
জহিরুল ইসলাম সানি:
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকান্ড মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আদালতে বার বার সময় চাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে আল্টিমেটান দিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) জমা না দিলে সাংবাদিক সমাজের বৃহত্তর কর্মসূচির হুসিয়ারি দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিকী অনশন কর্মসূচী পালন কালে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এমন হুসিয়ারি দেন। কর্মসূচি শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারক লিপি দেয়া হয়।
কর্মসূচীতে প্রধান অথিতির বক্তব্যে বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে না। সারাদেশে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন। কোনো বিচার আপনারা করছেন না। কেন সাংবাদিকদের সঙ্গে শত্রুভাবাপন্ন আচরণ করছেন? সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন পেছানো হচ্ছে বারবার। আর যেন পেছানো না হয়।
গত এক বছরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বারবার দেখা করেছি। সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলো সুরাহা করতে বলেছি। তিনি আমাদের কথা দিয়েছেন। আমরা আসার পরই তিনি সাংবাদিকদের দাবি ভুলে গেছেন, এটা ঠিক না। সাগর–রুনিসহ আরও যারা হত্যার শিকার হয়েছেন, তাদের সবার বিচার চেয়েছি। আপনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলতে পারবেন, একটা হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন? কেন একটা বিচারও করছেন না? আপনাদের আমলে সাংবাদিকেরা সবচেয়ে বেশি হত্যা, নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।তিনি প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের সঙ্গে আপনার সবসময় সুসম্পর্ক রয়েছে। তারপরও আমারা নির্যাতিত হলে বিচার পাইনা। এটা কেমন অবিচার। আর যদি আপনারা বিচার করতে না পারেন, তাহলে সরাসরি বলে দিন। আমরাও আর এ বিষয়ে কথা বলবো না।
সাংবাদিকদের বেতন কাঠামোর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নবম ওয়েজবোর্ড আইন করেছেন। আমরা আইন মেনেছি। কিন্তু মালিকরা মানেন না। আপনারা মালিকদের বলে দেন নবম ওয়েজবোর্ড না মানলে সংবাদমাধ্যম চালানোর দরকার নেই। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে আমরা কীভাবে জীবন-যাপন করছি, তার কোনো খোঁজ নিচ্ছেন না।
ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতায় এসেছি কিন্তু জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। ১১ বছর আগে সাগর–রুনি হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ১১ বছর একই সরকার ক্ষমতায়। অথচ সাগর–রুনি হত্যার বিচার হয় না। কোথায় যাব আমরা? সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে বারবার হয়রানি করা হচ্ছে। একের পর এক সাংবাদিক হত্যা, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সরকার বা রাষ্ট্র তা দেখছে না। এখন পর্যন্ত এ হত্যাকান্ডের প্রতিবেদন দিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা র্যাপিড একশন বেটালিয়ন (র্যাব) আদালতে ৯৫ বার সময়ের আবেদন করেছে। এ সংখ্যা যাতে সেঞ্চুরি না করে এ আহবান জানান তিনি।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, বিদেশ থেকে ফরেনসিক টিম আনা হয়েছিল। তারপর বলা হয়েছিল, ঘাতককে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুজনকে শনাক্ত করার কথা জানানো হয়েছিল, যারা হত্যা করেছেন। আজ পর্যন্ত সেই দুজনের নামই জানতে পারলাম না। বিচারব্যবস্থা ও তদন্তকারী সংস্থার প্রতি দিন দিন আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।
কর্মসূচীতে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএফইউজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব যাকারিয়া কাজল, ডিইউজের সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ,যুগ্ন সম্পাদক খাইরুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক এ জিহাদুর রহমান জিহাদ, কোষাধ্যক্ষ আশরাফুল আলম, দপ্তর সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাকিলা পারভীন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মুরসালিন নোমানী, ডিইউজের নিউ নেশন ইউনিট প্রধান জাহিদুল হাসান, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (টিসিএ) সভাপতি শেখ মাহাবুব আলম।
এছাড়াও কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন, ডিইউজের কল্যাণ সম্পাদক জুবায়ের চৌধুরী, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মিজান মালিক, বার্তা সংস্থা এফএনএসের ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক শাজাহান স্বপন প্রমুখ। প্রতিকী অনশন কর্মসূচী শেষে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারক লিপি পেশ করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: