• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

যে ভাষণ এক অমর কাব্য


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: সোমবার, ০৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৫৬ পিএম
৭ মার্চ, স্বাধীনতা
তৎকালীন রেসকোর্সময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মুক্তিকামী জনতার সামনে ভাষণ দিচ্ছেন।

মোহাম্মদ রুবেল

আগামীকাল ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা গৌরবের এক অনন্য দিন। বাঙ্গালীর স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িযে আছে এই দিনটি। ৫০ বছর আগে এইদিন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে অপেক্ষমান লাখ লাখ বিদ্রোহী জনতা। ফাগুনের সূর্য তখনোও্ মাথার উপর। কখন আসবেন রাজনীতির কবি। অবেশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষে রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসে জনতার মঞ্চে হাজির হলেন। নেতাকে দেখে করতালি আর স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ময়দান। এরপর জনতার সামনে কবির বজ্রকন্ঠে উচ্চারিত হলো স্বাধীনতার অমীয়বাণী, মুক্তির বাণী। উচ্চারিত হলো স্বাধীনতার ঘোষণা। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সেই থেকে স্বাধীনতার শব্দটি বাঙ্গালীর।

সেই দিনের অপেক্ষমান মুক্তি পাগল জনতার উত্তাল জনসমুদ্রের বর্ণনা করতে গিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য কি দারুণ অপেক্ষা আর উত্তেজনা নিয়ে/ লক্ষ লক্ষ উন্মুক্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে/ ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে/ কখন আসবেন কবি ?/ শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে/ রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/ অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন/ কে রোধে তাঁহার বজ্র কণ্ঠ বাণী?/ গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি/ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।/ সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের। কবি নির্মলেন্দু গুণ অগ্নিঝরা একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের মুহূর্তটি এভাবে কবিতায় মূর্ত করে তুলেছেন।

৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, যে ভাষণ গোটা বাঙালি জাতিকে উজ্জ্বীবিত করেছিল একযোগে এবং সর্বোপরি যে ভাষণের কারণে বাঙালি পেল একটি স্বাধীন ভূখণ্ড-সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে পেরোতে হয়েছে অজস্র চড়াই-উৎরাই। অখচ সেই স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুসনহ সপরিবারে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ইতিহাসের এই নির্মম গতিপথ এখানেই থেমে ছিলা না। হত্যারপর বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছে। ওই সময় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ যেমন প্রকাশ্যে করা যায়নি, তেমনি বাংলার মাটিতে সম্প্রচার করা যায়নি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত টানা ২১ বছর কার্যত কারারুদ্ধ ছিল কালজয়ী এ ভাষণ। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোর ওপর ভাষণ প্রচারে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা ছিল। অবশেষে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ৭ই মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। সেই থেকে সরকারে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হযে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী কালও ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ পালিত হবে।এ প্রেক্ষিতে প্রতিবারের মত আওয়ামী লীগও নানা কর্মসুচির মধ্যদিয়ে এ দিবসটি পালন করবে।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি- ক্ষমতাসীন দলটি এ দিন সকাল ৮টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যদিয়ে কর্মসূচি শুরু করবে।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে আরও জানানো হয়েছে মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম  বাহা উদ্দিন নাছিস বলেন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত এই ভাষণের ভিডিও কেউই দেখতে পাইনি। তখন বিটিভিই ছিল একমাত্র সম্প্রচারমাধ্যম। এই দীর্ঘ ২১ বছরে বিটিভিতে একদিনের জন্যও ভাষণটি সম্প্রচার হয়নি। গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। এখন যেভাবে প্রাণখুলে ভাষণটি বাজাতে পারছি, জাতির পিতাকে হত্যার পর তা পারিনি। নানা বাধা, হুমকি-ধামকির মুখোমুখি হতে হয়েছে। অবশেষে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন সন্ধ্যায় প্রথমবার বিটিভিতে বঙ্গবন্ধুর চেহারা দেখি, ভাষণের ভিডিও দেখি।

বঙ্গবন্ধু সেদিন শুধু স্বাধীনতার আহ্বান দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি, স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখাও দিয়েছিলেন। মূলত বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণই ছিল ৯ মাসব্যাপী বাংলার মুক্তি সংগ্রামের ঘোষণা ও মূল ভিত্তি। সেই দিনের প্রায় ১৯ মিনিটের ভাষণে বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের পুরো ক্যানভাস তুলে ধরেন। বজ্রকণ্ঠে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাক, কেউ কিছু বলবে না। গুলি চালালে আর ভালো হবে না। সাত কোটি মানুষকে আর দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালি মরতে শিখেছে, তাদের কেউ দাবাতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।

বঙ্গবন্ধুর এ তেজোদীপ্ত ভাষণে গর্জে ওঠে উত্তাল জনসমুদ্র। তিনি সেদিন জনতাকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা মুক্তিকামী মানুষের কাছে লাল-সবুজ পতাকাকে মূর্তিমান করে তোলে। আর এ মাধ্যমে বাঙালির ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয়। তখনও রাজধানী ঢাকার চতুর্দিকে ছিল ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। আকাশে উড়তে থাকে হানাদারদের জঙ্গিবিমান।

 

 

 

ঢাকানিউজ২৪.কম / এম আর

আরো পড়ুন

banner image
banner image