• ঢাকা
  • রবিবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

নদী একটি জীবন্ত সত্তা


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ০১ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২:০০ পিএম
নদী একটি জীবন্ত সত্তা
দেশের নদী রক্ষায় সক্রিয় থাকা বিশিষ্টজনেরা

নিউজ ডেস্ক : আমাদের নদ-নদী খুন হওয়ার পেছনের প্রধান কারণ ভারতের উজানের নদীর উৎস মুখে নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্প ভিন্ন ভিন্ন নদীতে বাদ দিচ্ছে, অপরিকল্পিতভাবে সীমানা পিলার স্থাপন করে নদীকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তারপর নদী দখলদার নদীকে দখল করে নিচ্ছে এবং তাদের পেছনে থাকে রাজনৈতিক প্রভাবশালী পেশি শক্তি। 

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে শনিবার সকালে এক আলোচনায় এসব কথা বলেন দেশের নদী রক্ষায় সক্রিয় থাকা বিশিষ্টজনেরা। ‘দখলের গ্রাসে শুটকি নদীর ২৬ কিলোমিটার, ৫০ বছরের নদী লুট ঠেকাতে নাগরিক আহ্বান’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন, নোঙর, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ও ইনিশিয়েটিভ ফর পিস নামের সংগঠনগুলো। 

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান দেশের নদী দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গেছেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি নদীর জন্য একটি কবিতা লেখা, একটি ছবি আঁকা, একটি ছবি তোলা, ফেসবুকে আপলোড করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে নদীর চিত্র ভেসে ওঠে, তাদের তাই নদীর জন্য এ ধরনের সকল কর্মকান্ড নদীর জন্য উপকারী। ডেভলপার কোম্পানি  কোম্পানির হাতেএকে একে নদীগুলো খুন হয়ে যাচ্ছে।নদী রক্ষার স্বার্থে আন্দোলনের ফলে নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় আমাদের জন্য একটি বিশাল পাওয়া। এ রায়টি নদীমাতৃক বাংলাদেশের জন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা এরাই আমাদের আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটি বিশাল শক্তি হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, আমাদের নদ-নদী খুন হওয়ার পেছনের প্রধান কারণ ভারতের উজানের নদীর উৎস মুখে নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্প ভিন্ন ভিন্ন নদীতে বাদ দিচ্ছে, অপরিকল্পিতভাবে সীমানা পিলার স্থাপন করে নদীকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তারপর নদী দখলদার নদীকে দখল করে নিচ্ছে এবং তাদের পেছনে থাকে রাজনৈতিক প্রভাবশালী পেশি শক্তি। 

নদী একটি জীবন্ত সত্তা তাকে খুন করা মানে মানুষ খুন করা। একটি মানুষ যখন খুন হয় একটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু একটি নদী খুন হওয়া মানে অসংখ্য মানুষ, আজকের প্রজন্ম এবং আগামী প্রজন্ম খুন হয়ে যাওয়া। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে জিডিপি বাড়ছে সেটা নদীর পাড়ে কলকারখানা নির্মাণ করে বাড়ছে। এসব কল কারখানা নদীকে দূষণ করে, দখল করে ধীরে ধীরে আমাদের নদীর পানি ও প্রাণ-প্রকৃতিকে ধ্বংস করে জিডিপি বাড়ছে।সুতরাং উন্নয়ন চিন্তায় যদি নদী না থাকে তাহলে নদী দখল নদী ভরাট নদী দূষণ কলকারখানায় জিডিপি বাড়বে কিন্তু আমাদের প্রাণ-প্রকৃতি  ধ্বংস হয়ে যাবে। নদী রক্ষা করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সকল রাজনৈতিক দলের এজেন্ডায় নদী রক্ষার কথা বলার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না কারণ বড় বড় ব্যবসায়ীরা নদী দখল করে ব্যবসা করছে আবার তারাই রাজনৈতিক দলগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে। তাই ব্যবসায়ী এবং রাজনীতির স্বার্থে কোন দল তাদের আলোচনায় নদী রক্ষার কথা বলে না। দেশের স্বার্থে আগামী প্রজন্মের স্বার্থে সকল পরিবেশ কর্মীদের এক হয়ে রাজনৈতিক দলের উপর অব্যাহত ভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ান আহসান বলেন, আপনি যে নদী নিয়ে কথা বলেননা কেন বলা হবে যে, এটাকে দখলমুক্ত করার জন্য হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এ কথাটি যখন শুনি তখন আর কোন নদীর কথা বলতে ইচ্ছে করেনা। একবার চোখের সামনে দেখছি যদি ভরাট হচ্ছে আবার সেটা উচ্ছেদের জন্য খরচ হচ্ছে! পৃথিবীর যে সকল দেশ তাদের নদীকে রক্ষা করছে তারা নদীতে সংকুচিত করেনি সংস্কার করেছে, সম্পদ হিসেবে দেখেছে। ন্যাচারাল রিসোর্স হিসেবে সংরক্ষণ করেছে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছে। পরিবেশকে সম্মান করতে হবে পরিবেশের উপাদান গুলোকে সম্মান করতে হবে। পরিবেশ পাহাড় জলাশয় বিল আমাদেরকে সেভাবেই দেখতে হবে। আমাদের নদীগুলোকে রক্ষা করতে হবে সততার সাথ। কিছুদিন আগেও নদী রক্ষা কমিশনের একটা গতি চোখে পড়ছিল কিন্তু বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান উলটপালট কর দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে সেমিনারে চটকদার কথা বলে মিডিয়াতে হাইলাইট হচ্ছে কিন্তু তাতে নদীর কোন উপকার হচ্ছে না। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলায় নদীর রক্ষার আন্দোলন চলছে এটাকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। প্রচন্ড বৈরী পরিবেশেও নদী কর্মীরা তাদের সাহসী ভূমিকা পালন করছে। স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরতে গেলে যখন দখলদাররা বন্দুক নিয়ে আসেন তখন দখলদারদের বন্দুকের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।  শুটকি নদী ফেরত পাবার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

