• ঢাকা
  • শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ইটভাটায় দখল করে নিচ্ছে তিন ফসলী জমি


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: সোমবার, ০৮ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০১:৫৪ পিএম
ইটভাটায় দখল করে নিচ্ছে
তিন ফসলী জমি

মোঃ সাইদুর রহমান 

মানুষের রুচি পরিবর্তনশীল। সেটা পোষাকে, মননে, গৃহায়নে, অবকাঠামো সহ সর্বক্ষেত্রে রুচির পরিবর্তন অথবা নতুনত্বটা স্বাভাবিকতার বাইরের কিছু নয়।কুঁড়েঘর থেকে ইটের অট্রালিকা উন্নত রুচির বহিঃপ্রকাশ। মানুষের সৃজনশীলতাই নতুন অবকাঠামো স্থাপনে আগ্রহী করে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। অবকাঠামো নির্মাণ উন্নয়নের প্রতিচিত্র। অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ইট অপরিহার্য উপাদান। উন্নয়নের চাকা যত গতিশীল হচ্ছে, ইটভাটার চুলার আগুন তারচেয়েও বেশী উত্তাপ ছড়াচ্ছে । ইটভাটার প্রয়োজন আছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না। জিডিপিতে ১ শতাংশ অবদান রাখে। ১০ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করেন। 

বিশ্বে বাংলাদেশ ইট উৎপাদনে চতুর্থ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইটভাটা একটা অতি লাভজনক ব্যবসা। বর্তমান সরকারের আকাশচুঙ্গী উন্নয়নের বদৌলতে  নির্মাণ সামগ্রীর চাহিদাও বহুগুণে বেড়ে গেছে। ইটের অপ্রত্যাশিত চাহিদা মিটাতে সরকারের ইটখলার নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা।বাংলাদেশে বর্তমানে ৭৮৮১ টি ইটখলার মধ্যে অবৈধ ইটখলা ৬০%  ( পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে)। পরিবেশ অধিদপ্তর প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (সংশোধিত) ২০১৮ অনুযায়ী আবাসিক, সংরক্ষিত ও বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন,  পৌরসভা বা উপজেলা সদর ও তিন ফসলী কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ আইন লঙ্ঘন করেই চলছে অবৈধ ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম। এগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বর্তমানে গ্রামীণ জনপথেই ইটখলা গুলো স্থাপিত হচ্ছে। যদিও আইনে লিপিবদ্ধ আছে, তিন ফসলি কোন জমিতে ইটভাটা দেওয়া যাবে না। সারাদেশে তিন ফসলি জমিতেই অসংখ্য ইটভাটা তৈরী করা হয়েছে। এর মূল কারন  ইটখলার জমি, ইট তৈরীর প্রধান উপাদান মাটি সস্তার সাথে সহজে পাওয়া যায়। আর পরিবেশ অধিদপ্তরের অসৎ লোকদের সুদৃষ্টির বদৌলতে ইটভাটার মালিকরা তিন ফসলী জমিতেও ইটভাটা তৈরী করতে পারেন। অবৈধ, অপরিকল্পিত ইটখলা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর হুমকি। নতুন ইটভাটা নির্মাণে সরকারী নীতিমালা গাঁথুনির লম্বা পাতা জুড়ে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দিবা অন্ধ! আমরা পাতা ভরে লিখবো আর সচেতন সমাজ প্রতিরোধে ঘাম ঝরাবেন। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ইটভাটার নীতিমালাকে অর্থের বাক্সে ভরে বৈধতা দিবেন! 

ইটভাটা নির্মাণে সরকারের শর্ত ৮০% সঠিক ভাবে প্রয়োগ হলে, ব্যঙের ছাতার মতো ইটভাটা গজাত না। আমি করি এটা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত  <  ২কি.মি. মধ্যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাড়ীঘর, থাকলে কোন ইটভাটা তৈরী করা যাবে না। গ্রামীণ জনপথে যে সব ইটভাটা তৈরী হয়েছে বা প্রক্রিয়াধীন এই শর্ত মানলে, হাওর ছাড়া ইটভাটা নির্মাণ করা সম্ভব না। আর আরবানে তো অসম্ভব।

