
নিউজ ডেস্ক: কেরাণীগঞ্জে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার পৈত্রিক সম্পত্তি কেড়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এডভোকেট পরিচয় দানকারী জনৈক এম. এ গফুর সিকদার। শনিবার (৪ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরম খাঁ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা সদস্য মো. মোজাম্মেল হক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি (যাহার পরিমান ৬৪ শতাংশ; সি এস খতিয়ান নং ২২৬, এস এ খতিয়ান নং ৫৩৬, সি এস ও এস এ দাগ নং ১১৮৬, মৌজা- হযরতপুর, থানা-কেরাণীগঞ্জ মডেল, জেলা- ঢাকা) গত ৩৭ বছর ধরে ভোগদখল ও চাষবাস করে আসছেন।
তিনি জানান, ‘হত্যা মামলার আসামি, ভূমি জালিয়াত চক্রের হোতা, সন্ত্রাসী বাহিনীর গড ফাদার, চাঁদাবাজ, তথাকথিত এডভোকেট এম এ গফুর সিকদার আমার দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। আমি কোন প্রকার চাঁদা দিতে পারবো না বলে তাকে পরিষ্কার জানিয়ে দেই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন রকমের হুমকি ধামকি দিতে থাকে।
গত ১১ মে ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী সঙ্গে নিয়ে আমার জমিতে সিমেন্টের খুঁটি গাড়ে এবং জমির মালিকানা দাবি করে। বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে যে, উক্ত জমিতে আমরা কেউ গেলে খুন করে ফেলবে। উক্ত বিষয়ে আমি কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় গত ১২-৫-২০২২ তারিখে এম এ গফুর সিকদার ও তার তার সহযোগী মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে জিডি করি। জিডি করার পরে ওই রাতেই আমার জমিতে লাগানো মামলার সাইনবোর্ড ভেংগে উপরে ফেলে।’
উক্ত ঘটনার ৭ দিন পরেই ১৮ মে আনুমানিক রাত ৯ টার দিকে এম এ গফুর ৩০/৩৫ জন সন্ত্রাসী সাথে নিয়ে আমার জমিতে অনধিকার প্রবেশ করে জমিতে রোপন করা প্রায় ৪৫ শতাংশের মধ্যে তিলগাছ উপরে ফেলে। ১০/১২ টি কলা গাছ কেটে ফেলে।
এই ঘটনার পরে স্থানীয় ইউ পি চেয়ারম্যান ও ইউপি সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জমিটি পরিদশ্যন করেন এবং ঘটনার সত্যতা প্রমানসরুপ প্রত্যয়নপত্র দেন। পরবর্তীতে গত ২৪-৫-২০২২ তারিখে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট (কেরানীগঞ্জ মডেল থানা) আদালতে মামলা করি যার নম্বও ৫৩৩/২০২২ এরপর আমি আবারও জমিতে মামলা মোকদ্দমা সংক্রান্ত সাইনবোর্ড লাগাই।
এতে সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে আমাকে নানা ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে এবং আমার ও আমার পরিবারের সমস্যদেও প্রাণ নাশের চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য সর্ব প্রথম গত ৪ জুলাই ২০২১ তারিখ বিকাল ৩টার দিকে এম. এ গফুর সিকদার, পিতা- শামসুল হক, গ্রাম-বাঘুলী, থানা- সিংগাইর, জেলা- মানিকগঞ্জ ও মহিউদ্দিন, পিতা- শফিউদ্দিন, গ্রাম- কানাচর, থানা- কেরাণীগঞ্জ,
জেলা-ঢাকা, এই দু’জন বেশকিছু সংখ্যক ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী সঙ্গে নিয়ে এসে আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে নিজেদের মালিকানা আছে দাবী করে জোরজবস্তি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। একইসঙ্গে ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে জমির চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মানের চেষ্টা করে। এমতাবস্থায় স্থানীয় লোকজন এসে তাদেরকে বাধা প্রদান করলে- এম. এ গফুর সিকদার নিজেকে এডভোকেট পরিচয় দিয়ে স্থানীয় লোকজনকে মামলা মোকদ্দমার হুমকি ধামকি দেয়।
স্থানীয়রা তার হুমকি ধামকিতে পরোয়া না করে এম. এ গফুর সিকদার ও তার সঙ্গীয় বাহিনীর সবাইকে সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করে। তবে স্থান ত্যাগ করার সময় তারা অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে এবং বিভিন্ন মিথ্যা মামলার আসামী করে হয়রানি করাসহ প্রাণ নাশেরও হুমকি দেয়।
এডভোকেট এম. এ গফুর সিকদার নিজের কথা ও কাজের প্রমাণ হিসেবে উক্ত ঘটনার পরের দিনই অর্থাৎ ৭ জুলাই ২০২১ তারিখে চীফ জুডিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক সহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে (সি.আর.মামলা নং- ৪৪৩/২০২১, কেরাণীগঞ্জ মডেল)।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা সদস্য মোজাম্মেল হক বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈনুল হক এর আদালত (কেরাণীগঞ্জ মডেল) ঢাকা’য় (পিটিশন মামলা নং- ২৩৩/২০২১, ধারাঃ ১৪৫ ফৌ.কা.বিধি) দায়ের করলেও প্রশাসনিক কোনো সহযোগীতা পাননি বলে জানান। উল্টো এডভোকেট গফুর সিকদার তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন মামলায় আসামী করাসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়েই চলেছে।
ভূমিদস্যু এই এডভোকেটের অত্যাচারে এ মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। ফলে পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষা ও জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি দিশাহারা প্রায়। তিনি জানান, সম্পত্তি রক্ষা ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুস্থভাবে জীবন যাপন করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত মিথ্যা মামলায় ফাসানোর ভয় ও
প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি শুনতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় তিনি প্রশাসন ও রাষ্ট্রের সহযোগীতা কামনা করছেন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এডভোকেট এম. এ গফুর একজন দুষ্ট প্রকৃতির লোক। আইনী পেশাকে তিনি নিজের অপকর্মে ব্যবহার করেন। আধিপত্ত বিস্তারের জন্য সাধারণের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার হুমকি দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন। গড়ে তুলেছেন নিজস্য সন্ত্রাসী বাহিনী। যাদের কাজই হলো লোকজনকে মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে সুবিধা আদায় করা ও নিরীহ মানুষের জায়গা সম্পত্তি দখল করা। তার বিরুদ্ধে ল্যাপটপ চুরির মামলা, শ্লীলতাহানী, ভূমিদস্যুতা ও হত্যা মামলা সহ নানান অপকর্মের ঘটনা রয়েছে বলেও জানাগেছে। এত্তসব অভিযোগ থাকলেও আইন পেশায় জড়িত থাকায় নানান উপায়ে নিজেকে আইনী বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে অন্যদেরকে হয়রানী করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
এমতাবস্থায় এই ভয়ঙ্কর ভূমিদস্যু বাহিনীর কবল থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের সম্পদ রক্ষা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও সরকারের আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: