নিউজ ডেস্ক: কানাডায় তীব্র দাবানলের কারণে বাতাসের মান খারাপ হওয়ায় উত্তর আমেরিকার লাখ লাখ মানুষকে ঘরের বাইরে বের হলে এন৯৫ মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসি।
বৃহস্পতিবার থেকে নিউইয়র্কে বিনা পয়সায় মাস্ক বিতরণ করা শুরু হবে। কানাডা বলেছে যে, মানুষ যদি ঘরে থাকতে না পারে এবং বাইরে বের হয় তাহলে তাদের মাস্ক পরা উচিত।
কর্মকর্তা বলেছেন যে, বিপদজনক এই ধোঁয়াটে অবস্থা পুরো সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। বেশিরভাগ ধোঁয়া আসছে কুইবেক থেকে। সেখানে ১৫০টির বেশি আগুন জ্বলছে।
বুধবার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে, প্রদেশটির ১৫ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এটা এরই মধ্যে কুইবেকের সবচেয়ে খারাপ আগুনের মৌসুমে পরিণত হয়েছে।
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হচুল বুধবার বলেন বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের মধ্যে ১০ লাখ মাস্ক বিতরণ করা হবে।
‘এটা একটা সাময়িক অবস্থা। এটা কোভিড নয়,’ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন তিনি। গভর্নর আরও বলেন, নিউইয়র্ক শহরের বাস এবং ট্রেনে উচ্চ মানসম্পন্ন বাতাস পরিশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে যার কারণে এগুলো নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করে।
কানাডার পরিবেশ বিভাগ বলেছে বৃহস্পতিবার টরেন্টোর অবস্থা আরও খারাপ হবে কারণ আরও বেশি ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়বে।
বুধবার এক বিশেষ আবহাওয়া বুলেটিনে সংস্থাটি বাইরে থাকা সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে।
এই ক্ষুদ্র উপাদানগুলো সাধারণত স্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। শ্বাসযন্ত্রগুলো দাবানলের ধোঁয়ায় থাকা গ্যাসের সংস্পর্শে আসা কমায় না,’ এক বিবৃতিতে একথা জানায় কানাডার পরিবেশ বিভাগ।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাতাসের মানকে শ্বাসযন্ত্রের রোগে ভুগছেন এমন বাসিন্দাদের জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে ঘোষণা করেছে। সব মিলিয়ে উত্তর আমেরিকার লাখ লাখ মানুষ দূষিত বাতাসের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
নিউইয়র্কে কমলা রঙের কুয়াশা শহরের আকাশসীমাকে ঢেকে দিয়েছে। এছাড়া স্ট্যাচু অব লিবার্টির মতো উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলোও এতে ঢেকে গিয়েছে।
বুধবার মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, ‘আমরা সব নিউইয়র্ক বাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি তারা যাতে যতটা সম্ভব বাইরের কাজকর্ম কমিয়ে ফেলে।’
নিউইয়র্কে চিড়িয়াখানায় পশুদেরকে ঘরের মধ্যে আনা হয়েছে এবং ঘোড়ায় টানা গাড়ির চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বুধবার ওয়াশিংটন ডিসির স্কুলগুলোতে সব ধরণের বাইরের কর্মকাণ্ড বাতিল করা হয়েছে। সেখানে বাতাসের মান ‘কোড রেড’ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে ডেট্রইট হচ্ছে বিশ্বের পঞ্চম মেট্রোপলিটন শহর যার বাতাসের মান খুবই খারাপ।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা মানুষদেরকে বাইরে শরীরচর্চা করতে নিষেধ করেছে এবং যত কম সম্ভব ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসার পরামর্শ দিয়েছে। কারণ এই ধোঁয়া তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
কানাডার কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশটিতে সবচেয়ে খারাপ দাবানলের মৌসুম রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে।
এর পেছনে তুলনামূলক বেশি গরম ও শুষ্ক বসন্তকালকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই অবস্থা গ্রীষ্মকাল জুড়েও অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আগুনে এরইমধ্যে কানাডায় ৩.৮ মিটার হেক্টর এলাকা পুড়ে গেছে। যা বছরের এই সময়ে গত ১০ বছরে হওয়া গড় দাবানলের তুলনায় ১২ গুন বেশি।
বুধবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে যে, দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সহায়তা করতে ছয়শোর বেশি অগ্নিনির্বাপন কর্মীকে কানাডায় পাঠানো হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন গরম, শুষ্ক আবহাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে যা দাবানলকে আরও তীব্র করবে।
শিল্পযুগের তুলনায় এরইমধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। আর বিশ্বজুড়ে সরকার প্রধানরা কার্বন নিঃসরণের হার না কমালে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: