• ঢাকা
  • বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের জীবনী


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ০১ ফেরুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৩৪ পিএম
রাজনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী
আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল

নিউজ ডেস্ক : আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল জন্মগ্রহণ করেন নওগাঁ জেলায়, ২১ জানুয়ারি, ১৯৩৯ সালে। স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেই তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৯৫৭ সালে নওগাঁ কে.ডি স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৬০ সালে বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এ. অনার্স (রাষ্ট্র বিজ্ঞান) ও ১৯৬৪ সালে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ব্যারিষ্টারী (বার এট ল) পড়ার জন্য তিনি বিলেত যান।

হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য ২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা জলিলকে। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। চিকিৎসকরা আব্দুল জলিলকে ৩০ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন বলে সিঙ্গাপুর থেকে জানিয়েছেন সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম। এর আগে তিনবার বাইপাস সার্জারি হয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল জলিলের। পারিবারিক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত থেকেই তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।

২০১৩ সালের ৬ই মার্চ রোজ বুধবার তিনি মারা যান। তার কিছু অবদান জাতীয় পর্যায়ে তিনি অনেক গুরুত্ব দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা অবস্থ্য়া আব্দুল জলিল অনেক সফলতার পরিচয় দেন। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন কালে সারাদেশের নেতাকর্মীদের উপর তার সুদৃষ্টি ছিল প্রখর। কোথাও কেহ লাঞ্ছিত, নীপিড়ীত হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রতিবাদের তীর ছুঁড়ে মারতেন ও অত্যন্ত বিচক্ষণতার মাধ্যমে তা সমাধানের চেষ্টা করতেন।

মোহাম্মদ আব্দুল জলিল  একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নওগাঁ-৫ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছেন। 

মুক্তিযুদ্ধে অবদান ১৯৬৯ সাল। তখন দেশে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন চলছে এ সময় বঙ্গবন্ধু বিলেত যান এবং অধ্যয়নরত প্রাক্তন ছাত্র নেতাদের নিয়ে এক বৈঠক করেন। জলিলের পরিচয় হয় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৬৯ সালেই দেশে ফিরে আসেন এবং ঝাঁপিয়ে পরেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। সেই সাথে শেষ হয় তার ব্যারিষ্টারী পড়ার সকল আয়োজন।

১৯৭০ সাল ঐতিহাসিক নির্বাচনে নওগাঁ মহকুমার নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয় আব্দুল জলিলের উপর। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাক সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বিভিন্ন তালবাহানা ও কালক্ষেপন শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ যা স্বাধীনতার ভাষনে সারাদেশবাসী আন্দোলিত ও উজ্জিবিত হয়ে উঠে, যা স্বাধীনতার দলিল হিসাবে পরিচিত। ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সমগ্র বাঙ্গালী জাতি প্রতিবাদে প্রতিরোধের দূর্গ গড়ে তোলে। পাক সামরিক জান্তা পূর্ব পরিকল্পিত নীলনকশার প্রতিফলন ঘটায়।

গ্রেপ্তার করেন বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে। ফুঁসে উঠে সমগ্র বাঙ্গালীজাতি। শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। আব্দুল জলিল নওগাঁ মহকুমার আপামর জনসাধারণ, কর্মরত ই.পি.আর. পুলিশ আনছার বাহিনীকে সংগঠিত করে জীবন বাজী রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং ১৯৭১ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এতদ্ব অঞ্চলের প্রধান সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে আব্দুল জলিল নওগাঁ থেকে যাওয়ার সময় ৭৪ জন ছেলে ও তার দলবল নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যান এবং বালুরঘাটে আত্রাই নদীর পূর্বতীরে শ্মশানকালী মন্দিরের পার্শ্বে একটি গৃহে অবস্থান গ্রহণ করেন।

সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভর্ত্তি ও বাঙ্গালীপুর, মধুপুর, কামাড়পাড়া, প্যারিলাসহ ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনা করেন। ঐসব ক্যাম্প থেকে হায়ার ট্রেনিং এর জন্য শিলিগুড়ির পানিঘাটায় পাঠিয়ে দেওয়ার বিশাল দায়িত্ব গ্রহণ করেন আব্দুল জলিল। নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ সব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশের অভ্যন্তরে জীবন বাজি রেখে দেশ মাতৃকার ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আব্দুল জলিল শুধু মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠকই ছিলেন না- ‘বঙ্গবাণী’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার মালিকও ছিলেন। আব্দুল জলিলের সাহায্য সহযোগিতায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় বালুরঘাট নিউমার্কেট এলাকায় সুনীতি প্রিন্টিং ওয়ার্কস থেকে উক্ত ‘বঙ্গবানী’ পত্রিকাটি প্রকাশিত ও প্রচারিত হতো।

উক্ত পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক খন্দকার মকবুল হোসেন ও সহ সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন খন্দকার আবু বককর সিদ্দিকী। উক্ত ‘বঙ্গবানী মোট ২৬টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিল এমন কেউ কেউ বর্তমানে বড় মানবেতর জীবন যাপন করছে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, দু’লক্ষ মা’বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এদেশের বিজয় অর্জিত হয়। রাজনৈতিক জীবন আব্দুল জলিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে একজন মহান সংগঠক ছিলেন।

