• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

গাজী টায়ার্সে অগ্নিকাণ্ড, সন্ধান মিলছে না স্বজনদের 


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ২৮ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৫৭ এএম
সন্ধান মিলছে না স্বজনদের 
স্বজনদের আর্তনাদ

নিউজ ডেস্ক : রূপগঞ্জের গাজী টায়ার্স ফ্যাক্টরির সামনে জলাধারের পাশে মাথায় হাত রেখে বসে ছিলেন ইমরান হোসেন। দু’দিন ধরে সেখানে অপেক্ষা করছেন ভাতিজা মো. বাবুর (১৮) খোঁজে তিনি। তাঁর সন্ধান মিলছে না! গত রোববার অনেকের সঙ্গে কারখানায় ঢোকেন গাইবান্ধার সাঘাটা থানার মো. বাবু। এখন তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ। ভাতিজাকে জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে ইমরান বলেন, ‘কেমনে আর লাশ পামু! পুইড়া তো সব ছাই হইয়া গ্যাছে।’ গতকাল মঙ্গলবার কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

বাবু রিকশা চালাতেন। প্রেম করে বিয়ে করার পর স্ত্রী নিয়ে থাকতেন রূপগঞ্জে। বাবুর স্ত্রীও সেখানকার একটি কারখানায় চাকরি করেন।

গতকালও কারখানার সামনে বিলাপ করেন নিখোঁজদের বহু স্বজন। নারী-পুরুষ ও শিশুদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি তৈরি হয়। স্থানীয়রা ১৭৬ জন নিখোঁজ থাকার দাবি করছেন। তবে ফায়ার সার্ভিস বলছে, সংখ্যাটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। 

গত রোববার রাতে গাজী টায়ার্স ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫০ ঘণ্টা পার হলেও গতকাল পর্যন্ত কারখানার ভেতরে উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। ছয়তলার ভবন থেকে এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ঢোকা যাচ্ছে না। সেখানে বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ভবনের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে এবং ভবনটি অতি  ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার ভোরে রাজধানীর শান্তিনগর থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন গোলাম দস্তগীর গাজী।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘ভয়াবহ দাহ্যের মধ্যে এত সময় ধরে আগুনে পুড়লে ছাই  ছাড়া কিছু পাওয়া দুষ্কর। আর যত লোক নিখোঁজ থাকার কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। টায়ার পুড়লে তা থেকে দাহ্য পদার্থ তৈরি হয়। যতই পানি দেওয়া হোক, তখন আগুন নেভাতে সময় লাগে।’

তিনি বলেন, ‘ভবনের যতটুকু জায়গা আমাদের কর্মীরা দেখেছেন, সেখানে প্রাণের কোনো অস্তিত্ব নেই। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় যাওয়া সম্ভব হয়নি।’ ভবনটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। গণপূর্তের কাছে এ ব্যাপারে মতামত চাওয়া হয়েছে। হতাহতের বিষয় নিশ্চিত হতে ঘটনাস্থলের আলামত ল্যাবে পাঠানোর কথাও জানান তিনি। 

গাজী গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন, ফায়ার সেফটি, নিরাপত্তা, এইচআর ও করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে কারা জড়িত, তা জানা নেই। প্রথম দফায় ৫ আগস্ট আগুন দেওয়া হয়। সিসি ক্যামেরার সরঞ্জাম যেখানে ছিল, সেখানেই হামলা হয়। এ ব্যাপারে থানায় জিডি রয়েছে। দ্বিতীয় দফায় গত রোববার পুড়িয়ে দেওয়া হয় কারখানাটি। হামলার আগে মসজিদে মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়। আমাদের কোনো শ্রমিক নিখোঁজ নেই। যারা নিখোঁজ তারা লুটপাট করতে এসেছিল।’ 

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক বলেন, ‘ফ্যাক্টরিতে অনেকে লুটপাট করতে যায়। লুটপাটের পর তারা সেখানে আগুন দিয়েছে। লুটপাটের সঙ্গে জড়িত অনেকে পালিয়ে যেতে পারে।’

গতকাল কারখানাটি ঘুরে দেখা যায়, ছয়তলা ভবন থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। ৯৬ বিঘা জমির ওপর কারখানা কমপ্লেক্সের পুরোটা এখন ধ্বংসস্তূপ। কারখানার সামনের একটি জলাধারে তেল জাতীয় পদার্থ ভাসছে। কারখানা থেকে এসব জলাধারে এসে পড়েছে। 

গাজী টায়ার্স ফ্যাক্টরির পেছনের এলাকাটির নাম খাদুন। গতকাল সেখানে কিছু লোককে চোরাই তার, স্টিল, প্লাস্টিক, তামাসহ নানা সরঞ্জাম বিক্রি করতে দেখা যায়। কারখানা থেকে তারা এসব লুট করে এনেছে। স্থানীয় বাসিন্দা রওশন আরা বলেন, ‘কয়েকজনের কাছ থেকে তামার তার ৮০০ টাকা কেজিতে কিনেছি। এগুলো খুচরা বিক্রি করব।’ 

খাদুন উত্তরপাড়া জামে মসজিদের ইমাম লুৎফুর রহমান জানান, দুই দফা মসজিদ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। প্রথমে বেলা ১১টায়। তখন বলা হয়, ‘গাজী সাহেব গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিশা টেক্সটাইল মিলের সামনে মানববন্ধন হবে। যাদের জমিজমা গাজী সাহেব দখল করে রেখেছিলেন, তারা মানববন্ধনে হাজির হন।’ এর পর রাত ৩টার দিকে আবার মাইকিং করে বলা হয়, ‘এলাকায় ডাকাত আসতে পারে। সবাই সাবধান থাকেন।’ ওই মসজিদের মোতাওয়াল্লি আমানুল্লাহ খান বলেন, ‘রূপসীতে প্রতি কাঠা জমি ১০-১৫ লাখ টাকায় বেচাকেনা হয়। গাজী সাহেব ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক কম দরে জমি কিনে কারখানার আয়তন বাড়ান। অনেক লোককে রাতারাতি ভিটেমাটিছাড়া করেন।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান, লুটপাট নিয়ে রোববার রূপসীর লোকজনের সঙ্গে বাইরের একটি গ্রুপের মারামারি ও কোপাকুপি হয়। কারা জিনিসপত্র আগে লুট করবে– এ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। এ ছাড়া স্থানীয় দুটি গ্রুপ ফ্যাক্টরিতে ঢোকে। তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। অনেকে বলেন, ভবনের ছয়তলায় লুটপাট চলাকালে নিচতলায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ভেতরে থাকা অনেকে আটকা পড়ে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image