• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

নোয়াখালী হানাদার মুক্ত দিবস


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০২:৫১ পিএম
নোয়াখালী
হানাদার মুক্ত দিবস

গিয়াস উদ্দিন রনি, নোয়াখালী প্রতিনিধি : ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে সকাল থেকে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটি নোয়াখালী জেলা শহরের মাইজদী প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) থেকে থেমে থেমে গুলিবর্ষণ করলে মুক্তিসেনারা সঙ্গবদ্ধ পাল্টা আক্রমন ও গুলিবর্ষণ করে রাজাকারদের ওই প্রধান ঘাঁটি দখলের মধ্য দিয়ে নোয়াখালীর মাটিকে মুক্ত করে লাল সবুজের বিজয় নিশান উড়িয়েছিল। 

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) নোয়াখালী হানাদার মুক্ত দিবস। নোয়াখালী মুক্ত দিবস উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মোজাম্মেল হক মিলন বলেন, দিবসটি উপলক্ষে ৭ ডিসেম্বর মাইজদী পিটিআই সংলগ্ন মুক্ত স্কয়ারে সকাল ১১টায় পুষ্পস্থবক অর্পণ, দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে জেলা শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণে র‌্যালি ও বিকাল ৩টায় বিজয় মঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর প্রায় এক মাস ধরে নোয়াখালীকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন মুক্তিকামী মানুষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। পদে পদে বাধা অতিক্রম করে পাকিস্তানি সেনারা ২৩ এপ্রিল নোয়াখালী জেলা শহরে ঢুকে পড়ে। পাকিস্তানি সেনারা কয়েক দফায় জেলা সদরের সোনাপুর, শ্রীপুর, গুপ্তাংক, রামহরিতালুক, বেগমগঞ্জের কুরীপাড়া, গোপালপুর ও আমিশাপাড়ায় নির্বিচারে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।

এসময় গুলি ও পুড়িয়ে প্রায় দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। গান পাউডার দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের অভ্যন্তরে ও ভারত  থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অস্ত্র হাতে মাঠে নামে পাক-হানাদার ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে।

কোম্পানীগঞ্জের বামনী, তালমাহমুদের হাট, ১২ নং স্লুইস গেইট, সদরের উদয় সাধুর হাট (ওদারহাট), করমবক্স বাজার, বেগমগঞ্জের ফেনাকাটা পোল, রাজগঞ্জ ও বগাদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা।

নোয়াখালীকে হানাদার মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি যখন প্রায় চুড়ান্ত, ঠিক তখনই ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে মাইজদী পিটিআই ও বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাইস্কুল ক্যাম্প ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যেতে থাকে পাকিস্তানিরা।

এসময় বেগমগঞ্জ-লাকসাম সড়কের বগাদিয়া ব্রিজ অতিক্রম করতেই সুবেদার লুৎফুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বাধীন মুক্তি বাহিনীর হামলায় অসংখ্য পাক সেনা ও মিলিশিয়া মারা যায়।

নোয়াখালী মুক্ত দিবসের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন সি-জোন কমান্ডার মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, ৭ ডিসেম্বর ভোররাত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালীকে শত্রু মুক্ত করার চুড়ান্ত অপারেশন শুরু করে। ওই দিন সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে সব মুক্তিযোদ্ধা একযোগে চতুর্দিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে বেগমগঞ্জ  চৌরাস্তা সংলগ্ন টেকনিক্যাল হাইস্কুলে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্প মুক্ত করে এবং একই দিন সকাল ৯টার মধ্যে জেলা সদরের মাইজদি বাজার ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, নাহার মঞ্জিল, রৌশনবাণী সিনেমা হল, দত্তেরহাট ও সোনাপুর  কোল্ড স্টোরেজের রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে।

সকাল থেকে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটি মাইজদী পিটিআই থেকে থেমে থেমে গুলিবর্ষণ করলে মুক্তিযোদ্ধারা সঙ্গবদ্ধ হয়ে পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। সন্ধ্যা ৫টায় চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে মাইক দিয়ে আত্মসমর্পণের জন্য বলা হয়। রাজাকাররা আত্মসমর্পণ না করলে ফেনী থেকে মর্টারশেল এনে নিক্ষেপ করা হয়।

প্রথম দুটি মর্টারশেল লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও তৃতীয়টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে। মর্টারশেলের শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো শহর। বিপরীত দিক থেকে আসা গুলি বন্ধ হলে, মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে দেখতে পান  সেখানে ১০/১২জন রাজাকারের লাশ পড়ে রয়েছে এবং কয়েকজন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। এভাবে শত্রুমুক্ত হয় নোয়াখালী। বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠে মুক্তিকামী জনতা। শহরের কোর্ট বিল্ডিংয়ে ওড়ানো হয় জাতীয় পতাকা।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image