• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ০২ জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০১:২৯ পিএম
মতিয়ার বাসায়ই আড্ডা দেওয়া হতো
অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী

নিউজ ডেস্ক:  নিজ জন্মদিনে এবং বইয়ের পুন:প্রকাশনা অনুষ্ঠানে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হলেন 'অগ্নিকন্যা' হিসেবে খ্যাত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি।

শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট মিলনায়তনে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে মতিয়া চৌধুরীকে এই শুভেচ্ছা জানানো হয়। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের ৭৮তম জন্মদিন এবং ষাটের দশকে তার লিখিত 'দেয়াল দিয়ে ঘেরা' বইয়ের পুনঃপ্রকাশনা উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

 প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, যে রাজনীতি মানুষের জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে পারে সেটাই সত্যিকার কল্যাণের রাজনীতি। রাজনীতি করতে হবে মানুষের জন্য। মানুষের সমর্থনে রাজনীতি প্রতিষ্ঠা হয়।

মতিয়া চৌধুরীর জীবন ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, তার রাজনীতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য সহমর্মিতা। সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধনে রাজনীতি করেই তিনি জীবন পার করছেন।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের মেনন গ্রুপের সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি তার লেখা বই উপহার দিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন মতিয়া গ্রুপের সভাপতি মতিয়া চৌধুরীকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, 'আমি যখন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তখন মতিয়া চৌধুরীও সভাপতি। মানুষ বলতো মেনন গ্রুপ আর মতিয়া গ্রুপ। যদিও রাজনৈতিক কারণে আমাদের আলাদা গ্রুপ ছিল কিন্তু সম্পর্ক সব সময়ই ভালো ছিল। আমার স্ত্রীও মতিয়ার কর্মী, ওর গ্রুপ করতেন।

অতীত স্মরণ করে মেনন বলেন, আমরা ইচ্ছে করলেই রিক্সায় ঘুরতে বা আড্ডা দিতে পারতাম না। মতিয়ার বাসায়ই আড্ডা দেওয়া হতো। রান্না করে খাওয়া-দাওয়াও হতো ওর বাসায়।

রাজনৈতিক জীবনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'এক আন্দোলনে আমি নেতৃত্ব দিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে গেলে, মতিয়াও মিছিল করতে করতে সেখানে আসে। তখন পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। আমার মাথায় পুলিশের যে লাঠি দিয়ে আঘাত করছিল, সেই লাঠি মতিয়া ফিরিয়েছে। তখনকার পত্রিকায় ছবিটা প্রকাশও হয়েছিল। আমি আজ মতিয়ার জন্মদিনে ও বইয়ের পুন:প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলবো,  শতায়ু হোন মতিয়া চৌধুরী, মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকুন, পথ দেখান।'

ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, একটা সময় ছিল রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা জেলে যেতেন। আর এখন রাজনৈতিক নেতারা জেলে যান অর্থপাচার- আত্মসাৎ, লুটপাট, দখলদারিত্ব ও জঙ্গি এবং অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে।

তিনি বলেন, মতিয়া সাদাসিধা মানুষ। সাদাসিধা জীবনযাপন করছেন, সততার সঙ্গে মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন। জীবনে বিলাসিতা বর্জন করে কিভাবে সন্মানের সঙ্গে চলা যায়- তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মতিয়া। তার রাজনীতি ও ব্যক্তিত্ব আমরা অনুকরণ করতে পারি।

সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামন নূর এমপি বলেন, 'বামপন্থী রাজনীতির যে শক্তি ওই সময় ছিল, যে সততা ছিল মতিয়া চৌধুরীর মধ্যে আমরা এখনও সেটা পাই। আমার মনে হয়েছে, তাত্ত্বিক আলোচনায় অংশ নিয়ে বর্তমান বাম ধারার রাজনৈতিক নেতারা যে সময় নষ্ট করছেন, তাতে জনগণ তাদের থেকে অনেক দূরে।’

তিনি বলেন, 'আমি বামধারার রাজনীতিতে মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গেই ছিলাম। তার সঙ্গে অনেক আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত ছিলাম। আমি গর্ব করে বলতে পারি, এই রাজনীতি আমাকে সচেতন করেছে।  সততার পথে অগ্রসর হওয়ায় আগ্রহী করেছে। এর কারণেই আমি মুক্ত ও অসম্প্রদায়িক চিন্তার মানুষ।'

দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু বলেন, 'মতিয়া আপা ছাত্ররাজনীতির সময় এমন বক্তব্য দিতেন যে, এই বক্তব্য শুধু লোকজন ধরে রাখার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের রাজনীতির প্রতিউত্তর হয়ে যেত। অগ্নিকন্যা অভিধায় খ্যাত মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যে রয়েছে ক্ষুরধার যুক্তি, সরস উক্তি। আমি নিজেও তার কর্মী ছিলাম।'

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সত্তরের দশকে বঙ্গবন্ধু হত্যার আগপর্যন্ত জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থি ধারা অর্থাৎ আওয়ামী লীগ এবং ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল- সেটাই বাঙালি জাতির অনেক বড় বড় বিজয় নিয়ে এসেছে। বর্তমানেও সেই ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি। সেই রাজনীতির মূল্যবোধ ও দর্শনকে এগিয়ে নিতে হবে।

অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘অনেকদিন পর প্রিয়জনদের কাছে পেয়েছি, এক সময়কার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ছিলেন তারা। আজকের এই দিনে আমি বলবো, 'এই মণিহার আমার নাহি সাজে'। আর গণতান্ত্রিক প্রগতিশীলতার রাজনীতি এগিয়ে যাক।'

তিনি বলেন, 'দীর্ঘ রাজনীতির এই চলার পথে ভুল বা শুদ্ধ যাই করি; তার জন্য কাউকে দায়ী করবো না। তবে আমার রাজনীতির জন্য মা-বাবাসহ স্বজনদের অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে। আজকের দিনে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।'

মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্টের সদস্য ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্নার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন, উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা এসএম আব্রাহাম লিংকন, মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্টের সভাপতি শেখর দত্ত, সম্পাদক মুকুল চৌধুরী, সায়মা আলী অদিতি প্রমুখ।

শুরুতে মতিয়া চৌধুরীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারা। এ সময় মণি সিংহ স্মৃতি ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় সম্মাননা ক্রেস্ট। পরে ষাটের দশকে মতিয়া চৌধুরীর লিখিত ও সমাজ বিকাশ প্রকাশনী থেকে পুনঃপ্রকাশিত 'দেয়াল দিয়ে ঘেরা' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তিতুমীর কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সালমা মুক্তা।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image