সঞ্চালক ও সভার সভাপতি হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, শুটকি নদী রক্ষায় দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ সাথে নিয়ে যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই আমরা করতে প্রস্তুত। তিনি আরো বলেনম বাংলাদেশে আমরা বিশ্ব নদী দিবস পালন করি অথচ নদীমাতৃক দেশে আমাদের জাতীয় নদী দিবস নেই। তাই দেশের নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এখন থেকে ২৩ শে মে তারিখ জাতীয় নদী দিবস ঘোষণা পলন করা হবে।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ পাঠ শেষে নোঙর বাংলাদেশ ট্রাস্ট এ-র চেয়ারম্যান সুমন শামস বলেন, নদীমাতৃক দেশের মানুষ হয়েও আমরা বতল পানি উচ্চমূল্যে ক্রয় করে দেথে বাধ্য হচ্ছি। অখচ যে প্রতিষ্ঠেনর পানি আমারা কিনতে বাধ্য হচ্ছি সেই সকল প্রতিষ্ঠানের কল-কারখানাই নদীকে দখল-ধূষণে জর্জরিত করে ফেলছে। দেশের সকল নদ নদীকে জীবন্ত সত্তা করার আন্দোলনের সূচনা করেছিল নোঙর বাংলাদেশ। তার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তুরাগ নদীসহ দেশের সকল নদ নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে রায় প্রকাশ করেন। তবে রিটকারি প্রতিষ্ঠান আন্দোলনকারী প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি উল্লেখ না করে নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে রিট করে পুরস্কৃত হচ্ছেন। আর এতে করে তরুণ নদী যোদ্ধারা নদী রক্ষা আন্দোলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। 

আমার দেশের সকল নদ নদীকে আমি মা বলেই জানি। নদীমাতৃক বাংলাদেশে সকল নদী আজ সুটকি নদীর মত শুটকি বানিয়ে মেরে ফেলছি আমরা। সকল নদী এখন সুটকি নদীর মতোই মুমূর্ষ অবস্থায় আছে। আমরা দেশের সকল নদীকে সুরক্ষা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। নদীমায়ের জন্য আমরা আমাদের জীবনকে উৎসর্গ করেছি। যেকোনো মূল্যে নদী মাতাকে রক্ষার প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। 

আইন ও সালিস কেন্দ্রের সাবেক প্রধান নির্বাহী হাফিজা বলেন, আরো জোরে আওয়াজ তুলতে হবে, দরকার হলে হবিগঞ্জ গিয়ে সমস্ত পরিবেশবাদী  সংগঠনকে একত্রিত করে শুটকি নদী রক্ষায় এক যোগে কাজ করতে হবে।

নদী রক্ষা কমিশনের কার্যক্রমের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আরডিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, এই কমিশন নদী রক্ষায় কোনো মামলা করে না।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা। 

এই অনুষ্ঠানে দেওয়া নথিতে বলা হয়েছে, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী শুটকি। নদীটির উজানে খোয়াই এবং ভাটিতে যমুনার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৫০ সালে জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হলে নদী ও ভূমির মালিকানা রাষ্ট্রের ওপর বর্তায়। কিন্তু বানিয়াচংয়ের জমিদার পরিবার শুটকি নদী নিজের দখলে নিতে ১৯৬০ সালে ইয়াহিয়া ফিশারিজ প্রাইভেট কোম্পানি গঠন করে। কিন্তু পাকিস্তান আমলে তা নিতে তারা ব্যর্থ হয়। ১৯৭২ সালে শুটকি নদীকে তারা বিল দেখিয়ে তা দখলের জন্য এই কোম্পানির পক্ষে মামলা করেন দেওয়ান ইয়াহিয়া রাজা। ১৯৭৩ সালে আদালত ওই ব্যক্তির পক্ষে রায় দেন। ১৯৯২ সালে আরেক রায়ে সরকার এই নদীর মালিকানা ফিরে পায়। বংশানুক্রমিকভাবে এখন এই নদীর মালিকানা দাবি করেন দেওয়ান আহমেদ রাজা।

গত বছরের জুলাইয়ে এই নদীকে বদ্ধ জলাশয় দেখিয়ে এই জমিদার পরিবারের কাছে ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এই নদীতে মানুষ মাছ ধরতে গেলে তথাকথিত মালিক বন্দুক হাতে তেড়ে আসেন। নদীর বিভিন্ন স্থানে সিমেন্টের ব্লক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঁধ। এই শুটকি নদী রক্ষার দাবিতে আজকের এই নাগরিক আহ্বানের আয়োজন করা হয়।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image