় আছি। আমগো চলাচলের জন্য আগে নদীর পাড় বাইনদে দেন।

সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে এভাবেই এ প্রতিবেদকের কাছে এ কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর পাড় ঘেঁষা রামেরকুড়া গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম। শুধু জহুরুল ইসলামের নয়, এ পথে যাতায়াতকারী সবারই একই কথা।

সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁষা মহারশি নদীটি এখন ঝিনাইগাতীর ‘দুঃখ’ হিসেবে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মহারশি নদীর দুই পাড়ের মাটির বাঁধ সংস্কার না করায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে একাধিকবার সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ক্ষতি হচ্ছে ঘরবাড়ি ও সম্পদের। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই মহারশি নদীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইগাতী উপজেলাটি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি উপজেলা। সীমান্তের ওপারে পাহাড়বেষ্টিত ভারতের মেঘালয় রাজ্য। ভারত সীমান্ত হতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ঝিনাইগাতী উপজেলার মধ্য দিয়ে মহারশি নদীটি প্রবাহিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এর দৈর্ঘ্য ১৭ কিলোমিটার ও গড় প্রস্থ ৫৭ মিটার। মেঘালয়ে বৃষ্টি হলে তা দ্রæত বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে ঝিনাইগাতী উপজেলায় প্রবাহিত হয়ে থাকে। এ সময় পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল তোড়ে মহারশি নদীর দুই পাড়ের মাটির বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও সদর বাজারসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। সেইসঙ্গে অতিঅল্প সময়ে ঢলের পানিতে উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদ প্লাবিত হয়।

গত ৯ ও ১৭ জুন ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মহারশি নদীর বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। ফলে ঢলের পানি নদীর দুই পাড় উপচে দ্রæতগতিতে ঝিনাইগাতী সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে এবং উপজেলার সাত ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। লন্ডভন্ড হয়ে যায় বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিপুলসংখ্যক ঘরবাড়ি ও মৎস্যখামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসলি জমিসহ বিভিন্ন এলাকার আউশ ও সবজি আবাদের।

উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, জুন মাসে দুই দফা পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্ট বন্যায় ঝিনাইগাতী উপজেলার সাত ইউনিয়নের ১ হাজার ৩০টি পরিবারের ৫ হাজার ১৫০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। বন্যায় ১৮টি কাঁচা ও পাকা সড়ক এবং মহারশি নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থানে দেড় কিলোমিটার অংশ ক্ষতি হয়েছে। ২৫টি ঘরবাড়ি ও ২৩টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৮২টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ি ঢলের দুই মাস পরও মহারশি নদীর পূর্বপ্রান্তে রামেরকুড়া, খৈলকুড়া ও নলকুড়া গ্রামে পাহাড়ি ঢলের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন রয়ে গেছে। ঢলের পানির প্রবল তোড়ে ভেঙে পড়া ৮ থেকে ১০টি বাড়ির ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে। রামেরকুড়া-নলকুড়া সড়কের কমপক্ষে আটটি স্থানে ভেঙে গিয়ে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

\ঢলে বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ায় রামেরকুড়া গ্রামের ১৫টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এই এলাকার কয়েক একর জমিতে লাল বালুর স্তর জমে আছে। ফলে আমন আবাদ করা সম্ভব হয়নি। রামেরকুড়া গ্রামে সেচনালার প্রায় ৪০০ ফুট অংশ ভেঙে গেছে। যেসব ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে সেখানে এখন গাছপালা পড়ে রয়েছে।

উপজেলার রামেরকুড়া গ্রামের বাবুল মিয়া বলেন, দুই মাস আগে পাহাড়ি ঢলে তার একটি ঘর ভেঙে গেছে। কিন্তু টাকার অভাবে এখনো ঘর মেরামত করতে পারেননি। সরকার থেকে সাহায্য হিসেবে কিছু খাদ্যসামগ্রী পেয়েছেন।

একই গ্রামের বাসিন্দা আবু হারেজ বলেন, পাহাড়ি মঢলে তার দুইটি ঘর ভেঙে গেছে। সরকারীভাবে এক বান্ডেল ঢেউটিন ও তিন হাজার টাকা এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী পেয়েছেন। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে বিলম্ব হলে আপাতত চলাচলের জন্য নদীর পাড়ের ভাঙা অংশে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণের জোড় দাবি জানিয়েছেন তিনি।

ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে একাধিকবার পাহাড়ি ঢলের ফলে মহারশি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ ঝিনাইগাতী বাজার ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এতে পরিষদের কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই পাহাড়ি ঢলের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য মহারশি নদীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান তিনি।

ইউএনও ফারুক আল মাসুদ বলেন, মহারশি নদীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে এলাকাবাসীর চলাচলের সুবির্ধাতে নদীর পাড়ের ভাঙা অংশগুলো সংস্কার যায় কিনা এব্যাপারে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া করা হবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, মহারশি নদীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয়ের সচিব আশ^স্ত করেছেন।  

অপরদিকে পাউবো, জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ বলেন, মহারশি নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে পাউবোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এটি ব্যয় সাপেক্ষ। তাই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বাঁধ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ফিজিবিলিটি স্টাডিজ) উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image