একটার প্রয়োজন মিটাতে গিয়ে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করা সমীচীন হবে না। সরকার "গ্রাম হবে শহর " বাস্তবায়নে গ্রামীণ জনপথের রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন দৃশ্যত। ইটখলার বড় বড় ট্রাকের ভার বহনে সক্ষম নয়,  গ্রামীণ রাস্তা গুলো। যারফলে রাস্তা নির্মাণের পর স্বল্প সময়েই ইটভাটার নির্মাণ সামগ্রী বহনের জন্য রাস্তাঘাট  নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের নির্মল পরিবেশে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া মাধ্যমে  বিষ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইটখলার বিষাক্ত ধোঁয়ায় প্রকৃতিকে ভারসাম্যহীন করে দিচ্ছে।
কৃষি জমিকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। ইটভাটার মাটির জন্য ফসলী জমির উপরের অংশ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। 

আশেপাশের গাছপালা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ফলে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।  ফসলী জমিতে ফসলে হচ্ছে না। কৃষক মাঠে ঘাম ঝরাচ্ছেন অথচ জমিতে কাঙ্খিত ফসল পাচ্ছেন না! ইটখলার জন্য মাটি কেটে ফসলী জমিতে অপরিকল্পিত ভাবে গর্ত তৈরী করা হচ্ছে। না হচ্ছে ফসল, না হচ্ছে শাকসবজি। যারফলে দিনে দিনে ফসলী জমি কৃষকের চক্ষুশূল হচ্ছে, নামমাত্র দামে জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন ইটভাটার মালিকের কাছে। এভাবেই তিন ফসলী জমি ইটভাটার মালিক দখল করে নিচ্ছেন! 
            ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া পরিবেশে কি দিচ্ছে? পরিবেশের ধারন ও বাহন ক্ষমতা নিজেকেই তৈরী করতে হয় । যখন পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়, তখন পরিবেশের ভারসাম্যহীন মেজাজের রোষানলে প্রতিটি প্রানীকূলকে পড়তে হয়। কেনই বা পরিবেশ বদ মেজাজী হবে না? ইটভাটা গুলোতে নিন্মমানের জ্বালানি ব্যবহারের ফলে, বছরে সারা দেশের ইটভাটা থেকে ১৫.৬৭ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয় ( Co2)।চিমনি পদ্ধতিতে  প্রতিটি ইট থেকে ৪২৮ গ্রাম Co2 বায়ুমন্ডলে যুক্ত হয়। যা বায়ু দূষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। বিশ্ব যত শিল্পায়ন হচ্ছে, কার্বন নিঃশ্বরণ তত বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর বায়ুমন্ডলের উষ্ণতাও ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রম উন্নতির কারনে প্রাকৃতিক দূর্যোগ সময়ে অসময়ে হচ্ছে। ইটভাটার বর্জ নদীতে পরে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে অথবা ফসলী জমিতে বর্জ রাখা হচ্ছে। সেই জমি ৫০ বছর পরও ফসল উৎপাদনে সক্ষম হবে না।ইটভাটার কালো ধোঁয়া মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন জটিল ও মরণব্যাধি রোগের সৃষ্টি করে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে আভিষ্ট লক্ষে পৌছার স্বপ্নে বিমোড়।স্মার্ট ইটখলা তৈরী করে পরিবেশকে বাঁচানোর প্রত্যয় সবাইকে নিতে হবে। ইটভাটার জন্য কৃষি জমি থেকে মাটি না নিয়ে নদী অথবা চর থেকে সংগ্রাহ করতে হবে।     চিমনি পদ্ধতির পরিহার করে,পরিবেশ বান্ধব টানেল পদ্ধতিতে ইট উৎপাদনের আগ্রহ বাড়াতে হব। ব্লক ইটকে জনপ্রিয় করে তুলার জন্য সরকারকে বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। অবৈধ ইটভাটা গুলোকে বন্ধ করে দিতে হবে। বৈধ গুলোকে পরিবেশ বান্ধব পরিবেশে ইট তৈরীতে বাধ্য করতে হবে। নতুন ইটখলা অনুমোদন বন্ধ করতে হবে। স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে থেকে, ইটভাটার জন্য রাষ্ট্র কতৃক প্রণীত আইনের সঠিক ও যথার্থ প্রয়োগ করতে হবে। 

পরিবেশ সুস্থ , প্রাণীকুল হবে রোগ মুক্ত। 
          
লেখক ও কলামিস্ট: মোঃ সাইদুর রহমান 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image