১৯৭২ সালে আত্রাই রাণীনগর নকশালী রাজনীতির ব্যাপক তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। শ্রেণী শক্র খতমের নামে নকশালরা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আব্দুল জলিল নিজের জীবন বিপন্ন করে বড় ঝুঁকি নিয়ে নকশালদের ব্যুহ ভেঙ্গে চুরমার করে রক্তাক্ত প্রান্তরে সোনালী সূর্য্যরে আলো প্রদান করেন। দমন করেন নকশালী তৎপরতা। ১৯৭৩ সালে তিনি সর্ব্ব প্রথম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নওগাঁ সদর আসনে এম.পি. নির্বাচিত হন।

দেশ পুনর্গঠনের কাজে পুরো মাত্রায় আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্ররা মাথাচারা দিয়ে উঠে। মানবতা বিরোধীরা, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আলবদর আলশামস্ বাহিনী ও দেশী বিদেশী শক্ররা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের অতর্কিত হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তার গোটা পরিবারকে হত্যা করে। অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আব্দুল জলিলকেও গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘ ৪ বছর কারাভোগের পর ১৯৭৯ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন।

১৯৮২ সালে পুনরায় সামরিক শাসন জারি করার পর গ্রেপ্তার করা হয় আব্দুল জলিলকে। ১৫ দিন অজ্ঞাত স্থানে বন্দী রেখে অবর্ণনীয় দৈহিক নির্যাতন চালানো হয় তার উপর । জেলে থাকা অবস্থায় তাঁর মা’র মৃত্যু হলেও সামরিক জান্তা মাতৃ মুখখানা এক নজর দেখার জন্য কোন সুযোগ দেয় নাই। ১৯৮৪ ও ১৯৮৮ সালে তিনি পর পর দু’বার নওগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদের এম.পি নির্বাচিত হন এবং সংসদে বিরোধী দলীয় চীফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন।

আব্দুল জলিল ২০০২ সালের ডিসেম্বরে দলের ১৯ তম কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অনেক রাজনীতিকের মতো জলিলও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কারাবন্দি অবস্থায় পাঠানো একটি চিঠিতে সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি। ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তির পর জলিল সাধারণ সম্পাদক পদে ফেরার ঘোষণা দেন।
কিন্তু এ নিয়ে দলে জটিলতা দেখা দেয়। পরে সাধারণ সম্পাদকের পদ থাকলেও দায়িত্ব পালন করতে পারেননি তিনি। ২০০৭ সালের ২৮ মে জলিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৮ সালের ২ মার্চ প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান। ছয় মাস পর ৩১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।

আব্দুল জলিল একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন রাজনীতিবিদ। আব্দুল জলিল স্বৈরাচারদের বহু প্রলোভন জুলুম, ভয়ভীতি উপেক্ষা করে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। কখনও নীতিভ্রষ্ট হননি, আদর্শচ্যুত হননি কিংবা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। নওগাঁবাসীর কল্যাণ ও উন্নয়নে তিনি সদাই সর্বদা স্বচেষ্ট। সম্প্রতি নওগাঁ শহরে যমুনা নদীতে ৪টি ব্রীজ নির্মাণের অপেক্ষায় যা তার নওগাঁবাসীর নিকট ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ও যোদ্ধাদের খরচ মোকাবিলায় মোঃ আব্দুল জলিল মহান স্বাধীনতার ৯ মাস যুদ্ধে ভারতের প্রত্যেকটি রিসিপশন ক্যাম্পের জন্য নওগাঁ ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ব্যাংক থেকে ৭১,৮০,০০০/- টাকা তিনি ঐ ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ও কোষাধ্যক্ষকে ডেকে নিয়ে এসে ব্যাংকের ভোল্ট রেজিষ্টারে এন্ট্রি করে উক্ত টাকা গ্রহণ করেন।

সেই অর্থ দিয়ে ভারতে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পগুলো পরিচালিত করেন। দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধুর নতুন সরকারের নিকট খরচ অন্তে ৩৪,৫২,০০০/- টাকা ফেরত দেন। তিনি কোন টাকা পয়সা আত্মসাৎ করেন নাই। অঙ্গীকার ছিল নওগাঁয় একটি কৃষি কলেজ স্থাপন গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও বেকার সমস্যা সমাধানে ব্যাপক পরিকল্পিত কর্মসূচী তার হৃদয়ে গ্রথিত আছে। আব্দুল জলিল বর্তমানে নওগাঁ সদর ৫ আসনের সংসদ সদস্য।

বয়সের ভারে কিছুটা দুর্বল হলেও তিনি অত্যন্ত সচল ও কর্মঠ। নওগাঁবাসীর উন্নতি ও মঙ্গল কামনা তার ধ্যান জ্ঞান। আব্দুল জলিল নওগাঁর অভিভাবক, নওগাঁর গৌরব একটা ছাতার মতো। তার ছত্রছায়ায় নওগাঁবাসী যুগ যুগ ধরে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে চায়। তিনি সুস্থ, সবল ও কর্মঠ হয়ে দীর্ঘ জীবন লাভ করুন- এই হউক নওগাঁবাসীর দোয়া কামনা।

নওগাঁ শহরে একটি মাত্র শিশু পার্কে শিশুদের খেলা ধুলা ও বিনদনের তেমন কোন সুযোগ না থাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য মোঃ আব্দুল জলিল এমপির উদ্দোগে গড়ে উঠে শহরের বাহিরে আব্দুল জলিল চত্বর, বাইপাস সড়কের পার্শ্বে একটি শিশুদের বিনোদন ধমি পার্র্ক, জননেতা আব্দুল শিশু পার্ক নামে। এটি গড়ে উঠে ২০১১ সালে নওগাঁর আধুনিক রুপকার মোঃ আব্দুল জলিল এমপি তত্বাবধনে। 
 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image