নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের একদিন পরেই ক্ষিপ্ত চীন দ্বীপটির উপকূল-জুড়ে নজিরবিহীন সামরিক মহড়া শুরু করেছে। তাতে রকেট এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ তাজা গোলাবারুদ ব্যবহার করা হচ্ছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় মাধ্যমে যেসব ফুটেজ প্রচার করা হচ্ছে তাতে মহড়ায় যুদ্ধবিমান, রণতরী এবং ভূমি থেকে নিক্ষেপ করা হয় এরকম সমরাস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে।
তাইওয়ানের অভিযোগ, এই সামরিক মহড়ার মাধ্যমে চীন দ্বীপটিকে অবরোধ করে ফেলার চেষ্টা করছে। এর ফলে কোনো জাহাজ ও বিমান তাইওয়ানে ঢুকতে এবং বের হতে পারছে না।
তাইওয়ান বলছে, তাদের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের আশেপাশে চীন বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। এর জবাবে তাইওয়ান তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করে রেখেছে। তাইপে বলছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
তাইওয়ান প্রণালীর এমন সব জায়গায় চীনা এই মহড়া চলছে যা বিশ্বের ব্যস্ততম সমুদ্রপথ যেখানে দিয়ে প্রতিদিন বহু জাহাজ চলাচল করে। ব্লুমবার্গের এক পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, সারা বিশ্বে কন্টেইনারবাহী যতো জাহাজ চলাচল করে তার প্রায় অর্ধেক এবং বড় বড় জাহাজগুলোর ৮৮ শতাংশই তাইওয়ান প্রণালী দিয়ে যাওয়া-আসা করে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তাইওয়ানকে শক্তি-প্রয়োগের মাধ্যমে চীনের মূল ভূখণ্ডে ফিরিয়ে আনার সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের অনুশীলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মূল ভূখণ্ড থেকে ১০০ মাইল দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটিকে চীন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একটি প্রদেশ হিসাবে দেখে।
তাইওয়ানে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় একজন রাজনীতিক ন্যান্সি পেলোসির বিতর্কিত সফরের জবাবেই চীন এই সামরিক মহড়া শুরু করেছে। মিসেস পেলোসির পর্যায়ের একজন মার্কিন রাজনীতিক গত ২৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম তাইওয়ানে গেলেন। তিনি তাইওয়ানের স্বাধীনতার একজন বড় সমর্থক।
বেইজিং এই সফরকে দেখে "এক চীন নীতির" ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে এবং সেকারণে তারা সফরের আগে থেকে মিসেস পেলোসির তাইওয়ানে যাওয়ার ব্যাপারে তীব্র আপত্তির পাশাপাশি কড়া হুমকিও দিয়েছিল।
সফরের পরদিন বৃহস্পতিবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে বিবৃতিতে প্রকাশ করেছে তাতে তাদের ক্ষোভ অত্যন্ত স্পষ্ট।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তাইওয়ানে মিসেস পেলোসির সফরকে "বাতিকগ্রস্ত, কাণ্ডজ্ঞানহীন এবং অযৌক্তিক" বলে উল্লেখ করেছে।
তিনি বলেন, সঙ্কট এড়ানোর জন্য সম্ভাব্য যা কিছু পরিহার করা যায় চীন সেটা করেছে, কিন্তু যা তাদের মূল স্বার্থকে আঘাত করে সেটা হতে দেওয়া যায় না। শেষ পর্যন্ত তাইওয়ান তাদের মাতৃভূমির কাছেই ফিরে আসবে।
বিবিসির সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন তাইওয়ানের তীরবর্তী এলাকায় এই মহড়া ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ২০৪৯ সালের মধ্যে দ্বীপটিকে নিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে চীন প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করতেও প্রস্তুত। তাইওয়ান শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে না গেলে তারা শক্তি প্রয়োগ করতেও প্রস্তুত আছে। বিবিসি
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: